টানা ৫ ডার্বি ম্যাচের লজ্জার রেশ এখনও কাটিয়ে উঠতে পারে নি এসসি ইস্টবেঙ্গল (SC East Bengal)।আগামী বুধবার লাল হলুদ ব্রিগেড খেলতে নামছে চেন্নাইন এফসি’র বিরুদ্ধে,তিলক ময়দানে।
ইন্ডিয়ান সুপার লীগের (ISL) ‘লাস্ট বয়ে’র তকমা সেটে রয়েছে লাল হলুদ জার্সিতে। হেডকোচ মারিও রিভেরার কাছে এই মুহুর্তে বড় চ্যালেঞ্জ ডার্বি ম্যাচে ১-৩ গোলে চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী ATK মোহনবাগানের বিরুদ্ধে হারের ক্ষতে প্রলেপ লাগিয়ে টিমকে উইনিং ট্র্যাকে ফিরিয়ে আনা।যাতে অন্তত পক্ষে টাইটেলশিপে একটা সম্মানজনক পজিশন পৌছে চলতি ২০২১-২২ ISL সেশনের অভিযান শেষ করা যায়।
কিন্তু বিধি বাম! মঙ্গলবার এসসি ইস্টবেঙ্গল হেডকোচ মারিও রিভেরা প্রি ম্যাচ প্রেস কনফারেন্সে ডার্বি ম্যাচে হার এবং পরবর্তী চেন্নাইন এফসি ম্যাচ প্রসঙ্গে কথা বলতে গিয়ে বিতর্কিত মন্তব্য করে ফেলেন। রিভেরার কথায়,”পেশাদার দলগুলির জন্য, আপনি যখন একটি ম্যাচ হেরে যান, আপনাকে ভাল জিনিসগুলি রাখতে হবে, খারাপ জিনিসগুলিকে দূর করতে হবে এবং পরের ম্যাচে স্ক্র্যাচ থেকে শুরু করতে হবে। এটা আমাদের জন্য আলাদা হবে না।”
স্প্যানিয়ার্ড মারিও রিভেরা এর আগেও ইস্টবেঙ্গলের সহায়ক কোচিং পদে ছিলেন আলেহান্দ্রো মেনেন্ডেস গার্সিয়ার কোচিং সময়কালে। লাল হলুদ জনতার আবেগ কাছ থেকে দেখার চাক্ষুষ অভিঞ্জতা রয়েছে।
চলতি ইন্ডিয়ান সুপার লীগে (ISL) এফসি গোয়ার বিরুদ্ধে সেশনের মাঝপথে বহু কাঙ্ক্ষিত জয়ের ফল্গুধারাতে লাল হলুদ জনতা বরণ করে নিয়েছিল স্প্যানিয়ার্ড জাদুকরকে। নাওরেম মহেশ সিং’র জোড়া গোল,ISL টুর্নামেন্টে নিজেদের ১২ নম্বর ম্যাচে এফসি গোয়াকে ১-২ গোলে হারিয়ে ওই মুহুর্তেই লাল-হলুদ জনতার কাছে “The real Magician” হয়ে উঠেছিলেন হেডকোচ মারিও রিভেরা। এটাই আবেগ, এটাই ভালবাসা প্রিয় দলের প্রতি।একটা আকুতি সকল সময়ে প্রিয় দলের ভালো খেলা দেখার।
কিন্তু হায়! নিজামর্স’দের বিরুদ্ধে মারিও রিভেরার চ্যালেঞ্জ বুমেরাং হয়ে ফিরে এল।হেডকোচ মারিও রিভেরা এফসি গোয়া ম্যাচের আগেই বলেছিলেন, “আমার প্রথম চ্যালেঞ্জ হবে দলের মেজাজ বদলানো।” মেজাজ বদল হতেই পারফরম্যান্সে ছাপ পড়েছিল,জিতেছিল লাল হলুদ ব্রিগেড গোয়ার বিরুদ্ধে। সঙ্গে ইন্ডিয়ান সুপার লীগের(ISL) পয়েন্ট টেবিলে লাস্ট বয় থেকে এক ধাপ ওপরে উঠে আসে এসসি ইস্টবেঙ্গল ১০ নম্বরে ৯ পয়েন্ট নিয়ে।
ব্যস ওই পর্যন্তই। হায়দরাবাদ এফসির বিরুদ্ধে এসসি ইস্টবেঙ্গলের ০-৪ গোলের ব্যবধানে হার স্প্যানিয়ার্ড জাদুকরের জাদু ওই মুহুর্তে ফের ফিকে হয়ে গিয়েছিল।
অবশিষ্ট ছিল ISL টুর্নামেন্টের দ্বিতীয় লেগের ডার্বি ম্যাচ। ম্যাচের ৫৬ মিনিটে আন্তোনিও পেরোসেভিচের কর্ণার থেকে ড্যারেন সিডোলের গোলে এগিয়ে যায় লাল হলুদ ব্রিগেড, পিছিয়ে পড়ে মেরিনার্স ক্যাম্প।
৬১ মিনিটে দীপক টাংড়ির পরিবর্ত খেলোয়াড় হিসেবে মাঠে নেমে ৬৪ মিনিটে ATK মোহনবাগানের হয়ে প্রথম গোল কিয়ান নাসিরির।তাও কখন, টিম যখন এক গোলে পিছিয়ে, চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী এসসি ইস্টবেঙ্গলের থেকে। এরপর ম্যাচের অতিরিক্ত ৬ মিনিটের মধ্যে ৯৩ এবং ৯৪ মিনিট ব্যাক টু ব্যাক দুই গোল কিয়ান নাসিরির। এককথায় তাণ্ডব নৃত্য করে গেলেন ২১ বছরের ‘ছোকরা’ একটা ছেলে।
লজ্জায়, শরমে মাথা হেট লাল হলুদ জনতার।বুক ফাটা আর্তনাদ “আমরা কি আর কোনদিনও ডার্বি ম্যাচ জিততে পারবো না!” শুধুই হাহাকার, দুচোখ বয়ে চলেছে লাল হলুদ আবেগের নয়ন ধারা, চোখের জলের বাধ না মানা আবেগকে পরোয়া না করে ফুঁৎকার তুড়ি মেরে উড়িয়ে দিয়ে বুধবার চেন্নাইন এফসি ম্যাচের আগে প্রি ম্যাচ প্রেস কনফারেন্সে বসে এসসি ইস্টবেঙ্গল হেডকোচ মারিও রিভেরার বিতর্কিত মন্তব্য ষোলো আনা পূর্ণ করে দিল লাল হলুদ জনতার আবেগ, ভালবাসা আর ধৈহ্য ধরে রেখে প্রিয় দলের প্রতি সমর্থন বজায় রাখার জেদ।
আবেগ না বুঝেই মঙ্গলবার আলটপকা মন্তব্য করে নিজেই লাল হলুদ ব্রিগেড থেকে নিজের বিদায়ের পথ মসৃণ করে তুললেন লাল-হলুদ জনতার দেওয়া সম্মান “The real Magician” মারিও রিভেরা। সমস্ত আবেগ,ভালবাসা, প্রিয় দলের প্রতি জনতার আকুতিকে আমল না দিয়ে পেশাদারি কোচিং মানসিকতার অবস্থান বজায় রাখলেন হেডকোচ মারিও রিভেরা। ইস্টবেঙ্গল, মোহনবাগান, মহামেডান স্পোর্টিং ক্লাবের জার্সি গায়ে চাপালে কিংবা কোচিং সেশনে চেয়ারে বসে আবেগের টান তা ‘নাড়ির টানে’র সমান এই মানসিকতাকে বুঝতেই হবে খেলোয়াড় থেকে শুরু করে কোচ এবং কোচিং স্টাফদের।
শুধুমাত্র পেশাদারিত্বর মোড়কে এগিয়ে চললে হোচট খেয়ে আছড়ে শুধু পড়তেই হবে তাইই নয়, ‘ভালবাসার অত্যাচার’ সহ্য করতে হবে যখন কলকাতা লীগে ট্রেভর জেমস মর্গ্যানের গায়ে ‘থুথু’ ছিটিয়ে দেওয়া হয়েছিল ক্লাব তাঁবুর র্যাম্পাড থেকে। লাল হলুদ জনতার আবেগ এমনই। পেশাদারিত্বমূলক বিতর্কিত মন্তব্য আর আবেগের সংঘাতে ক্ষোভের জেরে প্রতিবাদে মশাল হাতে লাল হলুদ জনতা।