সোমবার সন্ধ্যায় কলকাতার যুবভারতী ক্রীড়াঙ্গনে অনুষ্ঠিত আইএসএল ম্যাচে দুর্বল ইমামি ইস্টবেঙ্গলকে (East Bengal) পরাজিত করে জয় পেয়েছে মুম্বাই সিটি এফসি। তাদের এই জয়ে সবচেয়ে বড় ভূমিকা রেখেছেন বাঙালি তারকা প্রবীর দাস (Prabir Das)। যদিও পুরো ম্যাচটি ছিলো অনেক চ্যালেঞ্জিং, তবুও মুম্বাই সিটির (Mumbai City FC) খেলোয়াড়রা দৃঢ় মনোভাব নিয়ে লড়াই চালিয়ে গেছেন এবং এক গোলের ব্যবধানে জয় ছিনিয়ে নিয়েছে।
এই জয়ের পর, প্রবীর দাস সাংবাদিকদের মুখোমুখি হয়ে অনুভূতি প্রকাশ করেন এবং বলেন, “আগের বছরটা আমার জন্য ভালো যায়নি। একাধিক চোটের সমস্যায় ভুগতে হয়েছিল। কিন্তু এখন আমি ভালো আছি, সম্পূর্ণ সুস্থ, এবং এই ম্যাচে জয় আমাদের দলের জন্য গুরুত্বপূর্ণ ছিল। কেরালা থেকে মুম্বাই সিটি এফসিতে যোগ দিয়েছি এবং এটি আমার নতুন পথচলা। আজকের জয় আমাদের আত্মবিশ্বাস আরও বাড়িয়ে দিয়েছে।”
এই ম্যাচে মুম্বাই সিটি প্রথমার্ধে ২-০ গোলে এগিয়ে যায়। তাদের দুই গোলের মধ্যে একটি ছিল লালিয়ানজুয়ালা ছাংতের এবং আরেকটি ছিল নিকোলাওস কারেলিসের। ম্যাচের প্রথম অর্ধে এই লিড দেখে অনেকেই ধারণা করেছিলেন যে মুম্বাই সিটি সহজেই জয় নিশ্চিত করবে। কিন্তু দ্বিতীয়ার্ধে ইস্টবেঙ্গল তাদের খেলা পাল্টে দিতে সক্ষম হয়।
দ্বিতীয়ার্ধে ইস্টবেঙ্গলের ফুটবলাররা মাঠে নিজেদের উপস্থিতি টের পাড়েন এবং প্রতিপক্ষের ডিফেন্সে চাপ বাড়াতে শুরু করেন। বিশেষত, দ্বিতীয়ার্ধের পঞ্চম কোয়ার্টারে এক আত্মঘাতী গোলের ফলে ইস্টবেঙ্গল তাদের ব্যবধান কমিয়ে দেয়। এরপর, ডেভিড লালহানসাঙ্গার অসাধারণ গোলটি ম্যাচটিকে সমতায় নিয়ে আসে। এর পরেই মশাল ব্রিগেডের সমর্থকরা ব্যাপকভাবে খুশি হয়ে ওঠে।
কিন্তু মুম্বাই সিটি জানিয়ে দেয়, তাদের আক্রমণভাগ এখনও একেবারে শক্তিশালী। শেষ মুহূর্তে তাদের আক্রমণকারীরা সুযোগ নিয়ে ব্যবধান বাড়িয়ে দেয় এবং ম্যাচে তাদের জয় নিশ্চিত করে। ইস্টবেঙ্গল আক্রমণভাগ চেষ্টা করলেও ডিফেন্ডারদের দুর্বলতার কারণে আর ম্যাচে ফেরার সুযোগ পায়নি।
এই জয়ে মুম্বাই সিটির জন্য একটি নতুন অধ্যায় শুরু হয়েছে। প্রবীর দাসের জন্যও এটি ছিল একটি বিশেষ মুহূর্ত। কারণ, কেরালায় তার প্রাক্তন দল কেরালা ব্লাস্টার্সে চোটের কারণে তিনি মাঠে খুব বেশি সময় কাটাতে পারেননি। তবে মুম্বাই সিটির জয়ে প্রবীর দাসের আত্মবিশ্বাস বেড়ে গেছে এবং দলের সঙ্গে এই জয়ে তার অংশগ্রহণ তাকে আরও বেশি আত্মবিশ্বাসী করে তুলেছে।
মুম্বাই সিটির জয়ের পর, প্রবীর দাস কলকাতা ডার্বি সম্পর্কে সাংবাদিকদের প্রশ্নের উত্তর দেন। তিনি বলেন, “ডার্বি ম্যাচ সব সময় কঠিন। আমি মোহনবাগান সমর্থকদের শুভেচ্ছা জানিয়ে গেলাম। এক সময় আমি এই দলের হয়ে খেলেছি এবং তাদের প্রতি আমার বিশেষ অনুভূতি রয়েছে। মোহনবাগান সমর্থকদের আমি ভালোবাসি। আমি চাই তারা ডার্বি জিতুক।”
এই মন্তব্যে প্রবীর দাসের ক্রীড়াবিদ মনের খোলামেলা অনুভূতি ফুটে উঠেছে। তিনি কলকাতা ডার্বির প্রতি তাঁর শ্রদ্ধা ও ভালোবাসা প্রকাশ করেছেন, যদিও তিনি বর্তমানে মুম্বাই সিটির সদস্য। প্রবীর দাস কলকাতা ডার্বির মতো বড় ম্যাচের আগে সবার মনোভাব অত্যন্ত পজিটিভ রাখতে চেয়েছেন।
এছাড়া, প্রবীর আরও বলেন, “এ বছরের শুরুটা খুব ভালো হয়েছে। এই গুরুত্বপূর্ণ ম্যাচটি জিতে আমরা ভালো ধারায় রয়েছি এবং আশা করি ডার্বিতেও আমাদের ভালো ফলাফল হবে। মুম্বাই সিটির দল এখন আত্মবিশ্বাসী এবং আমাদের লক্ষ্য আরও বড়।”
মুম্বাই সিটির জন্য ম্যাচটি ছিল গুরুত্বপূর্ণ, কারণ গত বছর তারা আইএসএল চ্যাম্পিয়ন হয়েছিল এবং এবছরও তাদের লক্ষ্য শিরোপা ধরে রাখা। প্রবীর দাসের যোগদান মুম্বাই সিটির দলে এক নতুন দিশা এনে দিয়েছে এবং তার অভিজ্ঞতা দলের জন্য কার্যকর হতে পারে।
প্রবীর দাসের কথায়, “প্রথমবার মুম্বাই সিটির জয়ে বড় ভূমিকা পালন করতে পেরে আমি আনন্দিত। তবে ডার্বির সময় আমাদের কঠোর পরিশ্রম করতে হবে। আমি আশাবাদী যে আমরা ডার্বি ম্যাচে ভালো খেলবো।”
এই জয়ের পর, মুম্বাই সিটি দলের সদস্যরা যে আত্মবিশ্বাসী হয়ে উঠেছে, তা স্পষ্ট। দ্বিতীয়ার্ধে তাদের বিপক্ষে ইস্টবেঙ্গলের চ্যালেঞ্জ সত্ত্বেও তারা তাদের পরিকল্পনা ঠিক রেখে ম্যাচটি জিততে সক্ষম হয়েছে। তবে ইস্টবেঙ্গলের জন্য এটা ছিল একটি কঠিন মুহূর্ত, বিশেষত তাদের ডিফেন্ডারদের দুর্বলতা এবং আত্মঘাতী গোলের কারণে।
এখন মুম্বাই সিটি সামনে কলকাতা ডার্বির দিকে তাকিয়ে, যেখানে তারা তাদের জয়ের ধারাকে আরও শক্তিশালী করতে চাইবে। ইস্টবেঙ্গলও এই পরাজয়ের পর সামনের ডার্বিতে আরও কঠোর মনোভাব নিয়ে মাঠে নামবে।
ম্যাচের পর, মুম্বাই সিটির অধিনায়ক এবং প্রবীর দাস জানান যে তারা ভবিষ্যতে আরও কঠোর লড়াইয়ের জন্য প্রস্তুত এবং তাদের এই জয় তাদের নতুন লক্ষ্য অর্জনে সহায়ক হবে।