৭২ ঘণ্টার কম বিশ্রামে আর ম্যাচ খেলবে না রিয়াল মাদ্রিদ

স্পেনের ফুটবল জায়ান্ট রিয়াল মাদ্রিদ (Real Madrid) একটি বড় সিদ্ধান্ত নিয়েছে। ক্লাবটি ঘোষণা করেছে, এখন থেকে ৭২ ঘণ্টার কম বিশ্রামে তারা আর কোনও ম্যাচ খেলবে…

Real Madrid Refuses to Play Without 72-Hour Rest Between Matches

short-samachar

স্পেনের ফুটবল জায়ান্ট রিয়াল মাদ্রিদ (Real Madrid) একটি বড় সিদ্ধান্ত নিয়েছে। ক্লাবটি ঘোষণা করেছে, এখন থেকে ৭২ ঘণ্টার কম বিশ্রামে তারা আর কোনও ম্যাচ খেলবে না। শনিবার ভিলারিয়ালের বিরুদ্ধে ২-১ গোলে জয়ের পর কোচ কার্লো আনচেলত্তি এই সিদ্ধান্তের বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। এই জয়ের পরও দলের খেলোয়াড়দের শারীরিক অবস্থা নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করে তিনি লা লিগার ম্যাচের সময়সূচির সমালোচনা করেন।

   

গত বুধবার রাত ৯টায় (স্থানীয় সময়) রিয়াল মাদ্রিদ চ্যাম্পিয়ন্স লিগে অ্যাতলেতিকো মাদ্রিদের বিরুদ্ধে একটি কঠিন ম্যাচ খেলে। সেই ম্যাচ ১২০ মিনিট পর্যন্ত গড়ায় এবং পেনাল্টি শ্যুটআউটে শেষ হয়। এরপর শনিবার সন্ধ্যা ৬:৩০টায় (১৭৩০ জিএমটি) ভিলারিয়ালের বিরুদ্ধে লা লিগার ম্যাচে নামতে হয়। দুই ম্যাচের মধ্যে বিশ্রামের সময় ছিল মাত্র ৬৭ ঘণ্টার কিছু বেশি। এই ঘন ঘন ম্যাচের চাপে খেলোয়াড়দের স্বাস্থ্যের উপর বিরূপ প্রভাব পড়ছে বলে দাবি করেছে ক্লাবটি।

ম্যাচ শেষে সাংবাদিক সম্মেলনে আনচেলত্তি বলেন, “এটাই শেষবার আমরা ৭২ ঘণ্টার কম বিশ্রামে খেললাম। এরপর থেকে এমনটা আর হবে না। আমরা লা লিগার কাছে দুইবার এই ম্যাচের সময় পরিবর্তনের অনুরোধ জানিয়েছিলাম, যাতে রবিবার খেলা হয়। কিন্তু তারা কিছুই করেনি। এটা শেষবার।” তিনি স্পষ্ট করে বলেন, ভবিষ্যতে যদি ৭২ ঘণ্টার কম বিশ্রামে ম্যাচের সময় নির্ধারণ করা হয়, তবে রিয়াল মাদ্রিদ মাঠে নামবে না।

ক্লাবটি জানিয়েছে, তারা এই সপ্তাহের ম্যাচের সময়সূচি নিয়ে ফিফার সঙ্গে আলোচনা করবে। রিয়াল মাদ্রিদের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, খেলোয়াড়দের স্বাস্থ্য রক্ষার জন্য এই পদক্ষেপ গ্রহণ করা হচ্ছে। তারা ফিফার কাছে সাহায্য চাইবে, যাতে ভবিষ্যতে এমন সময়সূচি আর না হয়। ফুটবলের নিয়ন্ত্রক সংস্থা ফিফা ২০২৩ সালে সুপারিশ করেছিল, ম্যাচের মধ্যে ন্যূনতম ৭২ ঘণ্টার বিশ্রাম বাধ্যতামূলক করা উচিত। রিয়াল মাদ্রিদ এই নীতির উপর ভিত্তি করে তাদের অবস্থান জোরদার করছে।

ভিলারিয়ালের বিরুদ্ধে জয়ে কিলিয়ান এমবাপের জোড়া গোল দলকে লা লিগার শীর্ষে রেখেছে। তবে আনচেলত্তি জানান, দলের খেলোয়াড়রা শারীরিকভাবে ক্লান্ত। তিনি বলেন, “দ্বিতীয়ার্ধে আমরা অনেক চাপে ছিলাম। দল ক্লান্ত ছিল, কিন্তু এটা স্বাভাবিক। এই জয় আমাদের দলের চরিত্র এবং শক্তির প্রমাণ।” তিনি সময়সূচির জন্য টেলিভিশন সম্প্রচারের অধিকার এবং আর্থিক স্বার্থকে দায়ী করেন। তাঁর মতে, খেলোয়াড়দের বিশ্রামের কথা কেউ ভাবছে না।

এই ঘটনা ফুটবলের ব্যস্ত সময়সূচি নিয়ে দীর্ঘদিনের বিতর্ককে আরও উসকে দিয়েছে। ২০২৪-২৫ মরশুমে নতুনভাবে প্রসারিত ফিফা ক্লাব বিশ্বকাপ যোগ হওয়ায় খেলোয়াড়দের উপর চাপ আরও বেড়েছে। এই টুর্নামেন্টটি ১৫ জুন থেকে ১৩ জুলাই পর্যন্ত অনুষ্ঠিত হবে। এছাড়া চ্যাম্পিয়ন্স লিগের নতুন ফরম্যাটও ম্যাচের সংখ্যা বাড়িয়েছে। এই পরিস্থিতিতে রিয়াল মাদ্রিদের এই সিদ্ধান্ত অন্য ক্লাবগুলোর জন্যও একটি উদাহরণ হতে পারে।

স্থানীয় সময় শনিবার বিকেলে ভিলারিয়ালের মাঠে খেলা শুরুর আগে রিয়াল মাদ্রিদ টিভি এই সিদ্ধান্ত ঘোষণা করে। ক্লাবটি লা লিগার প্রধান জাভিয়ের তেবাসের সমালোচনা করে বলে, এই সময়সূচি খেলোয়াড়দের স্বাস্থ্যের উপর “আক্রমণ”। তারা দাবি করেছে, লা লিগা ম্যাচের সময় নির্ধারণের মাধ্যমে চ্যাম্পিয়নশিপে প্রভাব ফেলছে।

এই ঘটনা ফুটবলপ্রেমীদের মধ্যে ব্যাপক আলোচনার জন্ম দিয়েছে। অনেকে রিয়াল মাদ্রিদের পক্ষে থাকলেও কেউ কেউ মনে করেন, এটি লা লিগার সঙ্গে দ্বন্দ্ব বাড়াতে পারে। তবে খেলোয়াড়দের স্বাস্থ্য রক্ষার এই দাবি ফুটবলের ভবিষ্যত সময়সূচির জন্য গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন তুলেছে।