সম্ভবত মঙ্গলেই সুপ্রিয় রায়ে ভারতীয় ফুটবলের ভবিষ্যৎ নির্ধারণ

অল ইন্ডিয়া ফুটবল ফেডারেশন সংবিধান (AIFF Constitution) মামলায় সুপ্রিম কোর্টের রায় প্রকাশের অপেক্ষায় রয়েছে ভারতীয় ফুটবল। সোমবার (২ সেপ্টেম্বর, ২০২৫) বিচারপতি পি.এস. নরসিমহা এবং বিচারপতি…

Supreme Court Nears Verdict on AIFF Constitution Case, Fresh Elections Demanded as FIFA Ban Looms

অল ইন্ডিয়া ফুটবল ফেডারেশন সংবিধান (AIFF Constitution) মামলায় সুপ্রিম কোর্টের রায় প্রকাশের অপেক্ষায় রয়েছে ভারতীয় ফুটবল। সোমবার (২ সেপ্টেম্বর, ২০২৫) বিচারপতি পি.এস. নরসিমহা এবং বিচারপতি জয়মাল্য বাগচির নেতৃত্বাধীন সুপ্রিম কোর্টের বেঞ্চ এই মামলার চূড়ান্ত শুনানি করে। এই শুনানিতে নতুন জাতীয় ক্রীড়া শাসন আইন (ন্যাশনাল স্পোর্টস গভর্নেন্স অ্যাক্ট) এর সঙ্গে এআইএফএফ-এর নতুন সংবিধানের সামঞ্জস্য এবং নতুন নির্বাচনের দাবি নিয়ে আলোচনা হয়। বিচারপতিরা জানিয়েছেন যে রায় প্রস্তুত রয়েছে এবং শীঘ্রই তা ঘোষণা করা হবে, সম্ভবত মঙ্গলবার (৩ সেপ্টেম্বর, ২০২৫)। এই রায় ভারতীয় ফুটবলের ভবিষ্যৎ নির্ধারণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে।

নতুন নির্বাচনের দাবি
শুনানির সময় বিভিন্ন পক্ষের প্রতিনিধিরা বর্তমান এআইএফএফ নির্বাহী কমিটির অন্তর্বর্তীকালীন প্রকৃতির উপর জোর দেন। দিল্লি এফসি-র প্রতিনিধি প্রশান্ত ভূষণ এবং প্রাক্তন ভারতীয় ফুটবলার ভাইচুং ভূটিয়ার পক্ষের আইনজীবী নতুন নির্বাচনের দাবি জানান। ভূটিয়ার পক্ষে আইনজীবী যুক্তি দেন যে ফুটবল স্পোর্টস ডেভেলপমেন্ট লিমিটেড (এফএসডিএল)-এর সঙ্গে নতুন মাস্টার রাইটস এগ্রিমেন্ট (এমআরএ) চূড়ান্ত করা উচিত নতুন নির্বাচিত নির্বাহী কমিটির দ্বারা, যা নতুন সংবিধানের অধীনে গঠিত হবে। তিনি বলেন, “এই নতুন এফএসডিএল চুক্তি ভারতীয় ফুটবলের পরবর্তী ১০ থেকে ১৫ বছরের ভবিষ্যৎ নির্ধারণ করবে। তাই একটি অন্তর্বর্তীকালীন কমিটির পরিবর্তে নতুন কমিটির এই সিদ্ধান্ত নেওয়া উচিত।”

   

ফিফা নিষেধাজ্ঞার আশঙ্কা
নতুন নির্বাচনের দাবি উঠলেও এটি ফিফা নিষেধাজ্ঞার ঝুঁকি তৈরি করতে পারে। ফিফা তৃতীয় পক্ষের হস্তক্ষেপ কঠোরভাবে নিষিদ্ধ করে। যদি সুপ্রিম কোর্ট নির্বাচনের নির্দেশ দেয়, তবে ফিফা এটিকে তৃতীয় পক্ষের হস্তক্ষেপ হিসেবে বিবেচনা করতে পারে, যার ফলে ভারত আবার নিষিদ্ধ হতে পারে। ২০২২ সালে সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশে এআইএফএফ-এর প্রশাসনের জন্য কমিটি অফ অ্যাডমিনিস্ট্রেটর্স (সিওএ) নিয়োগের পর ফিফা ভারতকে নিষিদ্ধ করেছিল। তবে, কল্যাণ চৌবে নির্বাচিত হওয়ার পর নিষেধাজ্ঞা তুলে নেওয়া হয়। ফিফা এবং এশিয়ান ফুটবল কনফেডারেশন (এএফসি) ইতিমধ্যে ৩০ অক্টোবর, ২০২৫-এর মধ্যে সংবিধান অনুমোদন না হলে নিষেধাজ্ঞার হুমকি দিয়েছে।

বিচারপতি এল. নাগেশ্বর রাওয়ের তদারকি
অ্যামিকাস কিউরি গোপাল শঙ্করনারায়ণনের পরামর্শে সুপ্রিম কোর্ট প্রস্তাব দেয় যে এআইএফএফ-এর বাণিজ্যিক অধিকারের টেন্ডার প্রক্রিয়া প্রাক্তন বিচারপতি এল. নাগেশ্বর রাও তদারকি করবেন। এআইএফএফ এবং এফএসডিএল-এর যৌথ প্রস্তাবে বলা হয়েছিল যে টেন্ডার প্রক্রিয়া বিগ ফোর (ডেলয়েট, কেপিএমজি, ইওয়াই, পিডব্লিউসি) ফার্মগুলির একটির তত্ত্বাবধানে হবে। তবে, কোর্ট এই প্রস্তাব বাতিল করে বিচারপতি রাওয়ের উপর এই দায়িত্ব অর্পণ করেছে, যিনি ২০২৩ সালে এআইএফএফ-এর খসড়া সংবিধান তৈরি করেছিলেন।

Advertisements

রায়ের প্রত্যাশা
বিচারপতি নরসিমহা জানিয়েছেন, “রায় প্রস্তুত রয়েছে, তবে নতুন জাতীয় ক্রীড়া শাসন আইনের কারণে আমরা এটি ঘোষণা করিনি। আইন কার্যকর হওয়ার পর সংবিধান তার সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ হবে। তবে, এই মুহূর্তে আমরা রায় ঘোষণাকে অগ্রাধিকার দিচ্ছি।” তিনি আরও বলেন, “আমরা চাই না সংবিধানের বিষয়টি আর বিলম্বিত হোক।” কোর্ট জানিয়েছে যে রায়টি শীঘ্রই, সম্ভবত মঙ্গলবার, ঘোষণা করা হবে।

বাংলার প্রেক্ষাপটে তাৎপর্য
পশ্চিমবঙ্গে ফুটবল একটি জনপ্রিয় খেলা, এবং এআইএফএফ-এর সংবিধান মামলার ফলাফল কলকাতার ক্লাবগুলি, যেমন মোহনবাগান সুপার জায়ান্ট এবং ইস্টবেঙ্গল, এবং স্থানীয় ফুটবল সমর্থকদের জন্য গুরুত্বপূর্ণ। নতুন সংবিধানে প্রাক্তন খেলোয়াড়দের প্রতিনিধিত্ব, স্বচ্ছ শাসন এবং বয়স ও মেয়াদের সীমাবদ্ধতার মতো সংস্কার প্রস্তাবিত হয়েছে, যা ভারতীয় ফুটবলের উন্নয়নে সহায়ক হবে। তবে, ফিফা নিষেধাজ্ঞার আশঙ্কা কলকাতার ফুটবল ইকোসিস্টেমের উপর প্রভাব ফেলতে পারে, বিশেষ করে আইএসএল এবং অন্যান্য টুর্নামেন্টের ক্ষেত্রে।

এআইএফএফ সংবিধান মামলার রায় ভারতীয় ফুটবলের ভবিষ্যৎ নির্ধারণে একটি টার্নিং পয়েন্ট হতে পারে। নতুন নির্বাচনের দাবি এবং ফিফার নিষেধাজ্ঞার আশঙ্কা এই মামলাকে আরও জটিল করেছে। বিচারপতি এল. নাগেশ্বর রাওয়ের তত্ত্বাবধানে টেন্ডার প্রক্রিয়া এবং সংবিধানের চূড়ান্তকরণ ভারতীয় ফুটবলের স্বচ্ছতা এবং পেশাদারিত্ব বাড়াবে। মঙ্গলবারের রায় ফুটবল সমর্থক, ক্লাব এবং খেলোয়াড়দের জন্য একটি নতুন অধ্যায়ের সূচনা করতে পারে, তবে ফিফার নিয়ম মেনে চলা এবং নিষেধাজ্ঞা এড়ানোর চ্যালেঞ্জ থেকে যাবে।