পাঞ্জাব কিংস (পিবিকেএস) তাদের নতুন অধিনায়ক শ্রেয়াস আইয়ারের অসাধারণ ব্যাটিং এবং পেসার আর্শদীপ সিংয়ের দুর্দান্ত বোলিংয়ের জোরে আইপিএল ২০২৫-এর (IPL 2025) একটি রোমাঞ্চকর ম্যাচে গুজরাট টাইটান্সকে (জিটি) ১১ রানে পরাজিত করেছে। মঙ্গলবার অমদাবাদের নরেন্দ্র মোদী স্টেডিয়ামে অনুষ্ঠিত এই ম্যাচে পাঞ্জাব কিংস তাদের নতুন মরশুমের প্রথম জয় দিয়ে অভিযান শুরু করল। এই উচ্চ-স্কোরিং ম্যাচে দুই দল মিলে ৪৫০-এর বেশি রান তুললেও, শেষ পর্যন্ত পাঞ্জাবের বোলাররা স্নায়ু ধরে রেখে জয় ছিনিয়ে আনল।
প্রথমে ব্যাট করে পাঞ্জাব কিংস ২৪৩ রানের বিশাল স্কোর গড়ে। এই স্কোর তাড়া করতে নেমে গুজরাট টাইটান্স শেষ পর্যন্ত ২০ ওভারে ৫ উইকেট হারিয়ে ২৩২ রানে থামল। শ্রেয়াস আইয়ারের নেতৃত্বে পাঞ্জাবের ব্যাটিং এবং আর্শদীপ সিংয়ের শেষ ওভারের দাপট এই জয়ের মূল চাবিকাঠি হয়ে উঠল।
পাঞ্জাব কিংসের অধিনায়ক শ্রেয়াস আইয়ার এই ম্যাচে নিজের ব্যাট দিয়ে দলকে নেতৃত্ব দিয়েছেন। তিনি ৪২ বলে অপরাজিত ৯৭ রানের একটি ঝড়ো ইনিংস খেলেন, যেখানে ছিল ৯টি ছক্কা এবং ৫টি চার। তাঁর এই ইনিংস পাঞ্জাবকে বিশাল স্কোরের দিকে নিয়ে যায়। শ্রেয়াস শতরান থেকে মাত্র ৩ রান দূরে থাকলেও, শেষ ওভারে শশাঙ্ক সিংয়ের বিস্ফোরক ব্যাটিংয়ের কারণে তিনি স্ট্রাইক পাননি। তবে, দলের জয়ের জন্য তিনি নিজের ব্যক্তিগত মাইলফলক নিয়ে ভাবেননি।
শশাঙ্ক সিংও ১৬ বলে ৪৪ রানের একটি অপরাজিত ইনিংস খেলেন, যেখানে ছিল ৬টি চার এবং ২টি ছক্কা। শেষ ওভারে মহম্মদ সিরাজের বিরুদ্ধে শশাঙ্ক ২৩ রান তুলে পাঞ্জাবের স্কোরকে ২৪৩-এ পৌঁছে দেন। এছাড়াও, ওপেনার প্রিয়াংশ আর্য ২৩ বলে ৪৭ রান করে দলকে শক্ত ভিত্তি দিয়েছিলেন। গুজরাটের বোলারদের মধ্যে আর সাই কিশোর ৩/৩০ নিয়ে সেরা পারফরমার ছিলেন, তবে বাকি বোলাররা রান আটকাতে ব্যর্থ হন।
গুজরাটের শক্তিশালী শুরু, কিন্তু শেষ হাসি পাঞ্জাবের
২৪৪ রানের লক্ষ্য তাড়া করতে নেমে গুজরাট টাইটান্স দারুণ শুরু করে। ওপেনার সাই সুদর্শন ৪১ বলে ৭৪ রানের একটি দুর্দান্ত ইনিংস খেলেন, যেখানে ছিল ৫টি চার এবং ৬টি ছক্কা। অধিনায়ক শুভমন গিলও ১৪ বলে ৩৩ রান করে দ্রুত শুরু দেন। পাওয়ারপ্লেতে এই জুটি ৬১ রান যোগ করে গুজরাটকে শক্ত অবস্থানে নিয়ে যায়। তবে, গ্লেন ম্যাক্সওয়েল গিলকে আউট করে পাঞ্জাবকে প্রথম সাফল্য এনে দেন।
এরপর সুদর্শন এবং জস বাটলার দ্বিতীয় উইকেটে ৮৪ রানের একটি গুরুত্বপূর্ণ জুটি গড়েন। বাটলার ৩৩ বলে ৫৪ রান করেন। ১৩তম ওভারে আর্শদীপ সিং সুদর্শনকে আউট করে গুজরাটের রানের গতি ভাঙেন। এরপর শারফেন রাদারফোর্ড ২৮ বলে ৪৬ রানের একটি দ্রুত ইনিংস খেলে গুজরাটকে জয়ের দিকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করেন। তবে, পাঞ্জাবের বোলাররা শেষ দিকে দারুণভাবে ঘুরে দাঁড়ায়।
ম্যাচের শেষ ২৪ বলে গুজরাটের প্রয়োজন ছিল ৬২ রান। এই সময়ে পাঞ্জাবের পেসার বিজয়কুমার ভাইশাক ১৭তম ওভারে মাত্র ৫ রান দিয়ে রাদারফোর্ড এবং বাটলারের মতো ফর্মে থাকা ব্যাটসম্যানদের থামিয়ে দেন। ১৮তম ওভারে মার্কো জানসেন ১২ রান দিয়ে বাটলারের গুরুত্বপূর্ণ উইকেট তুলে নেন। ১৯তম ওভারে ভাইশাক ১৮ রান দিলেও, শেষ ওভারে আর্শদীপ সিংয়ের হাতে বল তুলে দেওয়া হয়।
শেষ ওভারে গুজরাটের প্রয়োজন ছিল ২৭ রান। আর্শদীপ প্রথম বলেই রাহুল তেওয়াতিয়াকে রান আউট করে গুজরাটের আশা ভঙ্গ করেন। এরপর রাদারফোর্ডকে বোল্ড করে ম্যাচটি পাঞ্জাবের দিকে ঝুঁকিয়ে দেন। ওভারে মাত্র ১৫ রান দিয়ে তিনি দলের জয় নিশ্চিত করেন। আর্শদীপ এই ম্যাচে ৪ ওভারে ৩৬ রান দিয়ে ২ উইকেট নেন, যা এই উচ্চ-স্কোরিং ম্যাচে অসাধারণ পারফরম্যান্স।
বাংলার ক্রিকেটপ্রেমীরা এই ম্যাচে শ্রেয়াস আইয়ারের নেতৃত্ব এবং আর্শদীপের শেষ ওভারের দক্ষতায় মুগ্ধ। শ্রেয়াস, যিনি গত বছর কলকাতা নাইট রাইডার্সকে শিরোপা জিতিয়েছিলেন, তাঁর নতুন দল পাঞ্জাব কিংসের হয়ে দুর্দান্ত শুরু করেছেন। বাঙালি ভক্তরা আশা করছেন, শ্রেয়াসের নেতৃত্বে পাঞ্জাব এবার তাদের প্রথম আইপিএল শিরোপার খরা কাটাতে পারবে।
অন্যদিকে, আর্শদীপ সিংয়ের শেষ ওভারের শান্ত মাথার বোলিং প্রশংসা কুড়িয়েছে। বাংলায় আইপিএলের জনপ্রিয়তা বিবেচনা করে, এই জয় পাঞ্জাব কিংসের প্রতি সমর্থকদের আগ্রহ আরও বাড়িয়ে তুলবে।
সাই সুদর্শনের ৭৪ রানের ইনিংস গুজরাটের জন্য সবচেয়ে বড় ইতিবাচক দিক ছিল। তবে, শুভমন গিলের দ্রুত বিদায় এবং শেষ দিকে বাটলার ও রাদারফোর্ডের আউট হওয়া দলকে হারের মুখে ঠেলে দেয়। গুজরাটের বোলিং এবং ফিল্ডিংও এই ম্যাচে প্রত্যাশা পূরণ করতে পারেনি।
এই ম্যাচে শ্রেয়াস আইয়ারের ব্যাটিং দক্ষতা এবং আর্শদীপ সিংয়ের বোলিং নৈপুণ্য পাঞ্জাব কিংসকে একটি রোমাঞ্চকর জয় এনে দিয়েছে। ২৪৩ রানের বিশাল স্কোর তাড়া করতে গিয়ে গুজরাট টাইটান্স শেষ পর্যন্ত হেরে গেলেও, তাদের ব্যাটসম্যানদের লড়াই প্রশংসনীয়। পাঞ্জাব কিংস এই জয়ের মাধ্যমে আইপিএল ২০২৫-এ দারুণ শুরু করল, এবং ভক্তরা আশা করছেন এই গতি তারা ধরে রাখবে।