বার্সেলোনার ব্রাজিলিয়ান তারকা রাফিনহা (Raphinha) ২০২৪-২৫ মরসুমে অসাধারণ পারফরম্যান্স দেখিয়ে ফুটবল বিশ্বে আলোচনার কেন্দ্রে রয়েছেন। ২০২২ সালে লিডস ইউনাইটেড থেকে স্পেনে পা রাখা এই খেলোয়াড় প্রথম দুই মরসুমে নির্ভরযোগ্য পারফরমার হিসেবে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করেছিলেন। কিন্তু চলতি মরসুমে তিনি তাঁর খেলাকে এক নতুন উচ্চতায় নিয়ে গেছেন। এই মরসুমে তিনি ইতিমধ্যেই প্রথম দুই মরসুমে করা গোলের চেয়ে বেশি গোল করে ফেলেছেন। তবে প্রশ্ন উঠছে, রাফিনহার এই দুর্দান্ত পারফরম্যান্স কীভাবে লিওনেল মেসির বার্সেলোনার শেষ মরসুম (২০২০-২১) এর সঙ্গে তুলনা করা যায়? এই প্রতিবেদনে আমরা দুই তারকার পরিসংখ্যানের তুলনা করব এবং দেখব, কে কতটা এগিয়ে।
রাফিনহার ২০২৪-২৫ মরসুম: এক নজরে
রাফিনহা এই মরসুমে সব প্রতিযোগিতায় ৪২টি ম্যাচ খেলে ২৭টি গোল এবং ২০টি অ্যাসিস্ট করেছেন। এর ফলে তাঁর মোট গোল অবদান (গোল + অ্যাসিস্ট) দাঁড়িয়েছে ৪৭-এ। তিনি মাত্র একটি পেনাল্টি থেকে গোল করেছেন, যা তাঁর ওপেন প্লে থেকে গোল করার দক্ষতার প্রমাণ দেয়। পরিসংখ্যান অনুযায়ী, তিনি প্রতি ১২৭.৪ মিনিটে একটি গোল করেছেন, এবং পেনাল্টি বাদ দিলে প্রতি ১৩৫.৯ মিনিটে একটি গোল। তবে তাঁর সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য পরিসংখ্যান হলো গোল বা অ্যাসিস্ট প্রতি ৭৩.২ মিনিটে, যা তাঁর দক্ষতা ও ধারাবাহিকতার প্রতীক।
Also Read | ‘‘যেন চলে যাননি”: ছেত্রীর প্রত্যাবর্তনে টুইটারে উচ্ছ্বাস
রাফিনহা বড় ম্যাচে নিজেকে প্রমাণ করেছেন। রিয়াল মাদ্রিদ, বায়ার্ন মিউনিখ এবং বরুসিয়া ডর্টমুন্ডের মতো দলের বিরুদ্ধে গোল করেছেন তিনি। সম্প্রতি চ্যাম্পিয়ন্স লিগের রাউন্ড অফ ১৬-এর প্রথম লেগে বেনফিকার বিরুদ্ধে ১০ জনের দলে থাকা সত্ত্বেও তিনি একমাত্র গোলটি করে বার্সেলোনাকে ১-০ জয় এনে দিয়েছেন। হান্সি ফ্লিকের অধীনে তিনি দলের গুরুত্বপূর্ণ স্তম্ভ হয়ে উঠেছেন। তবে, ব্যালন ডি’অর জয়ের জন্য বার্সেলোনাকে চ্যাম্পিয়ন্স লিগে অনেক দূর এগোতে হবে এবং কিছু শিরোপা জিততে হবে।
মেসির বার্সেলোনার শেষ মরসুম (২০২০-২১)
লিওনেল মেসি ২০২০-২১ মরসুমে বার্সেলোনার হয়ে সব প্রতিযোগিতায় ৪৭টি ম্যাচ খেলে ৩৮টি গোল এবং ১৪টি অ্যাসিস্ট করেছিলেন। তাঁর মোট গোল অবদান ছিল ৫২, যা রাফিনহার চেয়ে ৫টি বেশি। মেসি সেই মরসুমে ৭টি পেনাল্টি থেকে গোল করেছিলেন, কারণ তিনি দলের প্রধান পেনাল্টি নেওয়ার দায়িত্বে ছিলেন। তাঁর গোল প্রতি মিনিটের হিসেব ছিল ১১০.৩, এবং পেনাল্টি বাদ দিলে ১৩৫.৩ মিনিট। গোল বা অ্যাসিস্ট প্রতি মিনিটের হিসেবে তিনি প্রতি ৮০.৬ মিনিটে অবদান রেখেছিলেন।
মেসির সেই মরসুমটি ছিল বার্সেলোনার জন্য কঠিন সময়ের মধ্য দিয়ে যাওয়া সত্ত্বেও ব্যক্তিগতভাবে দুর্দান্ত। তিনি লা লিগায় ৩০ গোল করে গোল্ডেন বুট জিতেছিলেন এবং কোপা দেল রে জয়ে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছিলেন। তবে, দলগতভাবে বার্সেলোনা চ্যাম্পিয়ন্স লিগে সাফল্য পায়নি, যা মেসির শেষ মরসুমকে কিছুটা ম্লান করে দিয়েছিল।
পরিসংখ্যানের তুলনা: কে এগিয়ে?
মোট গোল অবদানের দিক থেকে মেসি (৫২) এখনও রাফিনহার (৪৭) থেকে এগিয়ে রয়েছেন। তবে, প্রতি মিনিটের দক্ষতার বিচারে রাফিনহা মেসিকে ছাড়িয়ে গেছেন। রাফিনহা প্রতি ৭৩.২ মিনিটে একটি গোল বা অ্যাসিস্ট করছেন, যেখানে মেসির গড় ছিল ৮০.৬ মিনিট। এটি ইঙ্গিত দেয় যে রাফিনহা তাঁর খেলার সময়ের তুলনায় বেশি কার্যকর।
আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো পেনাল্টি। মেসি সেই মরসুমে ৭টি পেনাল্টি গোল করেছিলেন, যা তাঁর মোট গোলের প্রায় ১৮%। অন্যদিকে, রাফিনহার ২৭ গোলের মধ্যে মাত্র ১টি পেনাল্টি, যা তাঁর গোলের মাত্র ৩.৭%। পেনাল্টি বাদ দিলে দুজনের গোল প্রতি মিনিটের হিসেব প্রায় একই—মেসির ১৩৫.৩ এবং রাফিনহার ১৩৫.৯। এটি দেখায় যে ওপেন প্লে থেকে গোল করার ক্ষেত্রে দুজনের দক্ষতা প্রায় সমান।
খেলার ধরন ও প্রভাব
রাফিনহা এবং মেসির খেলার ধরনে পার্থক্য রয়েছে। মেসি তাঁর শেষ মরসুমে দলের প্রধান সৃষ্টিকর্তা এবং গোলদাতা ছিলেন। তিনি গেমের পুরো নিয়ন্ত্রণ নিতেন এবং প্রতিপক্ষের রক্ষণকে ভেঙে দিতেন। অন্যদিকে, রাফিনহা হান্সি ফ্লিকের কৌশলের একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ হিসেবে কাজ করছেন। তিনি দলগত খেলায় বেশি মনোযোগী এবং বড় ম্যাচে নির্ভরযোগ্য। রিয়াল মাদ্রিদ বা বায়ার্নের মতো দলের বিরুদ্ধে তাঁর গোলগুলো বার্সেলোনার জন্য গুরুত্বপূর্ণ মুহূর্তে এসেছে।
মেসির সেই মরসুমে বার্সেলোনা দলগতভাবে অস্থির ছিল, যেখানে রাফিনহা এখন একটি শক্তিশালী এবং সমন্বিত দলের অংশ। ফ্লিকের কৌশলে রাফিনহা, লেভানদোভস্কি এবং লামিনে ইয়ামালের সমন্বয় বার্সেলোনাকে এই মরসুমে দারুণ শুরু করতে সাহায্য করেছে।
ব্যালন ডি’অর সম্ভাবনা
রাফিনহার এই পরিসংখ্যান এবং বড় ম্যাচে পারফরম্যান্স তাঁকে ব্যালন ডি’অরের দৌড়ে রেখেছে। তবে, মেসি সেই মরসুমে ব্যালন ডি’অর জিতেছিলেন, কারণ তিনি লা লিগায় গোল্ডেন বুট এবং আর্জেন্টিনার হয়ে কোপা আমেরিকা জিতেছিলেন। রাফিনহার জন্য এই পুরস্কার জিততে হলে বার্সেলোনাকে চ্যাম্পিয়ন্স লিগে অনেক দূর এগোতে হবে এবং সম্ভবত শিরোপা জিততে হবে। ব্রাজিলের হয়ে আন্তর্জাতিক মঞ্চে তাঁর পারফরম্যান্সও গুরুত্বপূর্ণ হবে।
রাফিনহার ২০২৪-২৫ মরসুম এবং মেসির ২০২০-২১ মরসুমের তুলনা করলে দেখা যায়, মোট গোল অবদানে মেসি এগিয়ে থাকলেও দক্ষতার দিক থেকে রাফিনহা পিছিয়ে নেই। প্রতি মিনিটে গোল বা অ্যাসিস্টের হিসেবে রাফিনহা মেসিকে ছাড়িয়ে গেছেন, যা তাঁর বর্তমান ফর্মের প্রমাণ। মেসির শেষ মরসুম ছিল ব্যক্তিগতভাবে দুর্দান্ত, কিন্তু দলগতভাবে সাফল্য সীমিত ছিল। অন্যদিকে, রাফিনহা এখন একটি শক্তিশালী দলের গুরুত্বপূর্ণ অংশ। এই দুই তারকার পরিসংখ্যান ও প্রভাব ভারতীয় ফুটবল ভক্তদের মধ্যেও আলোচনার বিষয় হয়ে উঠেছে। রাফিনহা যদি এই ধারা বজায় রাখতে পারেন, তবে তিনি বার্সেলোনার ইতিহাসে একটি বিশেষ স্থান করে নিতে পারেন।