বাংলাদেশের তারকা অলরাউন্ডার সাকিব আল হাসানের (Shakib Al Hasan) বোলিং অ্যাকশন নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে ইংল্যান্ড অ্যান্ড ওয়েলস ক্রিকেট বোর্ড (ইসিবি)। কাউন্টি চ্যাম্পিয়নশিপে সারির হয়ে খেলার সময় তার বোলিং অ্যাকশনকে “সন্দেহজনক” বলে চিহ্নিত করেছেন মাঠের দুই আম্পায়ার স্টিভ ও’শওনেসি ও ডেভিড মিলন্স। ফলে ইসিবির পক্ষ থেকে সাকিবের বোলিং অ্যাকশন পর্যালোচনা করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
গত সেপ্টেম্বর মাসে সামারসেটের বিপক্ষে তাউন্টনে অনুষ্ঠিত একটি গুরুত্বপূর্ণ ম্যাচে সাকিবের এই সন্দেহজনক বোলিং অ্যাকশন উঠে আসে। সারের হয়ে এক ম্যাচ খেলার জন্য চুক্তিবদ্ধ হন সাকিব, যেখানে ৬৩ ওভারেরও বেশি বল করেন তিনি। তবে এই ম্যাচে তার কোনো বলকে “থ্রো” হিসাবে চিহ্নিত করা হয়নি এবং কোনো ধরনের ‘নো বল’ ডাকা হয়নি, তবুও তার অ্যাকশন যথেষ্ট সন্দেহজনক মনে হওয়ায় এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। ইএসপিএনক্রিকইনফো সূত্রে জানা গেছে, সাকিবের এই পর্যালোচনার প্রক্রিয়া আগামী কয়েক সপ্তাহের মধ্যে শুরু হতে পারে।
২০১০-১১ মরশুমের পর কাউন্টি চ্যাম্পিয়নশিপে এই প্রথম খেলতে এসেছিলেন সাকিব। দলটির শিরোপা ধরে রাখার প্রচেষ্টায় সারের হয়ে খেলার জন্য স্বল্পমেয়াদী চুক্তি করেন তিনি। বিশেষ করে সারের প্রথম সারির স্পিনাররা, যেমন উইল জ্যাকস এবং ড্যান লরেন্স, ইংল্যান্ড দলের দায়িত্বে থাকায় সাকিবকে জরুরি ভিত্তিতে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছিল। ম্যাচটিতে দুর্দান্ত পারফর্ম করে নয়টি উইকেট শিকার করেন সাকিব, তবে সামারসেট শেষ মুহূর্তে ১১১ রানের জয়ের মাধ্যমে ম্যাচটি নিজেদের পক্ষে নিয়ে নেয়।
সাকিবের এই সন্দেহজনক বোলিং অ্যাকশন তার দুই দশকের ক্রিকেট ক্যারিয়ারে প্রথমবারের মতো উঠেছে। আন্তর্জাতিক স্তরে ৪৪৭টি ম্যাচে তার ৭১২টি উইকেট রয়েছে, যার মধ্যে টেস্ট ম্যাচে ৭১টি ম্যাচ খেলে ২৪৬টি উইকেট দখল করেছেন তিনি।
এদিকে সাকিবের আন্তর্জাতিক ক্যারিয়ার বর্তমানে কিছুটা অনিশ্চয়তার মধ্যে রয়েছে। গত মাসে সুরক্ষা সংক্রান্ত উদ্বেগের কারণে দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে বাংলাদেশের টেস্ট দল থেকে নিজেকে সরিয়ে নেন তিনি, যা বাংলাদেশে ক্ষোভের সৃষ্টি করে। এছাড়া সাম্প্রতিককালে রাজনৈতিক অঙ্গনেও সক্রিয় সাকিব; আওয়ামী লীগ-নেতৃত্বাধীন সরকারের সঙ্গে তার সম্পৃক্ততা রয়েছে। উল্লেখ্য, জুলাই মাসে ছাত্রদের নেতৃত্বাধীন এক ঐতিহাসিক আন্দোলনে আওয়ামী লীগ সরকারের পতন ঘটে।
সাকিবের বোলিং অ্যাকশন পর্যালোচনার সিদ্ধান্ত প্রমাণ করতে পারে তার বোলিং অ্যাকশন বৈধ কিনা। বর্তমানে ইসিবির সাথে আলোচনা চলছে এবং অনুমোদিত পরীক্ষাগারে তার বোলিং অ্যাকশন পরীক্ষার ব্যবস্থা করা হবে। পর্যালোচনার ফলাফল নির্ভর করবে এই পরীক্ষার ওপর, এবং তাতে তার পরবর্তী খেলার অনুমোদন বা নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হতে পারে।
সাম্প্রতিক এই ঘটনায় আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে সাকিবের অবস্থান আবারও আলোচনায় উঠে আসছে। তবে সাকিব নিজেই আত্মবিশ্বাসী যে তার বোলিং অ্যাকশন বৈধ এবং তিনি পর্যালোচনার প্রক্রিয়ায় অংশ নিতে প্রস্তুত। এই পরিস্থিতিতে সাকিবের সমর্থকেরা উদ্বিগ্ন, এবং ক্রিকেট বিশ্লেষকরা পর্যবেক্ষণে রয়েছেন।