World Cup: রুদ্ধশ্বাস ম্যাচে ঘানাকে ৩-২ গোলে হারাল পর্তুগাল

World Cup: তাঁর চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী লিয়োনেল মেসি প্রথম ম্যাচে হেরে গিয়েছেন। তিনি কী করেন, সেটা দেখার অপেক্ষায় ছিল সবাই। ক্রিশ্চিয়ানো রোনাল্ডো এলেন, দেখলেন আর জয় করে…

Portugal

World Cup: তাঁর চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী লিয়োনেল মেসি প্রথম ম্যাচে হেরে গিয়েছেন। তিনি কী করেন, সেটা দেখার অপেক্ষায় ছিল সবাই। ক্রিশ্চিয়ানো রোনাল্ডো এলেন, দেখলেন আর জয় করে নিলেন। পেনাল্টি থেকে তিনি গোল করলেন। এই গ্রহের প্রথম ফুটবলার হিসেবে পাঁচটি বিশ্বকাপেই গোল করার নজির গড়লেন। গোল করার অসম্ভব খিদে দেখাল গেল তাঁর খেলায়।

ঘানার ফুটবলাররা শারীরিক দিক থেকে অনেক শক্তিশালী হলেও রোনাল্ডো ৮৬ মিনিট পর্যন্ত তাঁদের পরীক্ষা নিয়ে গেলেন। অফ দ্য বল মুভমেন্টে বারংবার নজর কাড়লেন। কে বলবে, তিনি তাঁর কেরিয়ারের সায়াহ্নে। প্রথম ম্যাচে রোনাল্ডো বুঝিয়ে দিলেন, শেষ বিশ্বকাপ তিনি মাতাতেই এসেছেন। তাঁর চিরপ্রতিদ্বন্দ্বীর উপরও চাপ বাড়িয়ে রখলেন। যদিও দুই মহাতারকা এক গ্রুপে নেই। কিন্তু মেসি ও রোনাল্ডো বিশ্বের যে কোনও প্রান্তেই খেলুন না কেন, প্রতিযোগিতা তো চলবেই। প্রথম ম্যাচের নিরিখে বিচার করলে রোনাল্ডো অনেক পিছনে ফেলে দিলেন মেসিকে।

রোনাল্ডোকে নিয়ে সরগরম ছিল কাতার। বিশ্বকাপের দুন্দুভি বাজার অনেক আগে থেকেই বিতর্কের কেন্দ্রে ছিলেন পর্তুগিজ তারকা। ম্যাঞ্চেস্টার ইউনাইটেডের বিরুদ্ধে মুখ খুলেছিলেন এক সাক্ষাৎকারে। কাতারে পা রেখেও বিস্ফোরক সাংবাদিক বৈঠক করেছিলেন তিনি। এগুলো তো সব মাঠের বাইরের ঘটনা। মাঠের ভিতরে রোনাল্ডো কেমন খেলেন, সেদিকেই নজর ছিল গোটা বিশ্বের। ঘানার বিরুদ্ধে খেলার দশ মিনিটের মধ্যেই গোল পেয়ে যেতে পারতেন সিআর সেভেন। ঘানার মিস পাস থেকে রোনাল্ডোর কাছে বল যায়। কিন্তু সেযাত্রায় প্রথম টাচটা বেশি হয়ে যাওয়ায় বল নিয়ন্ত্রণ করতে পারেননি তিনি। ঘানার গোলকিপার বিপদের গন্ধ পেয়ে এগিয়ে এসেছিলেন। রোনাল্ডোকে শেই যাত্রায় গোল করতে দেননি ঘানার গোলকিপার লরেন্স।

খেলার তিরিশ মিনিটে রোনাল্ডো ঘানার ডিফেন্ডারকে শরীরে নিয়ে গোল করেও ফেলেছিলেন। কিন্তু রেফারি সেই যাত্রায় ফাউলের বাঁশি বাজান। অবৈধ উপায় অবলম্বন করেছেন রোনাল্ডো, এই অজুহাতে গোল বাতিল করেন রেফারি। কিন্তু দ্বিতীয়ার্ধে রোনাল্ডোই পেনাল্টি আদায় করে নেন। ঘানার পেনাল্টি বক্সের ভিতরে রোনাল্ডোকে ফেলে দেন। রেফারি পেনাল্টি দেন পর্তুগালের অনুকূলে। রেফারির সিদ্ধান্ত নিয়ে প্রতিবাদ জানান ঘানার ফুটবলাররা। বিবিসি-র লাইভ ম্যাচে ইংল্যান্ডের প্রাক্তন ডিফেন্ডার ম্যাথু আপসন লেখেন, আমার মনে হয় ডাইভ দিয়েছে রোনাল্ডো। সে যাই হোক না কেন, পেনাল্টি স্পট হল পৃথিবীর সবচেয়ে রহস্যময় সরণী। কত তারকা এই সরণীতে পথ হারিয়েছেন তার ইয়ত্তা নেই। রোনাল্ডো কিন্তু পথ হারানোর বান্দা নন। পেনাল্টি স্পট থেকে তাঁর জোরালো শট ঘানার জালে জড়িয়ে যায়। এই গোল করার সঙ্গে সঙ্গে বিশ্বকাপের ইতিহাসে নজির গড়লেন রোনাল্ডো। প্রথম ব্যক্তি হিসেবে পাঁচটি বিশ্বকাপেই গোল করলেন পর্তুগিজ তারকা। কাতার রোনাল্ডোর পঞ্চম বিশ্বকাপ। এটাই সম্ভবত তাঁর শেষ বিশ্বকাপ। শেষটায় রাঙিয়ে দিয়ে যাবেন তিনি, এই আশাতেই বুক বাঁধছেন ফুটবলপ্রেমীরা।

কিন্তু পর্তুগাল বেশিক্ষণ গোল ধরে রাখতে পারেনি। রোনাল্ডো পেনাল্টি থেকে গোলটি করেন ৬৫ মিনিটে। ঘানা সমতা ফেরায় ৭৩ মিনিটে। গোলটি আসে আন্দ্রে আইয়ুর পা থেকে। আন্দ্রে আইয়ু ঘানার কিংবদন্তি আবেদি পেলের ছেলে। পর্তুগিজ রক্ষণের দুর্বলতার সুযোগ নিয়ে আন্দ্রে আইয়ু গোল করে যান। গোলটি করার পরেই আইয়ুকে তুলে নেওয়া হয়। ঘানা সমতা ফেরানোর পাঁচ মিনিট পরেই পর্তুগালকে এগিয়ে দেন জোয়াও ফেলিক্স। আন্দ্রে আইয়ু রিজার্ভ বেঞ্চেও বসেননি তখন। দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে দেখেন জোয়াও ফেলিক্স গোল করে যাচ্ছেন। দু’ মিনিট পরেই ফের গোল করে এগিয়ে যায় পর্তুগাল। ঘানার একটা মিস পাস থেকে বল ধরে পর্তুগাল ব্যবধান বাড়ায়। গোলটি করেন রাফায়েল। ৮৭ মিনিটে রোনাল্ডো, জোয়াও ফেলিক্সকে তুলে নেওয়া হয়। তারপরেই ওসমান বুকারি ব্যবধান কমান ঘানার হয়ে। পাঁচ গোলের পর্তুগাল-ঘানা ম্যাচে মশলা কম ছিল না। কিন্তু শেষ হাসি তোলা থাকল ক্রিশ্চিয়ানো রোনাল্ডোর পর্তুগালের জন্যই।