২০০৮ সালে ইংল্যান্ডের (England) বিপক্ষে টেস্ট ক্রিকেটে (Test Cricket) আত্মপ্রকাশ করেছিলেন টিম সাউদি (Tim Southee)। সে সময় ১২১ রানে হেরে শুরুর কষ্টে পা রাখা সাউদি ২০২৪ সালে সেই ইংল্যান্ডের বিপক্ষেই নিজের টেস্ট কেরিয়ার শেষ করলেন। ১৬ বছরের দীর্ঘ এবং সফল কেরিয়ারে তাঁর যে এক যুগের অবসান ঘটালেন, তা নিঃসন্দেহে উল্লেখযোগ্য। গত কয়েক বছরে বিশ্ব ক্রিকেটে সবচেয়ে নির্ভরযোগ্য পেস বোলারদের মধ্যে একজন হিসেবে প্রতিষ্ঠিত সাউদি তাঁর শেষ ম্যাচে ইংল্যান্ডকে ৪২৩ রানে পরাজিত করে শেষ বিদায় নিয়েছেন।
সাউদির আন্তর্জাতিক টেস্ট কেরিয়ার ছিল একদিকে কষ্টকর আর অন্যদিকে উজ্জ্বল। প্রথম টেস্ট ম্যাচটি হারার পর অনেকেই হয়তো ভাবেননি, সাউদি এতদিন ধরে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে রাজত্ব করবেন। তবে টিম সাউদি তাঁর কঠোর পরিশ্রম ও অবিচল মনোভাবের মাধ্যমে নিজের নাম ইতিহাসে স্থাপন করেছেন। তাঁর ১৬ বছরের কেরিয়ারে ১০৭টি টেস্ট ম্যাচ খেলার অভিজ্ঞতা ছিল একটি আন্তর্জাতিক ক্রিকেটার হিসেবে তার জীবনের অন্যতম অর্জন।
সাউদির টেস্ট কেরিয়ারের সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য মুহূর্তগুলোর মধ্যে একটি ছিল তার সেরা বোলিং ফিগার। ৭ উইকেট নিয়ে ৬৪ রান করা এক অনবদ্য কীর্তি, যা তাকে নিউ জিল্যান্ড ক্রিকেটের ইতিহাসে চিরকাল স্মরণীয় করে রাখবে। ১৬ বছরের টেস্ট ক্যারিয়ারে তিনি মোট ৩৯১ উইকেট নিয়েছেন, যা সত্যিই বিরল। বিশেষত, তাঁর উইকেট নেওয়ার স্টাইল ছিল একেবারেই আলাদা। দ্রুতগতির বোলিং এবং সুইংয়ের মাধ্যমে প্রতিপক্ষের ব্যাটসম্যানদের বিপদে ফেলে দিয়েছেন তিনি বারবার।
এছাড়া, সাউদি ব্যাট হাতেও নজর কেড়েছেন ভক্তদের। তাঁর ব্যাটিং কেরিয়ার মোটেও কম নয়। ১৫৬ ইনিংসে ২,২৪৫ রান করেছেন তিনি, যা কোনো পেস বোলারের জন্য এক ধরনের সাফল্য। তাঁর ব্যাটিংয়ে ছিল নির্ভরতা, যেখানে ৭৭ রান ছিল তার সর্বোচ্চ স্কোর। এছাড়া, ৭টি হাফসেঞ্চুরি ব্যাটিং ক্যারিয়ারের গর্বিত অংশ।
তার সমাপ্তি যাত্রা ছিল একেবারে সাফল্যের সাথে। ২০২৪ সালে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে খেলা তার শেষ টেস্ট ম্যাচে তিনি নিজের দলকে ৪২৩ রানের বিশাল জয় উপহার দেন। যদিও সাউদি ব্যক্তিগতভাবে ওই ম্যাচে খুব বেশি কিছু করতে পারেননি—তিনি ১ উইকেট নেন প্রথম ইনিংসে এবং ১ উইকেট নেন দ্বিতীয় ইনিংসে। তবে তার নেতৃত্ব এবং অভিজ্ঞতা দলের জন্য অমূল্য ছিল।
নিউ জিল্যান্ড দলের তরফ থেকে তাকে বিদায় জানানো হয়েছিল যথাযথভাবে, যদিও সিরিজটি তারা ২-১ এ হারতে হয়েছে। তবে শেষ ম্যাচে সাউদির জন্য জয় নিশ্চিতভাবে এক ধরনের ‘ফেয়ারওয়েল’ ছিল, যা তাকে তাঁর ক্যারিয়ারের শেষে একটি চমৎকার স্মৃতি দিয়ে গেছে।
সাউদি নিজেও সিরিজ়টি তাঁর ক্যারিয়ারের শেষ সিরিজ হিসেবে ঘোষণা করেছিলেন, এবং তার সতীর্থরা এই সিরিজ়ে তাঁকে সম্মান জানাতে এবং জয় উপহার দিতে চান। যদিও সিরিজ়টি জেতা হয়নি, তবে শেষ ম্যাচের জয় সবকিছুকে ছাপিয়ে গেছে।
তবে সাউদির বিদায় শুধু একটি টেস্ট সিরিজের সমাপ্তি নয়, এটি একটি যুগের সমাপ্তি। তিনি যে সময়ে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে ছিলেন, সে সময়টা ছিল সশক্ত পেস বোলিংয়ের। সাউদি কেবল উইকেটই নেননি, তিনি তাঁর কঠোর পরিশ্রম, দৃষ্টিভঙ্গি এবং দৃঢ় মনোবলের মাধ্যমে যে মানসিকতা গড়েছিলেন তা পরবর্তী প্রজন্মের ক্রিকেটারদের জন্য এক অনুপ্রেরণা। তাঁর কেরিয়ার নতুন ক্রিকেটারদের শেখার এক দুর্দান্ত উদাহরণ হিসেবে থাকবে।
এবার সাউদি তার অবসর জীবনে প্রবেশ করতে যাচ্ছেন, তবে তার ছেড়ে যাওয়া অবদান, তার উইকেট, রান এবং ম্যাচ জেতানো পারফরম্যান্স সবাই মনে রাখবে। তাকে নিয়ে যে গর্ব অনুভব করা যায়, তা কেবল নিউ জিল্যান্ডের ক্রিকেটাররা নয়, বিশ্ব ক্রিকেটপ্রেমীরা সমানভাবে অনুভব করবে।