পাঞ্জাব এফসি (Punjab FC) তাদের প্রধান কোচ প্যানাজিওটিস ডিলমপেরিসের (Panagiotis Dilmperis) সঙ্গে চুক্তি ২০২৭ সাল পর্যন্ত নবায়ন করেছে। ২০২৪-২৫ মরসুমে দলে তাঁর গুরুত্বপূর্ণ অবদান, দলীয় উন্নয়ন ও তরুণ প্রতিভা গড়ে তোলার প্রক্রিয়াকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ায় এই সিদ্ধান্ত নিয়েছে ক্লাব। কোচ ডিলমপেরিসের সঙ্গে তাঁর সহকারী কোচ কনস্টান্টিনোস কাৎসারাস (Konstantinos Katsaras) এবং স্ট্রেংথ অ্যান্ড কন্ডিশনিং কোচ পাপাইওয়ান্নু ইয়োআন্নিস (Papaioannou Ioannis) দলের সঙ্গে থাকছেন। ভারতীয় সহকারী কোচ শঙ্করলাল চক্রবর্তীও আগামী সিজনে তাঁর দায়িত্বে বহাল থাকবেন।
টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপ ফাইনাল মহারণ ফ্রীতে কোথায় দেখবেন? জেনে নিন
গ্রিসের ক্লাব এ.ই. এরমিওনিদা এফসি (A. E. Ermionida FC) থেকে আসার পর, ২০২৪-২৫ মরসুমে পাঞ্জাব এফসিতে যোগ দেন ডিলমপেরিস। তাঁর কোচিংয়ে দল ইন্ডিয়ান সুপার লিগে (ISL) দশম স্থানে শেষ করে, ২৮ পয়েন্ট অর্জন করে। এছাড়া কলিঙ্গ সুপার কাপে কোয়ার্টার ফাইনাল পর্যন্ত পৌঁছায় দলটি, যা ছিল এক বড় অর্জন।
মরসুমের শুরুটা ছিল দারুণ—প্রথম পাঁচ ম্যাচের মধ্যে চারটিতে জয় লাভ করে শেররা। যদিও ইনজুরির কারণে ধারাবাহিকতা কিছুটা ব্যাহত হয়, তবুও দলটি পরবর্তী ১৯ ম্যাচে আরও চারটি জয় এবং চারটি ড্র তুলে নিতে সক্ষম হয়। ডিলমপেরিসের অধীনে দল আক্রমণাত্মক ফুটবলে বিশ্বাস রেখেছে ৩৪টি গোলের মধ্যে ২৮টিই এসেছে ওপেন প্লে থেকে। রক্ষণভাগেও তারা চমক দেখিয়েছে, ম্যাচপ্রতি সর্বোচ্চ ইন্টারসেপশন করে লিগে শীর্ষে থেকেছে।
তবে সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য উন্নতি এসেছে যুব ফুটবলে। ডিলমপেরিসের নেতৃত্বে পাঞ্জাব এফসি ২০২৪-২৫ সিজনে ইন্ডিয়ান সুপার লিগের ‘সেরা এলিট ইয়ুথ প্রোগ্রাম’ পুরস্কার অর্জন করে। ৯ জন একাডেমি গ্র্যাজুয়েট মরসুম প্রথম দলেই খেলেছেন, যার মধ্যে ৬ জনের অভিষেক ঘটেছে তাঁর কোচিংয়ে। পুরো সিজনে কিশোর ও অনূর্ধ্ব-২৩ ফুটবলারদের ৭,৫২২ মিনিট মাঠে রাখা হয়েছে—যা লিগের মধ্যে সর্বোচ্চ।
ম্যাচ কমিশনার তৈরির উদ্যোগ নিল IFA, তিনদিনের ওয়ার্কশপ কলকাতায়
চুক্তি নবায়ন প্রসঙ্গে কোচ ডিলমপেরিস বলেন, “পাঞ্জাব এফসির সঙ্গে এই দারুণ যাত্রা চালিয়ে যেতে পেরে আমি গর্বিত। ক্লাব আমার উপর যে আস্থা রেখেছে, তার জন্য আমি কৃতজ্ঞ। ভারতে কাজ করতে পেরে আমি আনন্দিত। এখানকার খেলোয়াড়দের প্রতিভা এবং কঠোর পরিশ্রম আমাকে মুগ্ধ করেছে। আমার বিশ্বাস, ভারতীয় ফুটবলের সামনে একটি উজ্জ্বল ভবিষ্যৎ অপেক্ষা করছে, এবং আমি গর্বিত যে এই উন্নয়নের অংশ হতে পারছি।”
এ মরসুমে আরও কয়েকটি ব্যক্তিগত অর্জন ক্লাবের গর্ব বাড়িয়েছে। প্রমভীর সিং আইএসএলে সবচেয়ে কম বয়সে মূল একাদশে খেলার রেকর্ড গড়েছেন। সিংগমায়ুম শামী আইএসএলের ইতিহাসে সবচেয়ে কম বয়সে গোল করার নজির গড়েছেন। বিশাল যাদব ও মহম্মদ সুহেইলও নজরে পড়েছেন—তারা তৃতীয় সর্বকনিষ্ঠ ডেবিউ এবং অ্যাসিস্টদাতা হিসেবে ইতিহাসে নাম লিখিয়েছেন।
সবচেয়ে বড় অর্জনের মধ্যে রয়েছে—অভিষেক সিং ও নিখিল প্রভুর জাতীয় দলের ডাক পাওয়া। পাঞ্জাব এফসি থেকে এই প্রথমবার কেউ ভারতীয় জাতীয় ফুটবল দলে সুযোগ পেলেন।
ক্লাবের ফুটবল পরিচালক নিকোলাওস তোপোলিয়াতিস বলেন, “আমরা আনন্দিত যে কোচিং স্টাফকে দীর্ঘমেয়াদে ধরে রাখতে পেরেছি। ডিলমপেরিস, কনস্টান্টিনোস এবং পাপাইওয়ান্নু দলে পেশাদারিত্ব, বিশ্বাস এবং মনোযোগ এনেছেন। কোচের পরিকল্পনা আমাদের ক্লাবের দর্শনের সঙ্গে মিলে যায়—বিশেষ করে যুব উন্নয়নের ক্ষেত্রে। আমরা আত্মবিশ্বাসী যে তিনি ভবিষ্যতেও একই রকম নিষ্ঠা ও আবেগ নিয়ে দলকে নেতৃত্ব দেবেন।”
ডিলমপেরিসের অধীনে, পাঞ্জাব এফসি কেবল ফলাফল নয়, বরং ভবিষ্যতের জন্য শক্ত ভিত্তি তৈরি করেছে। তাঁর দীর্ঘমেয়াদী উপস্থিতি ক্লাবের যুব উন্নয়ন, কাঠামোগত অগ্রগতি এবং ভারতীয় ফুটবলের সামগ্রিক উন্নয়নে বড় ভূমিকা রাখবে বলেই ধারণা করা হচ্ছে।