Qatar WC: কুস্তিগীরকে ফাঁসি দিয়েই হিজাব বিরোধী ফুটবলারদের ভয়াল বার্তা ইরানের, কেউ ফোন ধরল না

সুজানা ইব্রাহিম মোহনা, দোহা: বিশ্বকাপ (Qatar WC) কর্মকর্তারা ফিসফাস করছেন। দোহা (Doha) থেকে ক্রমাগত ফোন দিচ্ছি (Tehran) তেহরানে-কেউ ফোন ধরছে না। সব নীরব, নিথর যেন।…

সুজানা ইব্রাহিম মোহনা, দোহা: বিশ্বকাপ (Qatar WC) কর্মকর্তারা ফিসফাস করছেন। দোহা (Doha) থেকে ক্রমাগত ফোন দিচ্ছি (Tehran) তেহরানে-কেউ ফোন ধরছে না। সব নীরব, নিথর যেন। হিজাব বিরোধী ( (Iran Hijab Protest) ইরানি ফুটবলারদের কী হবে? চিন্তা বাড়ছে তার কারণ, দ্বিতীয় যে হিজাব বিদ্রোহীকে ফাঁসি দিল ইসলামি প্রজাতন্ত্র ইরান (Iran) সরকার সেই যুবক মজিদরেজা রাহনাভার্ড (Majid Reza Rahnavard) একজন কুস্তিগীর। তিনি ইরানের হয়ে আন্তর্জাতিক স্তরে কুস্তি প্রতিযেগিতায় নামার প্রশিক্ষণ নিচ্ছিলেন। ইরানের কুস্তি দল বরাবরই নামকরা। আপাতত এটাই বোঝা যাচ্ছে এক প্রতিশ্রুতিবান কুস্তিগীরকে ফাঁসি দিয়ে হিজাব বিরোধী বিশ্বকাপার ফুটবলারদের কঠিন বার্তা দিয়েছে ইরান সরকার।

হিজাব বিরোধী আন্দোলনে অংশ নিয়ে এবার যার ফাঁসি হলো তার নাম মজিদরেজা রাহনাভার্ড। তিনি একজন কুস্তিগীর। তাঁর অনুশীলন ও বাইক স্টান্টের ছবি ভাইরাল হয়ে গেছে পুরো বিশ্বে। মজিদরেজা রাহনাভার্ডেরবিরুদ্ধে দুই নিরাপত্তা কর্মীকে মেরে ফেলার অভিযোগ আনা হয়। ইরান সরকারের দাবি, মৃত্যুদণ্ড কার্যকর হয়েছে। মজিদরেজা রাহনাভার্ড ‘মোহারেবেহ’ বা আল্লাহর বিরুদ্ধে যুদ্ধ করছিল বলে অভিযোগ আনা হয়। ইরানের ধর্মীয় আইনে এই অপরাধের শাস্তি মৃত্যুদণ্ড। 

মজিদরেজা রাহনাভার্ডের আগে গত সপ্তাহে মোহসেন শেকারি নামে ২৩ বছরের এক যুবকের ফাঁসি কার্যকর করা হয় ইরানে। দুজনই হিজাব বিরোধী আন্দোলনে সামিল হয়েছিল।

পরিস্থিতি জানতে দোহা থেকে তেহরানের পরিচিতদের ফোন করেই যাচ্ছি। সবাই চুপ। পারস্য উপসাগরের তীরে আশঙ্কার কালো মেঘ ঘনিয়ে আসছে ফের।

কাতার জুড়েও আলোড়ন। কারণ, ধর্মীয় আইন এই দেশেও আছে। তবে ইরান বা সৌদি আরবের মতো কাতারে অতটা কড়াকড়ি নিয়ম নয়। মোটামুটি আইনটি বাঁচিয়ে চলাচল করা যায়। 

বিশ্বমানব ব্যক্তিত্ব রবীন্দ্রনাথের অনুরাগী হয়ে তাঁকে রাষ্ট্রীয় সম্মান দিয়েছিল ইরানের আইনসভা-মজলিস, সেই আইনসভাতেই মহিলাদের হিজাব বিরোধী ভূমিকাকে দাবিয়ে রাখতে মরিয়া চেষ্টা চলছে। আর নারী অধিকারের পাশে দা়ঁড়ানো ব্যক্তিদের ইরান সরকার এখন পরপর ফাঁসিতে ঝোলাচ্ছে।

বিশ্বকাপের সাংবাদিক সম্মেলনগুলোতে ফিফা কর্মকর্তারা ইরানের বিষয়ে নীরব। তবে তাঁরাও ভিতরে ভিতরে শঙ্কিত। কী হবে ওই বিদ্রোহী বিশ্বকাপার ফুটবলারদের। কারণ, ইরান দলটির ফুটবলাররা এই মুহূর্তে তাদের দেশে ফিরে গেছে। একটা বিষয়ে ইঙ্গিত পেলাম, ফিফা থেকে একটা বার্তা যেতে পারে ইরান সরকারের কাছে যাতে ফুটবলারদের মৃত্যুদণ্ড না দেওয়া হয়। তবে সেটা শোনা বা না শোনার মর্জি ইরান সরকারের। 

কলকাতা ও ঢাকার জনজীবনে যতটা বিশ্বকাপ উন্মাদনা ততটা কি এই নিদারুণ সংবাদ কোনও প্রভাব ফেলছে? দক্ষিণ এশিয়ার দুই গুরুত্বপূর্ণ মহানগরী ও সুষ্ঠু পরিশীলিত মতামত রাখা বাংলাভাষীদের মনে এই বিতর্ক ছাপ ফেলছে? দোহার বাংলাভাষীরা কিন্তু বিষয়টি নিয়ে খুবই চিন্তিত। 

হিজাব ঠিকমতো না পরার কারণে ইরানে নীতি পুলিশের হাতে গ্রেফতার হয়েছিলেন ইরানি-কুর্দিস জাতির মাহশা আমিনি। পুলিশ হেফাজতে তার মৃত্যুর পর থেকে তীব্র হিজাব বিরোধী বিক্ষোভ চলছে ইরানে। সেই বিক্ষোভের রেশ এসেছিল বিশ্বকাপের মাঠে। ইংল্যান্ডের বিরুদ্ধে খেলতে নেমে ইরানি ফুটবলাররা হিজাব বিদ্রোহের সমর্থনে নিজেদের জাতীয় সঙ্গীতের সময় মুখ বন্ধ রেখেছিলেন। প্রবল আলোড়িত হয়েছিল বিশ্ব। পরে চাপের মুখে পরবর্তী ম্যাচগুলিতে তারা জাতীয় সঙ্গীত গেয়েছিলেন। ইরান দল বিশ্বকাপ থেকে বিদায় নিয়ে দেশে ফিরে গেছে। তাদের বিরুদ্ধে মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করার সম্ভাবনা নিয়ে আশঙ্কা বিশ্বজুড়ে। কারণ ইরানের জাতীয় আইনসভা ‘মজলিস’-এ বিদ্রোহীদের মৃত্যুদণ্ড দেওয়ার প্রস্তাব সংখ্যাগরিষ্ঠতার জেরে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে।

বিভিন্ন মানবাধিকার সংগঠনের দাবি, আন্দোলনের বিশালতায় রীতিমতো ভীত ইরান সরকার। ফলে মৃত্যুদণ্ড দিয়ে ভয় দেখানো শুরু হয়েছে। যদিও ইরান সরকারের দাবি, আন্দোলন নয় বিক্ষোভ আসলে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের মদতে দেশে অস্থিরতা তৈরির চেষ্টা ও হিংসাত্মক কার্যাকলাপ চলছে। হিংসায় জড়িতদের শাস্তি দান চলবেই। ইরানের জাতীয় সংবাদ সংস্থা ইরনা জানাচ্ছে, বিক্ষোভের পেছনে বিদেশি শক্তির হাত আছে। আর মানবাধিকার সংস্থাগুলির দাবি সরকারের দমন নীতির কারণে প্রায় ৫০০ জন বিক্ষোভকারী নিহত। ১৮ হাজার গ্রেফতার। কমপক্ষে ১১ জনের বিরুদ্ধে কুখ্যাত ধর্মীয় আইনের বিরোধিতা করার অভিযোগ আনা হয়েছে।

১৯৭৯ সালে রাজতন্ত্র হটানোর আন্দোলনের থেকেও বড়। সেই বিক্ষোভের পর শুধু গণতন্ত্র নয়, জবরদস্তি ইসলামিক প্রজাতন্ত্র তৈরি করা হয়। এই ধর্মভিত্তিক নিয়মের মহিলাদের হিজাব বাধ্যতামূলক ইরানে। সেই হিজাবের বিরুদ্ধেই চলছে তীব্র আন্দোলন।