ভারতীয় ক্রিকেট দলকে পাকিস্তানের চেয়ে শ্রেষ্ঠ বললেন মোদী

নয়াদিল্লি, ১৬ মার্চ ২০২৫: প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী (Narendra Modi) বলেছেন, তিনি নিজেকে ক্রিকেট বিশেষজ্ঞ মনে করেন না, তবে সাম্প্রতিক ফলাফল প্রমাণ করে যে ভারতীয় ক্রিকেট…

PM Narendra Modi Indian Cricket Team Superior to Pakistan in Recent Results

short-samachar

নয়াদিল্লি, ১৬ মার্চ ২০২৫: প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী (Narendra Modi) বলেছেন, তিনি নিজেকে ক্রিকেট বিশেষজ্ঞ মনে করেন না, তবে সাম্প্রতিক ফলাফল প্রমাণ করে যে ভারতীয় ক্রিকেট দল পাকিস্তানের চেয়ে শ্রেষ্ঠ। রবিবার আমেরিকান জনপ্রিয় পডকাস্টার লেক্স ফ্রিডম্যানের সঙ্গে একটি মুক্ত আলোচনায় তিনি এই মত প্রকাশ করেন। মোদী এই সাক্ষাৎকারে খেলাধুলার গুরুত্ব তুলে ধরে বলেন, এটি মানুষের মধ্যে একতা ও সম্প্রীতি আনতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।

   

এই আলোচনায় মোদী ক্রিকেটের পাশাপাশি ফুটবল নিয়েও কথা বলেন। তাকে যখন প্রশ্ন করা হয়, সর্বকালের সেরা ফুটবলার কে, তিনি বলেন, ১৯৮০-এর দশকে ডিয়েগো মারাদোনা একজন কিংবদন্তি হিসেবে বিবেচিত হতেন, কিন্তু আধুনিক যুগে লিওনেল মেসির জনপ্রিয়তা অতুলনীয়। এই মন্তব্য ভারতের প্রধানমন্ত্রীর ক্রীড়া জগতের প্রতি আগ্রহ এবং তার পর্যবেক্ষণের গভীরতা প্রকাশ করে।

মোদী বলেন, “আমি ক্রিকেটের বিশেষজ্ঞ নই, তবে সাম্প্রতিক ফলাফলের দিকে তাকালে দেখা যায়, ভারত পাকিস্তানের চেয়ে ভালো দল।” গত কয়েক বছরে ভারত এবং পাকিস্তানের মধ্যে ক্রিকেটীয় লড়াইয়ে ভারত প্রায়শই আধিপত্য বিস্তার করেছে। ২০২৩ সালের ওয়ানডে বিশ্বকাপে ভারত পাকিস্তানকে ৭ উইকেটে হারিয়েছিল। এছাড়া ২০২৪ সালের টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে ভারত পাকিস্তানের বিরুদ্ধে ৬ রানে জয় ছিনিয়ে নেয় এবং সেই টুর্নামেন্টে শিরোপাও জিতে।

অন্যদিকে, পাকিস্তানের পারফরম্যান্স অস্থির ছিল। সম্প্রতি তারা দক্ষিণ আফ্রিকার কাছে টেস্ট সিরিজে হেরেছে এবং ঘরের মাঠে ইংল্যান্ডের কাছেও পরাজিত হয়েছে। মোদী এই ফলাফলের দিকে ইঙ্গিত করে বলেন, “খেলার মাধ্যমে আমরা একে অপরের কাছাকাছি আসতে পারি। ক্রিকেট শুধু প্রতিযোগিতা নয়, মানুষকে একত্রিত করার একটি মাধ্যম।” তিনি ভারত-পাকিস্তান ক্রিকেট ম্যাচের উত্তেজনা এবং জনপ্রিয়তার কথাও উল্লেখ করেন।

লেক্স ফ্রিডম্যান যখন মোদীকে সর্বকালের সেরা ফুটবলারের নাম জিজ্ঞাসা করেন, তিনি দুই কিংবদন্তির নাম তুলে ধরেন। তিনি বলেন, “১৯৮০-এর দশকে ডিয়েগো মারাদোনা একজন নায়ক ছিলেন। তার খেলার ধরন এবং ১৯৮৬ বিশ্বকাপে আর্জেন্টিনাকে জিতানোর কৃতিত্ব তাকে অবিস্মরণীয় করে রেখেছে। কিন্তু আজকের দিনে লিওনেল মেসির জনপ্রিয়তা বিশাল।” মেসি ২০২২ সালে কাতার বিশ্বকাপে আর্জেন্টিনাকে শিরোপা এনে দিয়ে তার ক্যারিয়ারের শীর্ষে পৌঁছেছেন, যা মোদী উল্লেখ করেছেন।

মোদীর এই মন্তব্য ফুটবলের প্রতি ভারতীয়দের ক্রমবর্ধমান আগ্রহের সঙ্গে মিলে যায়। ভারতে ফুটবলের জনপ্রিয়তা বাড়ছে, এবং মেসির মতো তারকারা তরুণদের মধ্যে অনুপ্রেরণা জাগিয়ে তুলছে। মোদী বলেন, “খেলাধুলা আমাদের শারীরিক ও মানসিকভাবে সুস্থ রাখে এবং সমাজে ঐক্য গড়ে তোলে।”

লেক্স ফ্রিডম্যানের পডকাস্টে মোদীর এই আলোচনা ভারতের প্রধানমন্ত্রীকে আন্তর্জাতিক দর্শকদের কাছে নিয়ে গেছে। ফ্রিডম্যান, যিনি বিজ্ঞান, প্রযুক্তি এবং জীবন নিয়ে আলোচনার জন্য পরিচিত, মোদীর সঙ্গে এই মুক্ত আলাপে ক্রীড়া থেকে শুরু করে বিভিন্ন বিষয়ে কথা বলেছেন। মোদীর ক্রিকেট এবং ফুটবল নিয়ে সরল কিন্তু তথ্যভিত্তিক মন্তব্য বিশ্বব্যাপী ক্রীড়াপ্রেমীদের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছে।

মোদীর এই মন্তব্য ভারতীয় ক্রিকেট সমর্থকদের মধ্যে উচ্ছ্বাস সৃষ্টি করেছে। একজন সমর্থক সামাজিক মাধ্যমে লিখেছেন, “প্রধানমন্ত্রী ঠিক বলেছেন। ভারত এখন ক্রিকেটে পাকিস্তানের থেকে অনেক এগিয়ে।” তবে, পাকিস্তানের ক্রিকেটপ্রেমীরা এই মন্তব্যের সমালোচনা করেছেন। একজন পাকিস্তানি সমর্থক বলেন, “দুই দলের মধ্যে প্রতিদ্বন্দ্বিতা আছে, কিন্তু এভাবে তুলনা করা ঠিক নয়।”

ক্রিকেট বিশ্লেষকরা মনে করেন, মোদীর মন্তব্য সাম্প্রতিক পরিসংখ্যানের উপর ভিত্তি করে সঠিক। গত দশকে ভারত পাকিস্তানের বিরুদ্ধে ১৩টি টি-টোয়েন্টি ম্যাচের মধ্যে ৯টি এবং ৭টি ওয়ানডের মধ্যে ৬টি জিতেছে। ভারতের টেস্ট র‌্যাঙ্কিংও পাকিস্তানের তুলনায় উচ্চতর।

মোদী তার আলোচনায় খেলাধুলার সামাজিক গুরুত্বের উপর জোর দিয়েছেন। তিনি বলেন, “ক্রিকেট এবং ফুটবলের মতো খেলা জাতি বা ধর্মের সীমা ছাড়িয়ে মানুষকে এক করে। এটি তরুণদের জন্য একটি পথ দেখায়।” ভারত সরকারের ‘খেলো ইন্ডিয়া’ উদ্যোগের কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, খেলাধুলা দেশের উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে।

নরেন্দ্র মোদীর এই মন্তব্য ভারতীয় ক্রিকেটের শ্রেষ্ঠত্ব এবং ফুটবলের বৈশ্বিক তারকাদের প্রতি তার দৃষ্টিভঙ্গি প্রকাশ করেছে। তিনি ক্রিকেটে ভারত-পাকিস্তান প্রতিদ্বন্দ্বিতাকে সাম্প্রতিক ফলাফলের আলোকে বিচার করেছেন এবং খেলাধুলার মাধ্যমে সমাজে ঐক্যের বার্তা দিয়েছেন। এই আলোচনা ক্রীড়াপ্রেমীদের মধ্যে নতুন উৎসাহ জাগিয়েছে এবং ভারতের ক্রীড়া জগতের প্রতি আন্তর্জাতিক মনোযোগ আকর্ষণ করেছে।