মুম্বাই সিটি এফসি (Mumbai City FC) এবং জামশেদপুর এফসি (Jamshedpur FC) আগামী ১২ জানুয়ারি তথা রবিবার, ইন্ডিয়ান সুপার লিগের (ISL) ম্যাচে মুখোমুখি হবে মুম্বাই ফুটবল অ্যারেনায়। ম্যাচটি সন্ধ্যা ৭:৩০ টায় অনুষ্ঠিত হবে। এই ম্যাচে দুটি দলই তাদের নিজ নিজ লক্ষ্য অর্জনের জন্য লড়াই করবে। যেখানে মুম্বাই সিটি এফসি তাদের ঘরের মাঠে হারানোর পর পুনরায় ঘুরে দাঁড়ানোর চেষ্টা করবে, আর জামশেদপুর এফসি তাদের দূরত্বের রেকর্ড ভেঙে টানা দ্বিতীয়বার মুম্বাই সিটি এফসির বিরুদ্ধে জয় পেতে চায়। তাদের ৩-২ ব্যবধানে করা প্রথম জয়টি এই মরসুমের ২১ সেপ্টেম্বর মুম্বাই সিটি এফসির বিপক্ষেই ছিল।
মুম্বাই সিটি এফসি বর্তমানে আইএসএল টেবিলের ষষ্ঠ স্থানে অবস্থান করছে, তাদের ১৪ ম্যাচে সংগ্রহ ২৩ পয়েন্ট, যেখানে তারা ৬টি জয় এবং ৫টি ড্র করেছে। অন্যদিকে, জামশেদপুর এফসি ১৩ ম্যাচে ২৪ পয়েন্ট নিয়ে চতুর্থ স্থানে রয়েছে এবং তাদের সাম্প্রতিক ফর্ম বেশ শক্তিশালী, তারা শেষ পাঁচটি ম্যাচের মধ্যে ৪টি জিতেছে।
মুম্বাই সিটি এফসি তাদের ঘরের মাঠে সাম্প্রতিক সময়ে কিছুটা অস্থিরতা অনুভব করেছে, যেখানে তারা তাদের শেষ পাঁচ ম্যাচের মধ্যে দুটি হেরেছে, তার মধ্যে ৩০ ডিসেম্বর নর্থইস্ট ইউনাইটেড এফসির কাছে ০-৩ ব্যবধানে হার তাদের জন্য বড় ধাক্কা। গত বছর তারা প্রথমবারের মতো টানা দুটি বাড়ির হার দেখেছিল, যা তাদের সাম্প্রতিক হোম রেকর্ডের জন্য উদ্বেগের বিষয়। তবে মুম্বাই সিটি এফসির কোচ পেত্র ক্র্যাটকি, যিনি আইএসএলে ৫৬.২৫% জয়ের হার নিয়ে কোচিং করছেন, তিনি নিশ্চিত করতে চান যে জামশেদপুর এফসির বিপক্ষে এই হারের ধারাবাহিকতা ভেঙে দলটি আবার ঘুরে দাঁড়াবে।
মুম্বাই সিটি এফসির প্রধান সমস্যা হচ্ছে তাদের রক্ষণ। তাদের সাম্প্রতিক দুটি ম্যাচে তারা একাধিক গোল খেয়েছে, যদিও তাদের পূর্ববর্তী চারটি ম্যাচে তারা শূন্য গোল খেয়েছিল। তাদের জন্য এটি একটি বড় উদ্বেগের বিষয়, কারণ তাদের রক্ষণ আবার শক্তিশালী করতে হবে। এছাড়াও, মুম্বাই সিটি এফসি অনেক শট নিয়েছে, কিন্তু সেগুলোর অনেক কম পরিসংখ্যানগত রূপান্তর হয়েছে (৮.৪%)। দলটি অবশ্য শটের সঠিকতা (৪২.৪%) নিয়ে কিছুটা ভালো পারফর্ম করেছে, যা লিগের চতুর্থ সেরা। তবে তাদের সুযোগগুলো সঠিকভাবে কাজে লাগানোর জন্য তাদের আরও মনোযোগী হতে হবে, বিশেষ করে জামশেদপুর এফসির রক্ষণের বিরুদ্ধে, যারা তাদের গত তিনটি ম্যাচে মাত্র দুটি গোল খেয়েছে।
অন্যদিকে, জামশেদপুর এফসি একটি ভিন্ন ধরনের কৌশল ব্যবহার করে খেলে। তারা সাধারণত প্রতিপক্ষের ওপর চাপ তৈরি না করে তাদের প্রতি আক্রমণ করার জন্য কাউন্টার অ্যাটাক ব্যবহার করে। তারা সাধারণত ম্যাচে ৪১.১% বলের দখলে থাকে, যা লিগের মধ্যে সবচেয়ে কম। তবে তাদের এই কৌশল অত্যন্ত কার্যকরী হয়েছে, কারণ তারা তাদের গতির মাধ্যমে প্রতিপক্ষকে ফাঁকা জায়গায় আক্রমণ করতে সক্ষম হয়েছে।
জামশেদপুর এফসির প্রধান খেলোয়াড়দের মধ্যে একজন হলেন মহম্মদ উভায়েস, যিনি এই মরসুমের প্রতিটি ম্যাচে ৯.৭টি ফাইনাল থার্ডে প্রবেশ করেছেন, যা ভারতীয় আউটফিল্ডারের মধ্যে দ্বিতীয় সেরা। তিনি আক্রমণাত্মক এবং রক্ষণাত্মক উভয় দিকেই দারুণ ভূমিকা পালন করছেন। তিনি ১১টি ইন্টারসেপ্ট, ১৮টি ট্যাকল, ৩৯টি ক্লিয়ারেন্স, ৫২টি রিকভারি এবং গড়ে ২৬টি পাস করেছেন। উভায়েসের এই কঠোর পরিশ্রম জামশেদপুর এফসিকে একটি শক্তিশালী দল হিসেবে গড়ে তুলেছে।
আইএসএলের ইতিহাসে এই দুটি দলের মধ্যে মোট ১৫টি ম্যাচ অনুষ্ঠিত হয়েছে, যেখানে জামশেদপুর এফসি ৭টি ম্যাচে জিতেছে এবং মুম্বাই সিটি এফসি পাঁচ ম্যাচে জয়লাভ করেছে। বাকি তিনটি ম্যাচ ড্র হয়েছে।
মুম্বাই সিটি এফসির কোচ পেত্র ক্র্যাটকি জানিয়েছেন, “আমাদের জন্য প্রতিটি ম্যাচই গুরুত্বপূর্ণ, এবং আমাদের লক্ষ্য অবশ্যই জয় লাভ করা। ভালো ফুটবল খেললে আমরা আমাদের সুযোগগুলো ভালোভাবে কাজে লাগাতে পারব।” অন্যদিকে, জামশেদপুর এফসির কোচ খালিদ জামিল বলেন, “এই ম্যাচটি আমাদের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এটি একটি অ্য়াওয়ে ম্যাচ, তাই আমাদের পুরো দায়িত্ব নিয়ে, কঠোর পরিশ্রম করে একটি ইতিবাচক ফল অর্জন করতে হবে।” এই ম্যাচটি ফুটবলপ্রেমীদের জন্য এক উত্তেজনাপূর্ণ দ্বৈরথ হতে চলেছে, যেখানে দুই দলই তাদের লক্ষ্য অর্জনে প্রতিটি মুহূর্তে লড়াই করবে।