Sports Special: দুর্ভাগ্যের ওপর নাম শরবিন্দুনাথ

বিশেষ প্রতিবেদন: একেই বলে দুর্ভাগ্য। আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে দূর্ভাগ্যের শিকারে পরিণত হওয়া ভারতীয় ক্রিকেটারদের লম্বা তালিকায় খুব সম্ভবত তাঁর নাম শীর্ষে অবস্থান করবে তাঁর। না হলে…

Sarobindu Nath Banerjee

বিশেষ প্রতিবেদন: একেই বলে দুর্ভাগ্য। আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে দূর্ভাগ্যের শিকারে পরিণত হওয়া ভারতীয় ক্রিকেটারদের লম্বা তালিকায় খুব সম্ভবত তাঁর নাম শীর্ষে অবস্থান করবে তাঁর। না হলে শেষে ব্যাট করতে নেমে যিনি সাড়ে তিন হাজারের বেশি রান সহ চারশোর কাছাকাছি উইকেট নিয়েছেন তাঁর ভারতীয় দলের হয়ে টেস্ট খেলার সুযোগ হয়েছিল মাত্র একটি। তিনি শরবিন্দুনাথ বন্দ্যোপাধ্যায় (Sarobindu Nath Banerjee @ Shute)।
বুঝতে পারছেন না তো? ভাবছেন এ আবার কোন বাঙালি ক্রিকেটার। আচ্ছা , শুট বন্দ্যোপাধ্যায়। তাও পারলেন না! 

শরবিন্দুনাথ শুট বন্দ্যোপাধ্যায়? এবারও চেনা গেল না তো? স্বাভাবিক। তিনি তো বেশি পরিচিত শুটে ব্যানার্জী নামে। জন্ম ৩ অক্টোবর আজকের দিনেই। ওভালে সারে দলের বিপক্ষে দলের সংগ্রহ ২০৫/৯ । এমন অবস্থায় চান্দু শরতের সাথে বিশাল জুটিতে উঠল ২৪৯ রান। শরৎ অপরাজিত ১২৪ ও তিনি ১২১ রান কার? শুটে ব্যানার্জীর। ত্রিশের দশকের ওই রেকর্ড ২০০৯ সাল পর্যন্ত প্রথম-শ্রেণীর ক্রিকেটে শেষ উইকেট জুটিতে ২৪৯ রান দ্বিতীয় সর্বাধিক রান ছিল।

Sarobindu Nath  Banerjee

অন ও অফ – উভয় দিকেই স্যুইং করাতে পারতেন শুটে। ১৯৩৬ সালে ইংল্যান্ডে প্রথম সফরের পর ইনসুইঙ্গারের উন্নতি ঘটান। মাঝেমধ্যেই আউট সুইঙ্গার করতেন ও লেগ ব্রেকের আদলে স্লোয়ারও দিতেন। খেলোয়াড়ী জীবনের বিভিন্ন পর্যায়ে বিভিন্ন অবস্থানে ব্যাটিং করেছেন। সচরাচর, নিচেরসারিতেই ব্যাটিংয়ে নামলেও মাঝেমধ্যে ইনিংসের ওপেন করতেও নামতেন তিনি। কারণ প্রথম-শ্রেণীর ভারতীয় ক্রিকেটে বাংলা, হিন্দু, মধ্যপ্রদেশ ও নয়ানগর দলের প্রতিনিধিত্ব করা শুটে ব্যানার্জী দলে মূলত অল-রাউন্ডার হিসেবে খেলতেন। নিচেরসারিতে ডানহাতে ব্যাটিংয়ের পাশাপাশি ডানহাতে ফাস্ট-মিডিয়াম বোলিংয়ে পারদর্শী ছিলেন যে। ১৩৮টি প্রথম শ্রেণীর ম্যাচ খেলে রান করেছেন ৩৭১৫, সর্বোচ্চ রান ১৩৮, উইকেট নিয়েছিলেন ৩৮৫টি , সেরা বোলিং ২৫ রানে ৮ উইকেট, বোলিং গড় ২৬.৬৮ , ক্যাচ নিয়েছিলেন ৭৪টি । এবার ভাবুন।

১৯৩১-৩২ থেকে ১৯৫৯-৬০ পর্যন্ত শুট ব্যানার্জী’র প্রথম-শ্রেণীর ক্রিকেট খেলেছেন । তার মধ্যে ১৫ বছর বিহার দলকে রঞ্জী ট্রফিতে নেতৃত্ব দিয়েছেন তিনি। উনিশ বছর বয়সে শুট ব্যানার্জী’র প্রথম-শ্রেণীর ক্রিকেটে অভিষেক ঘটে। ১৯৩৩-৩৪ মেরিলেবোন ক্রিকেট ক্লাব (এমসিসি) ভারতে আসে। সফরকারী দলের বিপক্ষে ভারতীয় ও অ্যাংলো-ভারতীয়দের নিয়ে গড়া দলের সদস্য ছিলেন তিনি।

১৯৩৫-৩৬ জ্যাক রাইডারের নেতৃত্বাধীন অস্ট্রেলিয়া দল সিলন ও ভারত সফর করে। বাংলা ও আসামের খেলোয়াড়দের নিয়ে গড়া যৌথ দলের সদস্যরূপে খেলে তাঁর বোলিং পরিসংখ্যান ৫/৫৩। এরপর তৃতীয় অনানুষ্ঠানিক খেলায় একই দলের বিপক্ষে খেলার জন্যে মনোনীত হন। তবে, এরজন্যে তাকে বাংলা দলের পক্ষে প্রথমবারের মতো রঞ্জী ট্রফি খেলা থেকে বঞ্চিত হতে হয়েছিল। ১৯৩৬ সালে ভারত দলের সদস্যরূপে ইংল্যান্ড যান। কিন্তু, মোহাম্মদ নিসার, অমর সিং ও জাহাঙ্গীর খানের ন্যায় ফাস্ট বোলারদের অংশগ্রহণের কারণে তাকে কোন টেস্ট খেলার সুযোগ পাননি। ভারত ক্রিকেট ক্লাবের সদস্যরূপে লর্ড টেনিসন একাদশের বিপক্ষে খেলার জন্যে আমন্ত্রিত হন। ব্রাবোর্ন স্টেডিয়ামে অনুষ্ঠিত প্রথম খেলায় তিনি ৬ উইকেট পান।

Sarobindu Nath  Banerjee

১৯৪৫-৪৬ অস্ট্রেলিয়ান সার্ভিসেস একাদশের বিপক্ষে একটি অনানুষ্ঠানিক টেস্টে অংশ নেন ও আট উইকেট পান। ফলশ্রুতিতে, ১৯৪৬ সালে ইংল্যান্ডে যাওয়া ভারতীয় দলের পক্ষে খেলার জন্যে মনোনীত হন। ১৯৩৬ সালে ভারত দলে বেশ কয়েকজন ফাস্ট বোলারের উপস্থিতি থাকলেও ১৯৪৬ সালে এর ব্যতিক্রম লক্ষ্য করা যায়। দলে কেবলমাত্র শুট ব্যানার্জী ও রঙ্গ সোহনী’র অংশগ্রহণ ছিল। তবে, সোহনী দুই টেস্টে অংশ নিলেও শুট ব্যানার্জীকে এবারও সুযোগ পাননি।

অথচ সফরের প্রস্তুতিমূলক খেলায় অংশ নিয়ে ৩১৫ রান ও ৩১ উইকেট পেয়েছিলেন। ল্যাঙ্কাশায়ার ও মিডলসেক্সের বিপক্ষে চার উইকেট পেয়েছিলেন এবং উভয় ক্ষেত্রেই ভারত দলের বিজয়ে ভূমিকা রেখেছিলেন। ১৯৪৮-৪৯ ভারতের মাটিতে পূর্ব অঞ্চলের সদস্যরূপে সফররত ওয়েস্ট ইন্ডিজ একাদশের মুখোমুখি হন। এলাহাবাদের ম্যাটিং উইকেটে তিনি ৭ উইকেট পেয়েছিলেন। এরপর, জয়সূচক রান তুলে দলকে দশ উইকেটে জয় এনে দেন। এ সফরে ওয়েস্ট ইন্ডিজের এটিই একমাত্র পরাজয়ের ঘটনা ছিল। দূর্দান্ত ক্রীড়াশৈলী প্রদর্শনের স্বীকৃতিস্বরূপ ৩৭ বছর বয়সে সিরিজের শেষ টেস্টে তাকে অন্তর্ভূক্ত করা হয়।

৪ ফেব্রুয়ারি, ১৯৪৯ তারিখে মুম্বইয়ে সফরকারী ওয়েস্ট ইন্ডিজ দলের বিপক্ষে টেস্ট ক্রিকেটে অভিষেক ঘটে তার। এটিই তার একমাত্র টেস্টে অংশগ্রহণ ছিল। এরপর আর তাকে কোন টেস্টে অংশগ্রহণ করতে দেখা যায়নি। একমাত্র টেস্টে তাঁর বোলিং পরিসংখ্যান ১/৭৩ ও ৪/৫৪। এরপরের তিন বছর ভারতীয় দলে কোন টেস্ট খেলার সুযোগ পাননি। এরফলে, শুট ব্যানার্জী’র আন্তর্জাতিক খেলোয়াড়ী জীবনেরও সমাপ্তি ঘটে।

এমন উজ্জ্বল কেরিয়ার নিয়েও ভারতীয় দলের হয়ে খেলা হয়নি। ষাটের কাছাকাছি বয়সে ভিলাইয়ে চলে যান ও ১৯৫৯-৬০ মধ্যপ্রদেশের থাকতেন। ১৪ অক্টোবর, ১৯৮০ তারিখে ৬৯ বছর বয়সে কলকাতা এলাকায় শুট ব্যানার্জী’র দেহাবসান ঘটে।