আইপিএল অভিষেকে ব্যাটিংয়ের ঝলক দেখালেন প্রিয়াংশ

আমদাবাদের নরেন্দ্র মোদী স্টেডিয়ামে মঙ্গলবার আইপিএল ২০২৫-এর (IPL 2025) উদ্বোধনী ম্যাচে গুজরাট টাইটান্সের (Gujarat Titans) বিরুদ্ধে পাঞ্জাব কিংসের (Punjab Kings) হয়ে অভিষেক ম্যাচে দুর্দান্ত পারফরম্যান্স…

Priyansh Arya Impresses on IPL Debut for Punjab Kings with Explosive Knock

আমদাবাদের নরেন্দ্র মোদী স্টেডিয়ামে মঙ্গলবার আইপিএল ২০২৫-এর (IPL 2025) উদ্বোধনী ম্যাচে গুজরাট টাইটান্সের (Gujarat Titans) বিরুদ্ধে পাঞ্জাব কিংসের (Punjab Kings) হয়ে অভিষেক ম্যাচে দুর্দান্ত পারফরম্যান্স দেখিয়েছেন ২৪ বছর বয়সী বাঁ-হাতি ওপেনার প্রিয়াংশ আর্য (Priyansh Ary)। দিল্লির এই তরুণ ক্রিকেটার গত বছর আইপিএল ২০২৫-এর মেগা নিলামে পাঞ্জাব কিংসের কাছে ৩.৮ কোটি টাকায় বিক্রি হয়েছিলেন। তাঁর প্রতি দলের ম্যানেজমেন্টের ভরসার প্রতিদান তিনি দিয়েছেন প্রথম ম্যাচেই।

Also Read | বেঙ্গালুরুর কাছে লজ্জাজনক হারের পর মরশুমের প্রথম জয় চায় নাইট বাহিনী 

   

প্রভসিমরন সিংয়ের সঙ্গে ইনিংস ওপেন করতে নেমে প্রিয়াংশ প্রথম ওভার থেকেই নিজের ক্লাস দেখিয়েছেন। যদিও প্রভসিমরন খুব তাড়াতাড়ি আউট হয়ে যান—মাত্র ৮ বলে ৫ রান করে—প্রিয়াংশ কিন্তু গুজরাট টাইটান্সের বিশ্বমানের বোলারদের মোকাবিলায় একটুও পিছপা হননি। মোহাম্মদ সিরাজ, কাগিসো রাবাদা এবং রশিদ খানের মতো বোলারদের বিরুদ্ধে তিনি অসাধারণ দক্ষতা ও আত্মবিশ্বাসের সঙ্গে ব্যাটিং করেছেন।

Advertisements

মাত্র ২৩ বলে ৪৭ রানের একটি ঝড়ো ইনিংস খেলেন প্রিয়াংশ। তাঁর এই ইনিংসে ছিল ৭টি চার এবং ২টি ছক্কা। তাঁর এই বিস্ফোরক ব্যাটিংয়ের সুবাদে পাঞ্জাব কিংস পাওয়ারপ্লে-র শেষে ৭৩ রান তুলতে সক্ষম হয়। দুর্ভাগ্যবশত, পাওয়ারপ্লে শেষ হওয়ার পরপরই রশিদ খানের একটি গুগলিতে ফেঁসে যান প্রিয়াংশ। তিনি বলটি সাই সুদর্শনের হাতে তুলে দেন, যিনি কভারে একটি সহজ ক্যাচ নেন। তবে এই সংক্ষিপ্ত ইনিংসেই প্রিয়াংশ তাঁর সম্ভাবনার ঝলক দেখিয়ে দিয়েছেন।

দিল্লির হয়ে ঘরোয়া ক্রিকেটে প্রিয়াংশ আর্য একজন ধারাবাহিক পারফর্মার হলেও, তাঁর প্রকৃত প্রতিভা সবার নজরে আসে দিল্লি প্রিমিয়ার লিগ (ডিপিএল)-এর প্রথম আসরে। গত বছর এই টুর্নামেন্টে তিনি দক্ষিণ দিল্লি সুপারস্টারজের হয়ে খেলেছিলেন এবং দলের সবচেয়ে উজ্জ্বল তারকা হিসেবে আবির্ভূত হন। ১০টি ইনিংসে ৬০৮ রান করে তিনি টুর্নামেন্টের সর্বোচ্চ রান সংগ্রাহক হন। এছাড়াও, তিনি ডিপিএল-এ সর্বাধিক দুটি শতরান করেন এবং ৫০ বলে ১২০ রানের একটি অবিশ্বাস্য ইনিংস খেলেন, যেখানে তিনি এক ওভারে ছয়টি ছক্কা হাঁকিয়ে সবার দৃষ্টি আকর্ষণ করেন। এই ইনিংসটি আইপিএল স্কাউট এবং নির্বাচকদের মনোযোগ কেড়ে নেয় এবং তাঁর আইপিএল চুক্তির পথ প্রশস্ত করে।

Also Read | বিশ্ব ক্রীড়ায় নতুন সম্ভাবনার দ্বার খুলতে জয় শা-ফিফা প্রধান বৈঠক

প্রিয়াংশ আর্যের আইপিএল অভিষেকে তাঁর এই বিস্ফোরক ব্যাটিং দেখে ক্রিকেটপ্রেমীদের মধ্যে উৎসাহের সীমা নেই। তাঁর দ্রুত রান তোলার ক্ষমতা এবং বড় বড় শট খেলার সাহসিকতা তাঁকে একজন বিশেষ প্রতিভা হিসেবে চিহ্নিত করেছে। পাওয়ারপ্লে-তে তাঁর ৪৭ রানের ইনিংস পাঞ্জাব কিংসকে ম্যাচে শক্ত ভিত গড়ে দিয়েছে। যদিও তিনি অর্ধশতরান করতে পারেননি, তাঁর এই ইনিংসে যে আগ্রাসী মনোভাব এবং প্রতিভার ছাপ রয়েছে, তা অবশ্যই প্রশংসনীয়।

পাঞ্জাব কিংসের টিম ম্যানেজমেন্ট এই তরুণ খেলোয়াড়ের উপর ভরসা রেখেছিল, এবং প্রিয়াংশ তাদের সেই ভরসার মর্যাদা রেখেছেন। তাঁর ব্যাটিং শৈলীতে আধুনিক টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটের সব গুণ রয়েছে—দ্রুত স্কোর করার ক্ষমতা, বোলারদের উপর চাপ সৃষ্টি করা এবং দর্শকদের মনোরঞ্জন করা। গুজরাট টাইটান্সের মতো শক্তিশালী দলের বিরুদ্ধে প্রথম ম্যাচে এমন পারফরম্যান্স তাঁর আত্মবিশ্বাস এবং সম্ভাবনার প্রমাণ দেয়।

এই অভিষেক ম্যাচের পর প্রিয়াংশ আর্যের উপর সবার নজর থাকবে। তিনি কি এই লাল-গরম ফর্ম ধরে রাখতে পারবেন? পাঞ্জাব কিংসের হয়ে তিনি কি নিয়মিত পারফর্মার হয়ে উঠতে পারবেন? এই প্রশ্নগুলো এখন ক্রিকেটপ্রেমীদের মনে ঘুরছে। দিল্লি প্রিমিয়ার লিগে তাঁর অসাধারণ পারফরম্যান্স এবং আইপিএল-এ এই দুর্দান্ত শুরু দেখে মনে হচ্ছে, প্রিয়াংশের মধ্যে একজন বড় তারকা হওয়ার সমস্ত গুণ রয়েছে।

পাঞ্জাব কিংসের জন্য এই মরশুমে প্রিয়াংশ একজন গুরুত্বপূর্ণ খেলোয়াড় হয়ে উঠতে পারেন। তাঁর ব্যাটিংয়ের এই আগ্রাসী শৈলী দলের ওপেনিং জুটিকে শক্তিশালী করবে এবং বড় রান তোলার পথ সুগম করবে। তবে, তাঁকে আরও ধারাবাহিক হতে হবে এবং বড় ইনিংস খেলার ক্ষমতা দেখাতে হবে। রশিদ খানের মতো স্পিনারদের বিরুদ্ধে তিনি যেভাবে ফেঁসে গেলেন, সেখান থেকে শিক্ষা নিয়ে নিজেকে আরও উন্নত করতে হবে।

বাংলার ক্রিকেটপ্রেমীরাও প্রিয়াংশ আর্যের এই অভিষেকে মুগ্ধ। অনেকেই বলছেন, এই তরুণ খেলোয়াড়ের মধ্যে ভবিষ্যতের একজন বড় তারকা লুকিয়ে রয়েছে। আইপিএল-এর মতো বড় মঞ্চে এমন শুরু তাঁর ক্যারিয়ারের জন্য একটি শুভ সংকেত। বাংলার ক্রিকেট ভক্তরা এখন অপেক্ষায় রয়েছেন, প্রিয়াংশ কীভাবে এই মরশুমে নিজেকে প্রমাণ করেন এবং পাঞ্জাব কিংসকে সাফল্যের পথে এগিয়ে নিয়ে যান।

শেষ পর্যন্ত, প্রিয়াংশ আর্যের এই আইপিএল অভিষেক প্রমাণ করে যে, তরুণ প্রতিভারা যখন সুযোগ পায়, তখন তারা নিজেদের দক্ষতা দিয়ে সবাইকে চমকে দিতে পারে। এখন দেখার বিষয়, তিনি কীভাবে এই শুরুর ধারাবাহিকতা বজায় রাখেন এবং পাঞ্জাব কিংসের হয়ে একজন নির্ভরযোগ্য তারকা হয়ে ওঠেন।