শনির দশায় মাঠের বাইরে ইস্টবেঙ্গলের একাধিক ফুটবলার

    কঠিন সময় পার করছে ইস্টবেঙ্গল (East Bengal)। দলটির জন্য চোটের তালিকা দিন দিন দীর্ঘতর হচ্ছে আর সেই সঙ্গে দলের প্রস্তুতিও অব্যাহত রয়েছে অন্ধকারে। গতকালই…

East Bengal

short-samachar

   

কঠিন সময় পার করছে ইস্টবেঙ্গল (East Bengal)। দলটির জন্য চোটের তালিকা দিন দিন দীর্ঘতর হচ্ছে আর সেই সঙ্গে দলের প্রস্তুতিও অব্যাহত রয়েছে অন্ধকারে। গতকালই দলের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ ডিফেন্ডার হিজাজি মাহের (Hijazi Maher) চোট পেয়ে মাঠের বাইরে চলে গেছেন এবং এর আগে দলের অন্যতম আক্রমণভাগের খেলোয়াড় ক্লেটন সিলভাও (Cleiton Silva) গুরুতর চোট পেয়েছেন। এই দুটি চোটের প্রভাব ইস্টবেঙ্গলের সুপার সিক্সে স্থান পাওয়ার আশার উপর মারাত্মক প্রভাব ফেলতে পারে।

হিজাজি মাহেরের চোটটি বিশেষভাবে উদ্বেগজনক। প্র্যাকটিস সেশনের সময় তার হাঁটুতে এক গুরুতর আঘাত লাগে যা তার শরীরের ঘূর্ণনকেও প্রভাবিত করে। চিকিৎসকরা জানিয়েছেন, এই চোটের ফলস্বরূপ মাহের দীর্ঘ সময়ের জন্য মাঠের বাইরে থাকতে পারেন। এর পাশাপাশি ক্লেটন সিলভা তার গুঁড়নির সমস্যা নিয়ে নতুন করে আঘাত পেয়েছেন এবং তাঁর বর্তমান পরিস্থিতি দেখে শোনা যাচ্ছে যে তিনি হয়তো এই মরশুমের বাকিটা মাঠের বাইরে থাকতে পারেন। এই দুটি চোট দলটির জন্য বড় ধাক্কা কারণ এরা দুজনেই দলটির শক্তিশালী খেলোয়াড়দের মধ্যে ছিলেন।

এর মধ্যেই আরো কিছু বড় নামের চোটের কথা উঠে এসেছে। দলের প্রধান ডিফেন্ডার আনোয়ার আলি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন। আগামী ম্যাচে খেলতে পারবেন না। তাঁর পায়ের হাড়ে সামান্য ফাটল ধরেছে যার কারণে তিনি কয়েক সপ্তাহের জন্য মাঠের বাইরে থাকবেন। একইভাবে হেক্টর ইউস্তে ইনজুরি সারিয়ে রিহ্যাব করছেন কিন্তু তিনি মুম্বই সিটি এফসি ম্যাচের জন্য প্রস্তুত হতে পারবেন কিনা তা নিশ্চিত নয়। ইস্টবেঙ্গলের বেশিরভাগ খেলাই শনিবার করে অনুস্থিত হয়েছে। সেটা ডার্বি হোক বা নর্থইস্ট। এছাড়াও অনেক ম্যাচই শনিবার করে শিডিউল করা হয়েছে। সেক্ষেত্রে এই চোট এবং কার্ড সমস্যা নিয়ে বলা জেতেই পারে ইস্টবেঙ্গলে শনির দশা চলছে।

এখন পর্যন্ত ইস্টবেঙ্গল দলের চোটের তালিকা অত্যন্ত দীর্ঘ হয়ে উঠেছে যা ক্লাবের সাফল্যের পথে বড় বাধা হয়ে দাঁড়াচ্ছে। বর্তমানে দলের ১২ জন ফুটবলার চোটের কারণে মাঠের বাইরে রয়েছেন:

১ মার্ক জথানপুইয়া (মৌসুমের অর্ধেক অংশ বাইরে)
২ নিশু কুমার (মৌসুমের অর্ধেক অংশ বাইরে)
৩ প্রবাত লাকড়া (নিরবচ্ছিন্ন চোট)
৪ ডিমিত্রিয়োস ডায়ামান্টাকোস (চোটের কারণে বেশ কিছু ম্যাচ মিস করেছেন)
৫ ক্লেটন সিলভা (স্পাইন ইনজুরির কারণে প্রথম অর্ধে অনুপস্থিত, বর্তমানে অন্য চোট)
৬ সওল ক্রেসপো (৭-৯টি ম্যাচ মিস করেছেন, যখন দলটি পাঁজরের ক্ষত থেকে পুনরুদ্ধার করছিল)
৭ হেক্টর ইউস্তে (চোটের কারণে এখনো সম্পূর্ণ ফিট নন)
৮ মাদিহ তালাল (এসি এল-৩ ইনজুরি, মৌসুমের বাকি অংশ বাইরে)
৯ হিজাজি মাহের (হাঁটুর গুরুতর চোট, পরিস্থিতি আরো জটিল হতে পারে)
১০ মোহাম্মদ রাকিপ (ফর্মে ফিরে যাওয়ার পর চোট পেয়ে আবারও মাঠের বাইরে)
১১ তন্ময় দাস (প্রমোট হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে চোটের তালিকায় যুক্ত)
১২ আনোয়ার আলি (পায়ের হাড়ে ফাটল, পরবর্তী ম্যাচে অনুপস্থিত)

এই সকল চোটের মধ্যে দলের জন্য সবচেয়ে বেশি চিন্তার বিষয় হলো ডিফেন্সিভ লাইন। ক্লেটন এবং হিজাজি মাহেরের অনুপস্থিতিতে দলের রক্ষণভাগে কোনো বিদেশি খেলোয়াড় নেই। একমাত্র রিচার্ড সেলিস এবং ডিমিত্রিওস ডায়ামান্টাকোস এখন পর্যন্ত একমাত্র উপলব্ধ বিদেশি খেলোয়াড়।

এমন পরিস্থিতিতে ইস্টবেঙ্গলের কোচ অস্কার ব্রুজো শঙ্কিত। দলের প্রধান লক্ষ্য সুপার সিক্সে স্থান পাওয়া এখন চোটের কারণে প্রায় অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে। ক্লাবের ফ্যানবেসও তাদের দলের এই দুর্দশায় হতাশ কারণ তারা মাঠে গিয়ে দলকে সমর্থন জানালেও কোনো বড় সাফল্যের আশা রাখতে পারছেন না। অনেকেই এখন আশা করছেন ক্লাব দ্রুত কোনো বিদেশি খেলোয়াড়কে যুক্ত করে সুপার সিক্সের লক্ষ্য পূরণের জন্য দলকে শক্তিশালী করবে।

চোটের এই দীর্ঘ তালিকা এবং প্রক্রিয়া ইস্টবেঙ্গলের সামনে কঠিন সময় নিয়ে এসেছে। তবে ব্রুজো আশা করছেন দলের অভ্যন্তরীণ ঐক্য এবং রিহ্যাব প্রক্রিয়ায় কিছুটা উন্নতি হলে তারা সুপার সিক্সে যাওয়ার পথ মসৃণ করতে পারবে।

এখন দেখার বিষয় ৩১ জানুয়ারি মুম্বই সিটি এফসির বিরুদ্ধে ইস্টবেঙ্গলের অবস্থা কেমন হয় এবং দলটি এই চোটের ধাক্কা কাটিয়ে সাফল্য অর্জন করতে পারে কিনা।