ভারতীয় ক্রিকেট দল ম্যানচেস্টারের ওল্ড ট্রাফোর্ডে চলমান চতুর্থ টেস্ট ম্যাচের প্রথম দিনে একটি বড় ধাক্কা খেয়েছে, যখন তাদের তারকা উইকেটরক্ষক-ব্যাটসম্যান ঋষভ পন্থ (Rishabh Pant ) গুরুতর পায়ের চোটের কারণে মাঠ ছাড়তে বাধ্য হন। বুধবার, ২৩ জুলাই, ২০২৫, ইংল্যান্ডের পেসার ক্রিস ওকসের একটি ডেলিভারিতে পন্থের ডান পায়ে আঘাত লাগে, যার ফলে তিনি ৩৭ রানে অপরাজিত থাকা সত্ত্বেও মাঠ ত্যাগ করেন। তাঁর পায়ে তীব্র ফোলা এবং সামান্য রক্তপাত দেখা গেছে, এবং তিনি দাঁড়াতে পারছিলেন না। এই ঘটনা ভারতীয় দল এবং ভক্তদের মধ্যে উদ্বেগ সৃষ্টি করেছে, বিশেষ করে পন্থের এই সিরিজে দুর্দান্ত ফর্মের কথা বিবেচনা করে। ভারতীয় ক্রিকেট কন্ট্রোল বোর্ড (বিসিসিআই) এখনও তাঁর চোটের তীব্রতা সম্পর্কে আনুষ্ঠানিক ঘোষণা না করলেও, ইংল্যান্ডের ক্রিকেট কিংবদন্তি নাসির হুসেন এবং স্টুয়ার্ট ব্রড তাঁর দ্রুত সুস্থতার জন্য প্রার্থনা করেছেন।
চোটের ঘটনা এবং ম্যাচের পরিস্থিতি
ম্যাচের ৬৮তম ওভারে, পন্থ একটি উচ্চাভিলাষী রিভার্স সুইপ খেলার চেষ্টা করেন ক্রিস ওকসের একটি ফুল-লেংথ ডেলিভারিতে। বলটি ব্যাটের নিচের প্রান্তে লেগে তাঁর ডান পায়ের পাতার কাছে আঘাত করে। ইংল্যান্ড এলবিডব্লিউর জন্য আবেদন করে, কিন্তু রিভিউতে একটি সামান্য ইনসাইড এজের কারণে পন্থ বেঁচে যান। তবে, তিনি তীব্র ব্যথায় কাতরাতে থাকেন এবং মাঠে চিকিৎসার পরেও দাঁড়াতে অক্ষম হন। ফিজিও কমলেশ জৈন তাঁর পায়ের চিকিৎসা করেন, কিন্তু ফোলা এবং রক্তপাতের কারণে তাঁকে একটি গল্ফ কার্ট-সদৃশ অ্যাম্বুলেন্সে করে মাঠ থেকে নিয়ে যাওয়া হয়। পন্থকে ম্যানচেস্টারের একটি হাসপাতালে স্ক্যানের জন্য নিয়ে যাওয়া হয়েছে, এবং বিসিসিআই জানিয়েছে, “ঋষভ পন্থ ম্যানচেস্টার টেস্টের প্রথম দিনে ব্যাটিং করার সময় তাঁর ডান পায়ে আঘাত পেয়েছেন। তাঁকে স্ক্যানের জন্য নিয়ে যাওয়া হয়েছে, এবং বিসিসিআই মেডিকেল টিম তাঁর অগ্রগতি পর্যবেক্ষণ করছে।”
প্রথম দিনের খেলা শেষে ভারত ৮৩ ওভারে ২৬৪/৪ রানে পৌঁছায়, যেখানে রবীন্দ্র জাদেজা (১৯*) এবং শার্দুল ঠাকুর (১৯*) অপরাজিত ছিলেন। সাই সুদর্শন (৬১) এবং যশস্বী জয়সওয়াল (৫৮) তাদের হাফ-সেঞ্চুরির মাধ্যমে ভারতের ইনিংসকে শক্ত ভিত্তি দিয়েছেন। তবে, পন্থের চোট ভারতের জন্য একটি বড় ধাক্কা, কারণ তিনি এই সিরিজে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ রান সংগ্রহকারী (৪৬২ রান, গড় ৭০.৮৩) এবং লিডস টেস্টে দুটি সেঞ্চুরি সহ তাঁর আক্রমণাত্মক ব্যাটিং দলের জন্য গুরুত্বপূর্ণ।
ইংল্যান্ডের কিংবদন্তিদের প্রতিক্রিয়া
ইংল্যান্ডের প্রাক্তন অধিনায়ক নাসির হুসেন স্কাই স্পোর্টসে বলেন, “আজ ভারতের দিন ছিল, কিন্তু পন্থের চোট একটি বড় ধাক্কা। এই সিরিজে তাঁর উপস্থিতি খেলাটিকে আরও আকর্ষণীয় করে তুলেছে। আমরা আশা করি তিনি দ্রুত সুস্থ হয়ে উঠবেন। এই খেলায় পন্থের মতো খেলোয়াড় প্রয়োজন।” তিনি আরও বলেন, “আজ যখন তিনি ব্যাট করতে নামেন, তখন উভয় দলের সমর্থকরা তাঁকে উৎসাহ দিয়েছেন।”
প্রাক্তন ইংল্যান্ড পেসার স্টুয়ার্ট ব্রডও পন্থের দ্রুত সুস্থতার জন্য প্রার্থনা করেছেন। তিনি বলেন, “পন্থকে দেখতে এবং তাঁর উপর ধারাভাষ্য দিতে অসাধারণ লাগে। তিনি বিশ্ব ক্রিকেটের জন্য একটি সম্পদ। আমরা আশা করি তিনি সুস্থ হয়ে উঠবেন। মেডিকেল টিম রাতভর তাঁর পায়ের ফোলা কমানোর জন্য চেষ্টা করবে, এবং আশা করি এটি শুধু একটি আঘাত এবং তিনি আবার ব্যাট করতে পারবেন।”
ইংল্যান্ডের আরেক কিংবদন্তি মাইকেল আথারটন পন্থের চোটকে গুরুতর বলে মনে করেন। তিনি বলেন, “পন্থের ব্যথা সহ্য করার ক্ষমতা খুব বেশি, কিন্তু তাঁর মুখের অভিব্যক্তি দেখে বোঝা যায় এটি গুরুতর। যদি তিনি এই সিরিজ থেকে ছিটকে যান, তবে এটি ভারতের জন্য বিশাল ক্ষতি।”
পন্থের চোটের প্রভাব
পন্থের এই চোট ভারতীয় দলের জন্য একটি বড় চ্যালেঞ্জ। এই সিরিজে তিনি ইতিমধ্যে ৪৬২ রান সংগ্রহ করেছেন, যার মধ্যে লিডসে দুটি সেঞ্চুরি এবং এজবাস্টনে ও লর্ডসে দুটি হাফ-সেঞ্চুরি রয়েছে। তাঁর আক্রমণাত্মক ব্যাটিং এবং উইকেটকিপিং দলের জন্য গুরুত্বপূর্ণ। এর আগে, লর্ডস টেস্টে তিনি আঙুলের চোটের কারণে দ্বিতীয় ইনিংসে উইকেটকিপিং করতে পারেননি, এবং ধ্রুব জুরেল তাঁর জায়গায় দায়িত্ব পালন করেছিলেন।
যদি পন্থ এই টেস্টে আর ব্যাট করতে বা উইকেটকিপিং করতে না পারেন, তবে ধ্রুব জুরেল আবারও উইকেটকিপিংয়ের দায়িত্ব নেবেন। তবে, আইসিসি নিয়ম অনুসারে, জুরেল ব্যাটিংয়ে পন্থের বদলি হিসেবে খেলতে পারবেন না, যা ভারতের ব্যাটিং লাইনআপের জন্য ক্ষতিকর হতে পারে। সাই সুদর্শন, যিনি পন্থের সাথে ৭২ রানের গুরুত্বপূর্ণ জুটি গড়েছিলেন, বলেন, “তিনি তীব্র ব্যথায় ছিলেন। আমরা যদি তাঁকে হারাই, তবে এটি আমাদের জন্য বড় ক্ষতি। তবে, অন্য ব্যাটসম্যানরা তাদের দায়িত্ব পালনের জন্য প্রস্তুত।”
ভারতের ব্যাটিং এবং ম্যাচের অবস্থা
প্রথম দিনে ভারতের ব্যাটিং লাইনআপ শক্ত ভিত্তি গড়ে তুলেছিল। যশস্বী জয়সওয়াল (৫৮) এবং কেএল রাহুল (৪৬) প্রথম সেশনে ৯৪ রানের উদ্বোধনী জুটি গড়েন। তবে, দ্বিতীয় সেশনে শুভমান গিল (১২) এবং রাহুলের বিদায়ে ভারত কিছুটা চাপে পড়ে। সুদর্শন এবং পন্থের ৭২ রানের জুটি দলকে পুনরুদ্ধার করে। সুদর্শন তাঁর প্রথম টেস্ট হাফ-সেঞ্চুরি স্কোর করেন, যা ভারতের জন্য গুরুত্বপূর্ণ ছিল। তবে, পন্থের চোট দলের গতিকে বাধাগ্রস্ত করে।
ইংল্যান্ড অধিনায়ক বেন স্টোকস টস জিতে প্রথমে বোলিং করার সিদ্ধান্ত নেন, যা ওল্ড ট্রাফোর্ডে ঐতিহাসিকভাবে সফল হয়নি। তবে, তাঁর দুটি উইকেট এবং ওকসের বোলিং ভারতকে চাপে রাখে। দিনের শেষে খারাপ আলোর কারণে খেলা বন্ধ হয়ে যায়, এবং ভারত ২৬৪/৪ রানে দিন শেষ করে।
সম্ভাব্য প্রভাব এবং ভবিষ্যৎ
পন্থের চোট যদি গুরুতর হয়, তবে এটি ভারতের জন্য এই সিরিজে বড় ধাক্কা হবে। ইতিমধ্যে নীতিশ কুমার রেড্ডি এবং আকাশ দীপের মতো খেলোয়াড়রা চোটের কারণে সিরিজ থেকে ছিটকে গেছেন। পন্থের অনুপস্থিতি ভারতের ব্যাটিং এবং উইকেটকিপিংয়ে শূন্যতা তৈরি করতে পারে। তবে, আইসিসি নিয়ম অনুসারে, যদি চোটের কারণে পন্থ ইনিংস ত্যাগ করেন, তবে তিনি পরবর্তীতে ব্যাটিংয়ে ফিরতে পারেন, যদি তিনি শারীরিকভাবে সক্ষম হন।
ক্রিকেট বিশ্ব এখন পন্থের স্ক্যানের ফলাফলের জন্য অপেক্ষা করছে। তাঁর দ্রুত সুস্থতার জন্য ভারতীয় ভক্তরা এবং এমনকি ইংল্যান্ডের কিংবদন্তিরা প্রার্থনা করছেন। পন্থের সাহসী এবং আক্রমণাত্মক খেলার স্টাইল তাঁকে বিশ্ব ক্রিকেটে একটি বিশেষ স্থান দিয়েছে, এবং তাঁর ফিরে আসা এই সিরিজের জন্য গুরুত্বপূর্ণ।