জামশেদপুরকে হারিয়ে এআইএফএফ ইউ-১৭ লিগে চ্যাম্পিয়ন পাঞ্জাব এফসি

পাঞ্জাব এফসি (পিএফসি) ইন্দিরা গান্ধী অ্যাথলেটিক স্টেডিয়ামে অনুষ্ঠিত এআইএফএফ ইউ-১৭ এলিট ইয়ুথ লিগ ২০২৪-২৫-এর (AIFF Elite Youth League) ফাইনালে জামশেদপুর এফসিকে ৪-১ গোলে পরাজিত করে…

Punjab FC crowned the kings of AIFF U-17 Elite Youth League

পাঞ্জাব এফসি (পিএফসি) ইন্দিরা গান্ধী অ্যাথলেটিক স্টেডিয়ামে অনুষ্ঠিত এআইএফএফ ইউ-১৭ এলিট ইয়ুথ লিগ ২০২৪-২৫-এর (AIFF Elite Youth League) ফাইনালে জামশেদপুর এফসিকে ৪-১ গোলে পরাজিত করে শিরোপা জয় করেছে। প্রথমার্ধে মাত্র ১১ মিনিটের মধ্যে কারিশ সোরাম, আশিস লোহার, বিকাশ কিস্কু এবং উশাম থৌঙ্গাম্বা সিংয়ের গোলগুলো পাঞ্জাব এফসির জয় নিশ্চিত করেছে। এই জয় ভারতীয় ফুটবলের যুব পর্যায়ে পাঞ্জাব এফসির আধিপত্য প্রতিষ্ঠা করেছে এবং দেশের ভবিষ্যৎ ফুটবল তারকাদের উত্থানের একটি উজ্জ্বল উদাহরণ হয়ে উঠেছে।

পাঞ্জাব এফসির দুর্দান্ত যাত্রা
পাঞ্জাব এফসি, কোচ রমেশ গঙ্গারাম বিস্তার নেতৃত্বে, টুর্নামেন্টের জোনাল রাউন্ডে শীর্ষে থেকে ফাইনাল রাউন্ডে উত্তীর্ণ হয়েছিল। জোনাল রাউন্ডে তারা দশটি ম্যাচ খেলে সাতটিতে জয়, দুটিতে ড্র এবং মাত্র একটি ম্যাচে হেরেছিল। এই পর্যায়ে তারা দিল্লি এফসি, সুদেবা দিল্লি এফসি, ভাইচুং ভুটিয়া ফুটবল স্কুল, মিনার্ভা অ্যাকাডেমি এফসি এবং শ্রী দশমেশ মার্শাল স্পোর্টস অ্যাকাডেমির মতো শক্তিশালী দলের মুখোমুখি হয়েছিল। ৪০টি গোল করে এবং মাত্র চারটি গোল হজম করে তারা তাদের গ্রুপে শীর্ষস্থান অর্জন করে।

   

ফাইনাল রাউন্ডের প্লে-অফে পাঞ্জাব এফসি তিনটি ম্যাচের মধ্যে দুটিতে জয়লাভ করে নকআউট পর্বে জায়গা করে নেয়। তারা সুদেবা দিল্লির বিরুদ্ধে ৫-০ এবং এফসি গোয়ার বিরুদ্ধে ৬-০ গোলে জয়লাভ করে তাদের আধিপত্য প্রদর্শন করে। তবে, এআইএফএফ ফিফা ট্যালেন্ট অ্যাকাডেমির বিরুদ্ধে তারা একটি রোমাঞ্চকর ৪-৫ গোলের ম্যাচে পরাজিত হয়েছিল, যা টুর্নামেন্টের সবচেয়ে গোলবহুল ম্যাচগুলির একটি ছিল। কোয়ার্টার ফাইনালে তারা বেঙ্গল ফুটবল অ্যাকাডেমিকে ৬-২ গোলে এবং সেমিফাইনালে এফসি মাদ্রাসকে ৩-২ গোলে পরাজিত করে ফাইনালে উঠে।

ফাইনাল ম্যাচের হাইলাইটস
ফাইনাল ম্যাচে পাঞ্জাব এফসি শুরু থেকেই আক্রমণাত্মক মনোভাব প্রদর্শন করে। ২৮তম মিনিটে কারিশ সোরাম একটি শান্ত এবং নিখুঁত ফিনিশের মাধ্যমে স্কোরিং শুরু করেন, যা ম্যাচের গতিপথ নির্ধারণ করে। ছয় মিনিট পরে, আশিস লোহার জামশেদপুরের রক্ষণের ত্রুটির সুযোগ নিয়ে দ্বিতীয় গোলটি করেন। ৩৭তম মিনিটে বিকাশ কিস্কু বক্সের মধ্যে দুর্দান্ত কন্ট্রোলের মাধ্যমে তৃতীয় গোলটি করেন, এবং ৩৯তম মিনিটে উশাম থৌঙ্গাম্বা সিং একটি ক্লিনিকাল স্ট্রাইকের মাধ্যমে চতুর্থ গোলটি করে ম্যাচের ফলাফল প্রায় নিশ্চিত করে ফেলেন। জামশেদপুর এফসি দ্বিতীয়ার্ধে একটি গোল ফিরিয়ে দিলেও, পাঞ্জাব এফসির রক্ষণ এবং কৌশলগত শৃঙ্খলা তাদের জয় নিশ্চিত করে।

জামশেদপুর এফসি তাদের ফাইনালে পৌঁছানোর পথে চিত্তাকর্ষক পারফরম্যান্স প্রদর্শন করেছিল। তারা প্লে-অফে মুম্বাই সিটির বিরুদ্ধে ৪-০ গোলে জয় এবং ফুটবল ফর চেঞ্জ অ্যাকাডেমির সঙ্গে ২-২ গোলে ড্র করে। ফাইনাল রাউন্ডে, তারা ক্লাসিক এফসির সঙ্গে ২-২ ড্র, করবেট এফসির বিরুদ্ধে ১-০ জয় এবং মুথুট ফুটবল অ্যাকাডেমির কাছে ০-১ হারের মাধ্যমে কোয়ার্টার ফাইনালে উঠে। কোয়ার্টার ফাইনালে তারা নর্থইস্ট ইউনাইটেডকে ২-১ গোলে এবং সেমিফাইনালে এআইএফএফ ফিফা ট্যালেন্ট অ্যাকাডেমিকে ৫-০ গোলে পরাজিত করে ফাইনালে জায়গা করে। তবে, ফাইনালে পাঞ্জাব এফসির প্রথমার্ধের আধিপত্য তাদের ছাড়িয়ে যাওয়া সম্ভব হয়নি।

Advertisements

কোচিং এবং দলের শক্তি
কোচ রমেশ গঙ্গারাম বিস্তার নেতৃত্বে পাঞ্জাব এফসি একটি সুশৃঙ্খল এবং আক্রমণাত্মক দল হিসেবে নিজেদের প্রমাণ করেছে। জোনাল রাউন্ডে তারা ৪০টি গোল করেছে, যা তাদের আক্রমণের শক্তি প্রদর্শন করে। তাদের খেলোয়াড়রা, বিশেষ করে কারিশ সোরাম, আশিস লোহার, এবং বিকাশ কিস্কু, টুর্নামেন্ট জুড়ে ধারাবাহিকভাবে গোল করেছেন। সেমিফাইনালে এফসি মাদ্রাসের বিরুদ্ধে ১-২ গোলে পিছিয়ে থেকেও তারা ম্যাচটি ৩-২ গোলে জিতে তাদের মানসিক শক্তি এবং দলগত ঐক্য প্রদর্শন করেছে।

ভারতীয় ফুটবলে তাৎপর্য
এই জয় ভারতীয় ফুটবলের যুব পর্যায়ে পাঞ্জাব এফসির ক্রমবর্ধমান প্রভাবের প্রমাণ। এআইএফএফ ইউ-১৭ এলিট ইয়ুথ লিগ ভারতের ভবিষ্যৎ ফুটবল তারকাদের বিকাশের একটি গুরুত্বপূর্ণ প্ল্যাটফর্ম। এই টুর্নামেন্টে ৭১টি ক্লাব এবং অ্যাকাডেমি অংশ নিয়েছিল, যেখানে শীর্ষ ১৬টি দল ফাইনাল রাউন্ডে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেছিল। পাঞ্জাব এফসির এই সাফল্য তাদের অ্যাকাডেমির শক্তিশালী কাঠামো এবং প্রতিভা বিকাশের প্রতি প্রতিশ্রুতি প্রতিফলিত করে।

জামশেদপুর এফসির জন্যও এই টুর্নামেন্ট একটি ঐতিহাসিক মুহূর্ত। এটি প্রথমবারের মতো জামশেদপুর এফসি বা তাদের সংশ্লিষ্ট টাটা ফুটবল অ্যাকাডেমি এই লিগের ফাইনালে পৌঁছেছে। তাদের তরুণ খেলোয়াড়রা, বিশেষ করে সেমিফাইনালে এআইএফএফ ফিফা ট্যালেন্ট অ্যাকাডেমির বিরুদ্ধে ৫-০ গোলের জয়ে, তাদের সম্ভাবনা প্রদর্শন করেছে। যদিও তারা ফাইনালে জয়লাভ করতে পারেনি, তাদের এই যাত্রা ভারতীয় ফুটবলের যুব পর্যায়ে একটি উজ্জ্বল ভবিষ্যৎ নির্দেশ করে।

পাঞ্জাব এফসির এআইএফএফ ইউ-১৭ এলিট ইয়ুথ লিগ ২০২৪-২৫-এর শিরোপা জয় তাদ tain তরুণ খেলোয়াড়দের প্রতিভা, কোচিং স্টাফের কৌশলগত দক্ষতা এবং দলের অটুট ঐক্যের প্রমাণ। ফাইনালে জামশেদপুর এফসির বিরুদ্ধে তাদের প্রথমার্ধের আধিপত্য এবং টুর্নামেন্ট জুড়ে ধারাবাহিক পারফরম্যান্স তাদের এই শিরোপার যোগ্য প্রার্থী করে তুলেছে। এই জয় ভারতীয় ফুটবলের ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য একটি অনুপ್ರেরণা হিসেবে কাজ করবে এবং দেশের যুব ফুটবল বিকাশের ক্ষেত্রে পাঞ্জাব এফসির গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা তুলে ধরবে।