অস্ট্রেলিয়া ও ওয়েস্ট ইন্ডিজের মধ্যকার দুই ম্যাচ টেস্ট সিরিজের দ্বিতীয় ও শেষ ম্যাচটি ব্রিসবেনের গাব্বায় খেলা হয়েছিল। অ্যাডিলেড টেস্টে দশ উইকেটে পরাজিত হওয়ার পর গাব্বা টেস্টে দুর্দান্ত প্রত্যাবর্তন করে ওয়েস্ট ইন্ডিজ ক্রিকেট দল। ব্রিসবেনে বল হাতে দুর্দান্ত পারফরম্যান্স করে অস্ট্রেলিয়ার ক্লিন সুইপের স্বপ্ন ভেঙেছেন ওয়েস্ট ইন্ডিজের শামার জোসেফ (Shamar Joseph)।
শামার জোসেফ অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে দ্বিতীয় টেস্টে ৮ উইকেট নেওয়ার পাশাপাশি গাব্বায় বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন অস্ট্রেলিয়াকে ৮ রানে পরাজিত করে প্রায় দুই দশক পর অস্ট্রেলিয়ার মাটিতে প্রথম টেস্ট জিতেছে ওয়েস্ট ইন্ডিজ। শামার জোসেফ প্রথম ইনিংসে অ্যালেক্স ক্যারির উইকেট নেওয়ার পর দ্বিতীয় ইনিংসে ৬৮ রানে ৭ উইকেট নিয়ে ওয়েস্ট ইন্ডিজকে ঐতিহাসিক জয় এনে দেন।
এর আগে শনিবার মিচেল স্টার্কের বল ওয়েস্ট ইন্ডিজের ফাস্ট বোলারের পায়ের আঙুলে লাগে, যার কারণে চোট পেয়ে অবসর নিতে হয় তাকে। তবে শামার জোসেফ পরের দিন ম্যাচে ফিরে আসেন এবং অস্ট্রেলিয়াকে ২০৭ রানে অলআউট করতে মুখ্য ভূমিকা পালন করেন। এই জয়ে দুই ম্যাচের সিরিজে ১-১ সমতা আনল ওয়েস্ট ইন্ডিজ।
৩১ বছর বয়সী শামার জোসেফ একজন গায়ানিজ ক্রিকেটার যিনি প্রথম-শ্রেণীর ক্রিকেটে গায়ানা এবং আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে ওয়েস্ট ইন্ডিজের হয়ে খেলেন। জোসেফ একজন ডানহাতি ফাস্ট বোলার যিনি বাঁহাতি ব্যাটিং করতেও জানেন। গত বছরের ফেব্রুয়ারিতে প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটে অভিষেক হয় তার, এরপর ২০২৩ সালের সেপ্টেম্বরে টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটে অভিষেক হয় তার।
তিনি অস্ট্রেলিয়া সফর দিয়ে তার আন্তর্জাতিক ক্যারিয়ার শুরু করেছিলেন এবং দুটি টেস্ট ম্যাচে মোট ১৩ উইকেট নিয়েছিলেন। এছাড়া দুই টেস্টে ৬০ রানের কাছাকাছি রান করেছেন জোসেফ। ওয়েস্ট ইন্ডিজের এই নতুন ফাস্ট বোলিং সেনসেশন ৬টি প্রথম শ্রেণির ম্যাচে ২৬ উইকেট ও ২ লিস্ট-এ ম্যাচে ২ উইকেট নিয়েছেন। জোসেফ এখন পর্যন্ত মাত্র দুটি টি-টোয়েন্টি ম্যাচ খেলেছেন।
ক্যারিবীয় দেশটির ৪০০ জনসংখ্যা অধ্যুষিত বারাকারা গ্রাম থেকে উঠে এসে ইতিহাস গড়েছেন এই বোলার। শামার গত বছর পর্যন্ত তার গ্রামে নিরাপত্তা রক্ষীর কাজ করছিলেন। নৌকায় করে শামারের গ্রামে পৌঁছাতে অন্তত দু’দিন সময় লাগে। ২০১৮ সাল পর্যন্ত মোবাইল বা ইন্টারনেট ছিল না। আগে গাছ কাটা ছিল শামারের একমাত্র পেশা এবং একবার তিনি গাছ পড়ে মৃত্যুর মুখ থেকে ফিরে এসেছিলেন। এমন পরিস্থিতিতে সেখান থেকে অন্য জায়গায় সরে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেন তিনি। প্রহরী ও শ্রমিক হিসেবে তিনি ১২ ঘণ্টা কাজ করতেন এবং শুধুমাত্র রবিবারে ক্রিকেট খেলার সুযোগ পেতেন।