ইন্ডিয়ান সুপার লিগ (আইএসএল) ২০২৪-২৫-এর একটি গুরুত্বপূর্ণ ম্যাচে শনিবার, ৮ মার্চ, বিকেল ৫টায় শিলং-এর জওহরলাল নেহরু স্টেডিয়ামে মুখোমুখি হবে নর্থইস্ট ইউনাইটেড এফসি (NorthEast United FC) এবং ইস্টবেঙ্গল এফসি (East Bengal FC)। ২৩ ম্যাচে ৩৫ পয়েন্ট নিয়ে প্লে-অফে জায়গা করে নেওয়া ‘হাইল্যান্ডার্স’ এই ম্যাচে জয় দিয়ে প্লে-অফ পর্বে প্রবেশ করতে চায়। অন্যদিকে, ২৮ পয়েন্ট নিয়ে অষ্টম স্থানে থাকা ইস্টবেঙ্গল এফসি এই মরশুমের শেষ দিকে নর্থইস্টের বিরুদ্ধে তাদের শক্তিশালী রেকর্ড ধরে রাখতে মরিয়া। গত ছয়টি মুখোমুখি লড়াইয়ে তারা মাত্র একবার হেরেছে এবং প্রতিটি ম্যাচে গোল করেছে।
নর্থইস্ট ইউনাইটেড সম্প্রতি চেন্নাইয়িন এফসি-র বিরুদ্ধে ৩-০ গোলে জয় পেয়েছে। এই মরশুমে তারা সাতবার তিন বা তার বেশি গোল করেছে, যা আইএসএল ২০২৪-২৫-এ মোহনবাগান সুপার জায়ান্টের (৯ বার) পর দ্বিতীয় সর্বোচ্চ। আকর্ষণীয়ভাবে, এই সাতটি উচ্চ-স্কোরিং ম্যাচ গত তিন মরশুমে তাদের মোট সংখ্যার সমান। তবে শিলং-এ তাদের প্রথম আইএসএল জয় এখনও অধরা, এবং এই ম্যাচে তারা সেই লক্ষ্য পূরণের দিকে এগিয়ে যেতে চায়।
নর্থইস্ট ইউনাইটেডের ঘরের মাঠের চিন্তা
‘হাইল্যান্ডার্স’ ঘরের মাঠে টানা দুটি ম্যাচে ০-২ গোলে হেরেছে। এর আগে ২০১৯ সালের ডিসেম্বর থেকে ২০২০ সালের ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত তিনটি ঘরের ম্যাচে তারা গোল করতে ব্যর্থ হয়েছিল। এই ম্যাচে তারা যদি গোল না পায়, তবে সেই অবাঞ্ছিত রেকর্ডের পুনরাবৃত্তি হতে পারে। দলটি এই মরশুমে ৪২ গোল করে চতুর্থ সর্বোচ্চ গোলদাতা দল হলেও, তাদের স্কোরিংয়ে ভারসাম্য নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। আলাউদ্দিন আজারাই ২১টি গোল করলেও, পরবর্তী সেরা স্কোরার গুইলারমো ফার্নান্দেজ এবং নেস্টর আলবিয়াচ প্রত্যেকে মাত্র পাঁচটি গোল করেছেন। এই ভারসাম্যহীনতা দলের জন্য চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়াতে পারে।
ইস্টবেঙ্গলের অ্যাওয়ে ফর্ম
ইস্টবেঙ্গল এফসি আইএসএল ২০২৪-২৫-এ তাদের শেষ তিনটি অ্যাওয়ে ম্যাচে অপরাজিত রয়েছে (দুটি জয়, একটি ড্র)। এই ম্যাচে জয় বা ড্র হলে, তারা আইএসএল ইতিহাসে তাদের দীর্ঘতম অপরাজিত অ্যাওয়ে রানের ক্লাব রেকর্ড গড়বে। তাদের ডিফেন্সিভ কৌশলও উল্লেখযোগ্য—এই মরশুমে তারা প্রতিপক্ষকে ৬০ বার অফসাইডে ধরেছে, যা লিগে সর্বোচ্চ। তবে উঁচু ডিফেন্সিভ লাইন খেলার কারণে তাদের পিছনের সারি মাঝে মাঝে উন্মুক্ত হয়ে পড়তে পারে, যা নর্থইস্টের দ্রুত আক্রমণের জন্য সুযোগ তৈরি করতে পারে।
কোচদের কথা
নর্থইস্ট ইউনাইটেডের প্রধান কোচ জুয়ান পেদ্রো বেনালি ম্যাচের আগে বলেন, “আমরা ইস্টবেঙ্গলের বিরুদ্ধে খেলছি, কিন্তু আমাদের গোল করা এবং নিজেদের খেলার দিকে মনোযোগ দিতে হবে, প্রতিপক্ষের দিকে নয়। কিছু পজিশনে আমরা খেলোয়াড় রোটেট করতে চাই।” তিনি দলের গেমপ্লে উন্নত করার ওপর জোর দিয়েছেন।
ইস্টবেঙ্গলের সহকারী কোচ বিনো জর্জ বলেন, “আমরা সব ম্যাচের ওপরই ফোকাস করি, কারণ ক্লাবের জন্য প্রতিটি ম্যাচ গুরুত্বপূর্ণ। আমাদের পরিকল্পনা প্রস্তুত আছে, এবং আমরা সেগুলো মেনে চলতে মনোযোগী।” তাঁর বক্তব্যে ক্লাবের প্রতি দায়বদ্ধতা ফুটে উঠেছে।
মুখোমুখি রেকর্ড
দুই দল এখন পর্যন্ত নয়বার মুখোমুখি হয়েছে। নর্থইস্ট চারবার এবং ইস্টবেঙ্গল তিনবার জয়ী হয়েছে। দুটি ম্যাচ ড্র হয়েছে। ইস্টবেঙ্গলের সাম্প্রতিক শ্রেষ্ঠত্ব এই ম্যাচে তাদের আত্মবিশ্বাস বাড়াতে পারে।
গুরুত্বপূর্ণ খেলোয়াড়
ইস্টবেঙ্গলের ক্লেইটন সিলভা এই ফিক্সচারে পাঁচটি গোল করেছেন, যা অন্য যে কোনো খেলোয়াড়ের চেয়ে বেশি। তবে গত ১৮টি আইএসএল ম্যাচে তিনি গোল করতে ব্যর্থ হয়েছেন। এই ম্যাচে তাঁর ফর্মে ফেরা দলের জন্য গুরুত্বপূর্ণ হবে।
নর্থইস্টের আলাউদ্দিন আজারাই এই মরশুমে ১১টি ভিন্ন দলের বিরুদ্ধে গোল করেছেন, শুধু ইস্টবেঙ্গল বাদে। এই ম্যাচে গোল করলে তিনি ফেরান কোরোমিনাস (২০১৭-১৮), কালু উচে (২০১৭-১৮) এবং মিকু ফেদোর (২০১৭-১৮)-এর মতো এক মরশুমে প্রতিটি দলের বিরুদ্ধে গোল করা খেলোয়াড়দের তালিকায় যোগ দেবেন।
ইস্টবেঙ্গলের নওরেম মহেশ সিং গত দুটি অ্যাওয়ে ম্যাচে গোল করেছেন এবং নর্থইস্টের বিরুদ্ধে তিনটি অ্যাসিস্ট দিয়েছেন, যা তাঁর দ্বিতীয় সেরা রেকর্ড। তাঁর পারফরম্যান্স ম্যাচের ফলাফল নির্ধারণে গুরুত্বপূর্ণ হতে পারে।
প্রত্যাশিত লাইন-আপ
নর্থইস্ট ইউনাইটেড এফসি (৪-২-৩-১):
কোচ: জুয়ান পেদ্রো বেনালি
গুরমিত সিং (গোলরক্ষক), সামতে, মিশেল জাবাকো, আশীর আখতার, রিডিম ত্লাং, মুথু মায়াকান্নান, মোহাম্মদ বেমাম্মার, ম্যাকার্টন নিকসন, থোই সিং হুইদ্রোম, নেস্টর আলবিয়াচ, আলাউদ্দিন আজারাই।
ইস্টবেঙ্গল এফসি (৪-২-৩-১):
কোচ: অস্কার ব্রুজন
প্রভসুখান গিল (গোলরক্ষক), নিশু কুমার, হেক্টর ইউস্টে, লালচুংনুঙ্গা, নন্দকুমার শেখর, মহেশ সিং নওরেম, সৌভিক চক্রবর্তী, রিচার্ড সেলিস, ডেভিড লালহানসাঙ্গা, পিভি বিষ্ণু, রাফায়েল মেসি বৌলি।
ম্যাচের তাৎপর্য
নর্থইস্ট ইউনাইটেডের জন্য এই ম্যাচ শিলং-এ তাদের প্রথম আইএসএল জয়ের সুযোগ। প্লে-অফে জায়গা নিশ্চিত হলেও, জয়ের ধারা বজায় রাখা তাদের আত্মবিশ্বাস বাড়াবে। ইস্টবেঙ্গলের জন্য এটি মরশুমের শেষ দিকে সম্মান রক্ষার লড়াই। কলকাতার ফুটবলপ্রেমীরা এই ম্যাচে ইস্টবেঙ্গলের পারফরম্যান্সের দিকে তাকিয়ে থাকবে, বিশেষ করে তাদের অ্যাওয়ে ফর্মের ধারাবাহিকতা ধরে রাখার প্রত্যাশায়।
এই ম্যাচটি দুই দলের জন্যই গুরুত্বপূর্ণ। নর্থইস্ট তাদের ঘরের মাঠে হারের ধারা ভাঙতে চাইবে, আর ইস্টবেঙ্গল অপরাজিত অ্যাওয়ে রান অব্যাহত রাখতে মরিয়া। আলাউদ্দিন আজারাই এবং মহেশ সিংয়ের মতো খেলোয়াড়দের পারফরম্যান্স ম্যাচের ফলাফল নির্ধারণে মুখ্য ভূমিকা পালন করবে। বাংলার ফুটবলপ্রেমীরা এই লড়াইয়ের জন্য অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করছে।