কেন উইলিয়ামসন (Kane Williamson) নিউজিল্যান্ডের (New Zealand) প্রাক্তন অধিনায়ক এবং আধুনিক ক্রিকেটের অন্যতম বড় নাম। বর্তমানে দুরন্ত ফর্মে আছেন। তার বিধ্বংসী শতরানের মাধ্যমে চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির (Champions Trophy 2025) আগে একধরণের বার্তা পাঠিয়েছেন নিউজিল্যান্ডের প্রতিদ্বন্দ্বী দলগুলোকে। সেই তালিকায় রয়েছেন বিরাট-রোহিতর (Virat Kohli & Rohit Shrama)। সোমবার গদ্দাফি স্টেডিয়ামে, দক্ষিণ আফ্রিকার (South Africa) বিরুদ্ধে তিনি এক দুর্দান্ত ইনিংস উপহার দিয়েছেন, যা তাকে পৌঁছে দিয়েছে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটের এক নতুন মাইলফলকে। মাত্র ৭২ বলে সেঞ্চুরি করে কেন উইলিয়ামসন আন্তর্জাতিক সেঞ্চুরির সংখ্যায় এবি ডি’ভিলিয়ার্সের সঙ্গে একীভূত হয়েছেন।
এই ম্যাচের গুরুত্ব ছিল অত্যন্ত। ত্রিদেশীয় সিরিজের ফাইনালে পৌঁছানোর জন্য নিউজিল্যান্ডকে প্রয়োজন ছিল এক বড় জয়। সেই দায়িত্বটা অসাধারণভাবে পালন করেছেন উইলিয়ামসন। পাকিস্তানের মাটিতে, দক্ষিণ আফ্রিকার বিরুদ্ধে কঠিন লক্ষ্য তাড়া করতে নেমে, ৩১৩ রানের লক্ষ্যে নিউজিল্যান্ড পৌঁছে যায় মাত্র চার উইকেট হারিয়ে। উইলিয়ামসন ইনিংসটির মাঝেই দ্যূতির মঞ্চে দাঁড়িয়ে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে সেঞ্চুরির সংখ্যা ৪৭-এ নিয়ে গেলেন, যা তাকে নিয়ে গেছে কিংবদন্তি ডি’ভিলিয়ার্সের মতো নামের সমান্তরালে।
কেন উইলিয়ামসনের ইনিংসের গুরুত্বপূর্ণ দিক ছিল তার মনস্তাত্ত্বিক দৃঢ়তা এবং সময়মতো বড় শট খেলার সামর্থ্য। তার ব্যাটিংয়ের ধারায় ছিল পূর্ণ সংযম এবং একই সাথে ভয়ংকর আক্রমণাত্মক মনোভাব। যখন ওপেনার উইল ইয়ং আউট হন, তখন উইলিয়ামসন ক্রিজে আসেন এবং শুরু করেন এক ঝোড়ো পার্টনারশিপ। ডেভন কনওয়ের সঙ্গে ১৮৭ রানের এক জুটি গড়ে, কিউয়িরা জয়যাত্রার দিকে এগিয়ে যায়। উইলিয়ামসন শট খেলেন ভয়ডরহীনভাবে, বলকে নির্দিষ্ট জায়গায় পাঠানোর সামর্থ্য রাখতেন যা প্রতিপক্ষের বোলারদের নাভিশ্বাস তুলে দেয়। তিনি মোট ১৩টি চার এবং দুটি ছক্কা হাঁকান, তার অপরাজিত ১৩৩ রানের ইনিংসটি ১১৩ বলের মধ্যে সম্পন্ন হয়।
A classy knock from Kane Williamson takes him to his 14th ODI century in Lahore 🤩#SAvNZ 📝: https://t.co/6q3VpZ0IL3 pic.twitter.com/ojdX82x5Vy
— ICC (@ICC) February 10, 2025
এই ইনিংসটি ছিল শুধু উইলিয়ামসনের ফর্মেরই প্রতীক নয়, বরং নিউজিল্যান্ডের দলের শক্তিমত্তারও নিদর্শন। তাদের জন্য এটি ছিল অঙ্গীকার যে তারা চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির পরবর্তী পর্বে যাবে, যেখানে তারা বিশ্বের সেরা দলগুলোর বিরুদ্ধে লড়াই করবে। উইলিয়ামসনের ব্যাটে এমন এক সময়োপযোগী ইনিংস দলের আত্মবিশ্বাস আরও বাড়িয়ে দিয়েছে।
অন্যদিকে, দক্ষিণ আফ্রিকা ৩০৪ রান তোলার পর, তাদের লক্ষ্য ছিল প্রতিপক্ষকে চাপের মধ্যে ফেলা। তবে উইলিয়ামসনের দৃঢ়তার কারণে এই লক্ষ্য তাদের কাছে কঠিন হয়ে দাঁড়ায়। প্রথমে ব্যাট করে দক্ষিণ আফ্রিকা ৫০ ওভারে ছয় উইকেট হারিয়ে ৩০৪ রান করে। প্রোটিয়া ওপেনার ম্যাথু ব্রিৎজক তার অভিষেক ম্যাচে দুর্দান্ত শতরান করেন। তবে, উইলিয়ামসনের ব্যাটিংয়ের সামনে প্রোটিয়া বোলিং লাইনআপ কার্যত নিঃশেষ হয়ে যায়।
উইলিয়ামসনের ১৪তম সেঞ্চুরি ছিল সত্যিই বিশাল নজির। তার ব্যাটিংয়ের মাধ্যমে তিনি কেবল এক ম্যাচ জয়ী ইনিংস খেলেননি, বরং নিজের দেশের ক্রিকেট ইতিহাসে এক নতুন যুগের সূচনা করেন। নিউজিল্যান্ডের ক্রিকেটে এই মুহূর্তটি এক ঐতিহাসিক দিন হিসেবে চিহ্নিত হবে। এমন একটা সময়ে যখন ক্রিকেট দুনিয়া ভরা প্রতিদ্বন্দ্বিতা, তখন উইলিয়ামসনের মতো একজন তারকা তার দলের জন্য হয়ে উঠছেন উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত।
এটি কেবল উইলিয়ামসনের জন্য নয়, তার দল নিউজিল্যান্ডের জন্যও একটি বড় উত্থান। তার ১৩৩ রানের ম্যাচ জয়ের ইনিংসের ফলে নিউজিল্যান্ড ত্রিদেশীয় সিরিজের ফাইনালে উঠে গেছে, যেখানে তারা তাদের দক্ষতা ও অভিজ্ঞতার প্রতিফলন ঘটাতে পারবে। উইলিয়ামসনের এই সেঞ্চুরি শুধু একজন ব্যাটসম্যানের কৃতিত্ব নয়, বরং পুরো দলের এক আশাবাদী ও শক্তিশালী অবস্থানের প্রতিনিধিত্ব করে, যা চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির জন্য দলের প্রস্তুতিতে সহায়ক হবে।