ভারতীয় ক্রিকেট দলের উইকেটরক্ষক-ব্যাটার সঞ্জু স্যামসন অবশেষে তার ফর্মে ফিরে এলেন এবং দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে চতুর্থ ও শেষ টি-টোয়েন্টি ম্যাচে দুর্ধর্ষ সেঞ্চুরি হাঁকিয়ে এক নতুন মাইলফলক স্থাপন করলেন। সঞ্জু স্যামসন প্রথম ক্রিকেটার হিসেবে এক ক্যালেন্ডার বছরে তিনটি টি-টোয়েন্টি সেঞ্চুরি করার বিরল কীর্তি গড়েছেন।
দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে সিরিজের প্রথম ম্যাচে দুর্দান্ত সেঞ্চুরি করার পর পরের দুটি ম্যাচে টানা দুবার শূন্য রানে আউট হয়ে সমালোচনার মুখে পড়েন স্যামসন। তবে শুক্রবারের ম্যাচে তিনি যেন নতুন করে ঝড় তুললেন। এই সেঞ্চুরি শুধু তার ব্যক্তিগত ফর্মে ফেরার ইঙ্গিত নয়, বরং পুরো ভারতীয় দলের মনোবল বাড়িয়েছে।
টস জিতে ব্যাটিংয়ের সিদ্ধান্ত ও স্যামসনের দুর্দান্ত সূচনা
ভারতীয় অধিনায়ক সূর্যকুমার যাদব টস জিতে প্রথমে ব্যাট করার সিদ্ধান্ত নেন। শুরুতেই সঞ্জু স্যামসন এবং ওপেনার অভিষেক শর্মা মিলে ভারতকে দুর্দান্ত সূচনা উপহার দেন। অভিষেক মাত্র ১৮ বলে ৩৬ রান করে ফিরে যান, তবে তার আগেই সঞ্জুর সাথে ৭৩ রানের পার্টনারশিপ গড়ে দলের ভিত শক্ত করে তোলেন। অভিষেকের বিদায়ের পর স্যামসন এবং তিলক ভার্মা মিলে যা করলেন, তা ভারতীয় ক্রিকেট ইতিহাসের এক স্মরণীয় মুহূর্ত হয়ে থাকবে।
তিলক ভার্মার সাথে রেকর্ড পার্টনারশিপ
অভিষেক আউট হওয়ার পর সঞ্জু স্যামসন এবং তিলক ভার্মা মিলে দক্ষিণ আফ্রিকার বোলারদের একেবারে উড়িয়ে দিলেন। তারা দুজনে মিলে মাত্র ৮৬ বলে ২১০ রানের একটি রেকর্ড পার্টনারশিপ গড়েন। স্যামসনের আগ্রাসী ব্যাটিংয়ের সাথে তিলকও ছিলেন সমানতালে। ম্যাচে তিলকও একটি দুর্দান্ত সেঞ্চুরি করেন।
দক্ষিণ আফ্রিকার বোলাররা এক সময় দিশেহারা হয়ে পড়ে, কারণ স্যামসন এবং তিলক একের পর এক বাউন্ডারি এবং ছক্কা হাঁকিয়ে তাদের উপর প্রবল চাপ সৃষ্টি করেন।
ভারতের রেকর্ড গড়া স্কোর
এই দুজনের অসাধারণ পারফরম্যান্সের ফলে ভারত নির্ধারিত ২০ ওভারে ২৮৩/১ রানের বিশাল স্কোর তোলে। এটি টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটে ভারতের অন্যতম সেরা স্কোর। স্যামসনের ১০২ রানের ইনিংসটি সাজানো ছিল মাত্র ৫২ বলে, যেখানে ছিল ৯টি চার ও ৬টি ছক্কার মার। অন্যদিকে, তিলক ৪৯ বলে ১০৫ রানে অপরাজিত থাকেন।
স্যামসনের ঐতিহাসিক কীর্তি
স্যামসন এক বছরে তিনটি টি-টোয়েন্টি সেঞ্চুরি করে প্রথম ক্রিকেটার হিসেবে ইতিহাস গড়েছেন। এর আগে, এই কীর্তি কারও নামের সাথে যুক্ত হয়নি। ২০২৪ সাল যেন সঞ্জু স্যামসনের জন্য এক স্মরণীয় বছর হয়ে থাকবে।
ম্যাচ শেষে সঞ্জু বলেন, “এই সেঞ্চুরিটি আমার জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। আমার দল আমাকে সমর্থন করেছে এবং আমি আমার ফর্ম ফিরে পেয়ে খুবই আনন্দিত। আমরা সবাই দলগতভাবে দারুণ একটি ম্যাচ খেলেছি।”
দক্ষিণ আফ্রিকার বোলারদের কঠিন দিন
দক্ষিণ আফ্রিকার বোলাররা ম্যাচ জুড়ে চাপের মধ্যে ছিল। লুঙ্গি এনগিডি এবং কেশব মহারাজদের মতো অভিজ্ঞ বোলাররাও ভারতের ব্যাটিং আগ্রাসনের সামনে মাথা তুলে দাঁড়াতে পারেননি। পুরো ম্যাচে তারা মাত্র একটিমাত্র উইকেট নিতে সক্ষম হয়।
সিরিজের ফলাফল এবং ভারতের মনোবল
ভারত এই ম্যাচে জয়ী হওয়ার পাশাপাশি সিরিজও ২-২ ব্যবধানে ড্র করে। যদিও সিরিজ জয় সম্ভব হয়নি, তবে শেষ ম্যাচে এমন একটি দুর্দান্ত পারফরম্যান্স ভারতের দলের মনোবলকে অনেকটাই বাড়িয়ে দেবে।
এই পারফরম্যান্সের মাধ্যমে সঞ্জু স্যামসন এবং তিলক ভার্মা প্রমাণ করেছেন যে, ভারতীয় ক্রিকেটের ভবিষ্যৎ কতটা উজ্জ্বল। তাদের এই ইনিংস শুধু ভারতের জয় এনে দেয়নি, বরং বিশ্ব ক্রিকেটেও এক নতুন মানদণ্ড স্থাপন করেছে।