ভারতীয় ক্রিকেট দলের তারকা ও ওডিআই অধিনায়ক রোহিত শর্মা (Rohit Sharma) সম্প্রতি ভারতীয় ক্রিকেট কন্ট্রোল বোর্ডের (BCCI) নতুন প্রবর্তিত ব্রঙ্কো টেস্টে (Bronco Test) অংশ নিয়েছেন এবং তার ফলাফল সামনে এসেছে। ৩৮ বছর বয়সী এই ক্রিকেটার নতুন এই ফিটনেস টেস্টে কেমন পারফর্ম করবেন, তা নিয়ে ক্রিকেট মহলে ব্যাপক আলোচনা ছিল। তবে রোহিত শুধুমাত্র এই টেস্টে উত্তীর্ণই হননি, বরং বেঙ্গালুরুর বিসিসিআই সেন্টার অফ এক্সেলেন্সে তার শারীরিক গঠন এবং পারফরম্যান্স সকলকে মুগ্ধ করেছে। এই টেস্টে তিনি ইয়ো-ইয়ো টেস্টেও অংশ নিয়েছিলেন, যা ভারতীয় দলের ফিটনেস মাপার জন্য ইতিমধ্যেই ব্যবহৃত হচ্ছে। রেভস্পোর্টজ গ্লোবালের রিপোর্ট অনুযায়ী, ৩০ ও ৩১ আগস্টে অনুষ্ঠিত টেস্টে অংশ নেওয়া সকল ক্রিকেটারই এতে উত্তীর্ণ হয়েছেন।
ব্রঙ্কো টেস্ট: কী এবং কেন?
ব্রঙ্কো টেস্ট হল একটি রাগবি-কেন্দ্রিক ফিটনেস টেস্ট, যা বিসিসিআই জুন ২০২৫-এ নতুন স্ট্রেংথ অ্যান্ড কন্ডিশনিং কোচ অ্যাড্রিয়ান লে রুয়ের সুপারিশে প্রবর্তন করেছে। এই টেস্টে ক্রিকেটারদের ২০ মিটার, ৪০ মিটার এবং ৬০ মিটারের শাটল রান পাঁচটি সেটে সম্পন্ন করতে হয়, মোট ১২০০ মিটার, কোনো বিরতি ছাড়াই। এই টেস্টের লক্ষ্য হল ক্রিকেটারদের এরোবিক ক্ষমতা, গতি এবং মানসিক দৃঢ়তা পরীক্ষা করা। ইয়ো-ইয়ো টেস্টের তুলনায় এটি আরও কঠিন বলে বিবেচিত হয়, কারণ এতে কোনো বিশ্রামের সুযোগ থাকে না। এই টেস্টটি প্রাথমিকভাবে পেস বোলারদের ফিটনেস সমস্যা মোকাবেলার জন্য প্রবর্তিত হয়েছিল, যা ২০২৪-এ ইংল্যান্ডের বিরুদ্ধে পাঁচ ম্যাচের টেস্ট সিরিজে প্রকাশ পেয়েছিল।
রোহিতের ফিটনেস: আলোচনা ও বিতর্ক
রোহিত শর্মার ফিটনেস নিয়ে বিতর্ক দীর্ঘদিনের। টি-টোয়েন্টি এবং টেস্ট ক্রিকেট থেকে অবসর নেওয়ার পর, তিনি এখন শুধুমাত্র ওডিআই ফরম্যাটে সক্রিয়। ২০২৭ সালের ওডিআই বিশ্বকাপের সময় তিনি ৪০ বছর বয়সী হবেন, এবং তার ফিটনেস নিয়ে প্রশ্ন উঠছে। প্রাক্তন ক্রিকেটার মনোজ তিওয়ারি দাবি করেছেন যে ব্রঙ্কো টেস্টটি রোহিতের মতো খেলোয়াড়দের দল থেকে বাদ দেওয়ার জন্যই প্রবর্তিত হয়েছে। তিনি বলেন, “আমার মনে হয় এই টেস্ট রোহিত শর্মার মতো খেলোয়াড়দের জন্যই আনা হয়েছে, যাতে তাদের ভবিষ্যতে দল থেকে বাদ দেওয়া যায়।” তবে রোহিত এই টেস্টে দুর্দান্ত পারফর্ম করে এই সমালোচনার জবাব দিয়েছেন।
রিপোর্ট অনুযায়ী, রোহিত শুধুমাত্র ব্রঙ্কো টেস্টে উত্তীর্ণই হননি, বরং তার শারীরিক গঠন এবং স্ট্যামিনা দেখে সকলে অবাক হয়েছেন। তিনি ইয়ো-ইয়ো টেস্টেও ভালো ফল করেছেন, যা তার অবসরের গুজবকে উড়িয়ে দিয়েছে। রোহিত ছাড়াও শুভমান গিল, জসপ্রীত বুমরাহ, মহম্মদ সিরাজ, যশস্বী জয়সওয়াল এবং শার্দুল ঠাকুরের মতো ক্রিকেটাররাও এই টেস্টে উত্তীর্ণ হয়েছেন। পেসার প্রসিধ কৃষ্ণ বিশেষভাবে উচ্চ স্কোর নিয়ে প্রশংসিত হয়েছেন।
রোহিতের ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা
রোহিত শর্মা এখন অস্ট্রেলিয়ার বিরুদ্ধে অক্টোবরে অনুষ্ঠিতব্য ওডিআই সিরিজের (১৯, ২৩ এবং ২৫ অক্টোবর) জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছেন। তিনি সম্ভবত সেপ্টেম্বর ৩০, অক্টোবর ৩ এবং ৫ তারিখে কানপুরে অস্ট্রেলিয়া এ-এর বিরুদ্ধে তিনটি একদিনের ম্যাচে ভারত এ দলের হয়ে খেলতে পারেন, যদিও এ বিষয়ে এখনও নিশ্চিতকরণ পাওয়া যায়নি।
রোহিতের সাম্প্রতিক পারফরম্যান্স তাকে ওডিআই ফরম্যাটে অপরিহার্য করে তুলেছে। ২০২৫ সালের চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির ফাইনালে নিউজিল্যান্ডের বিরুদ্ধে ৮৩ বলে ৭৬ রানের ইনিংস খেলে তিনি ম্যাচের সেরা খেলোয়াড় নির্বাচিত হন। ২০২৩ সাল থেকে তিনি ৩৮টি ওডিআই ম্যাচে ১৭১৪ রান করেছেন, গড় ৪৮.৯৭ এবং স্ট্রাইক রেট ১১৭.২। পাওয়ারপ্লেতে তার গড় ৬৭.৪১ এবং স্ট্রাইক রেট ১২২.৫৭, যা তাকে এই পর্যায়ে ১০০০-এর বেশি রান করা একমাত্র ব্যাটসম্যান করে তুলেছে।
রোহিতের প্রত্যাবর্তন ও প্রভাব
টি-টোয়েন্টি এবং টেস্ট ক্রিকেট থেকে অবসর নেওয়ার পর রোহিতের ফোকাস এখন শুধুমাত্র ওডিআই ফরম্যাটে। ২০২৪-এ টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ জয়ের পর তিনি এই ফরম্যাট থেকে অবসর নেন। টেস্ট ক্রিকেটে তার শেষ সিরিজ অস্ট্রেলিয়ায় ২০২৪-২৫ মৌসুমে হতাশাজনক ছিল, যার পর তিনি এই ফরম্যাট ছেড়ে দেন। তবে ওডিআই ফরম্যাটে তার দক্ষতা এবং নেতৃত্ব তাকে দলের একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ করে রেখেছে।
এই ফিটনেস টেস্টে রোহিতের সাফল্য তার সমালোচকদের জবাব দিয়েছে। তিনি অফ-সিজনে মুম্বাই ক্রিকেট অ্যাসোসিয়েশনের বিসিসি ফ্যাসিলিটিতে প্রাক্তন ভারতীয় সহকারী কোচ অভিষেক নায়ারের সঙ্গে কঠোর প্রশিক্ষণ নিয়েছেন। রিপোর্ট অনুযায়ী, তিনি আগের তুলনায় “অধিক স্লিম এবং চটপটে” দেখাচ্ছেন।
রোহিত শর্মার ব্রঙ্কো এবং ইয়ো-ইয়ো টেস্টে সাফল্য তার ফিটনেস এবং উৎসর্গের প্রমাণ। অস্ট্রেলিয়া সিরিজের আগে এই ফলাফল তাকে এবং তার ভক্তদের জন্য বড় স্বস্তি এনেছে। ২০২৭ সালের ওডিআই বিশ্বকাপে নেতৃত্ব দেওয়ার ইচ্ছা প্রকাশ করেছেন রোহিত, এবং তার সাম্প্রতিক ফিটনেস পারফরম্যান্স তাকে এই লক্ষ্যে এগিয়ে রাখছে। ভারতীয় ক্রিকেটের এই ‘হিটম্যান’ তার ব্যাটিং দক্ষতা এবং নেতৃত্বের মাধ্যমে এখনও দলের একটি অপরিহার্য অংশ।