স্পোর্টস ডেস্ক: দিনকয়েক আগেই ‘এটিকে মোহনবাগান ফুটবল ক্লাব’-এর পক্ষ থেকে জানিয়ে দেওয়া হয়েছে, এটিকে মোহনবাগান ‘মোহনবাগান’ এবং ‘এটিকে’র ইউনাইটেড ক্লাব নয়। ১৮৮৯ সালেই প্রতিষ্টা হয়েছিল ক্লাবের। শুধু তাই নয়, পৃথিবীর অন্যতম প্রাচীন এবং ঐতিহাসিক ক্লাব মোহনবাগানের ঐতিহ্যই বহন করছে এটিকে মোহনবাগান। যদিও তাতে যে মোহনবাগান জনতা ভেজেনি, তার প্রমাণ পাওয়া গেল রবিবাসরীয় বিকেলে।
রবিবার বিবেকানন্দ যুবভারতী ক্রীড়াঙ্গনে ছিল ১৩০ তম ডুরান্ড কাপের ফাইনাল। মুখোমুখি হয়েছিল মহামেডান স্পোর্টিং ক্লাব এবং এফসি গোয়া। আর তাতেই শহরের তৃতীয় প্রধানের হয়ে গলা ফাটালেন মোহনবাগান, ইস্টবেঙ্গলের সমর্থকরা। সেখানেই গ্যালারি থেকে বিক্ষোভ দেখালেন মোহনবাগান সমর্থকরা। ‘এটিকে হটাও’, ‘ব্রেক দ্য মার্জার’ এর দাবিতে ফেটে পড়লেন তারা। পিছিয়ে ছিলেন না ইস্টবেঙ্গল সমর্থকরাও, গ্যালারিতে দেখা গেল ‘নিতু আউট’ লেখা পোস্টারও।
দিনকয়েক আগেই মোহনবাগান জনতার বিক্ষোভের ছবি নিজের টুইটার হ্যান্ডেলে পোস্ট করেছেন বিখ্যাত ফুটবল প্রেজেন্টার জো মরিসন। TEN Sports, TEN Action+, SONY SIX সহ বিভিন্ন চ্যানেলে কাজ করেছেন তিনি। তাঁর জনপ্রিয় শো C2K (কাউন্টডাউন টু কিকঅফ) বিপুল জনপ্রিয়তা এনে দেয় তাঁকে। তিনিই সবুজ-মেরুন জনতার বিক্ষোভের ছবি শেয়ার করে লিখেছেন, ‘What a photo.’ এরপরেই সমর্থকরা জানিয়েছিলেন, ‘যতদিন না এটিকের নাম মায়ের নামের সামনে থেকে সরবে, ততদিন আমরা বিক্ষোভ চালিয়ে যাবো।
বিক্ষোভের সূত্রপাত্র গতবছর মোহনবাগান এবং এটিকে মার্জ করায়। যদিও সেই বিক্ষোভ খানিক কমলেও কয়েকদিন আগে থেকেই আবার পথে নেমেছেন মোহনবাগান জনতা। বিতর্ক তৈরি হয়েছিল এটিকের বোর্ড মেম্বার উৎসব পারেখের একটি মন্তব্যে। চলতি বছরে এটিকে-মোহনবাগান এএফসি কাপে খেলছে। গ্রুপ চ্যাম্পিয়ন হয়ে পরের পর্বেও পৌঁছেছিল। যদিও ইন্টারজোনাল সেমিফাইনালে ‘এফসি নাসাফ উজবেকিস্তান’এর কাছে স্বপ্নভঙ্গ হয়েছে গঙ্গাপাড়ের ক্লাবের। কিন্তু এএফসি কাপে খেলা সম্ভব হয়েছে গত বছর কিবু ভিকুনার কোচিংয়ে ‘মোহনবাগান’ আই লিগ চ্যাম্পিয়ন হওয়ায়।
একটি সাক্ষাৎকারে পারেখ হঠাৎই বলে বসেন, ‘মোহনবাগানের নিজেদের ক্ষমতায় এএফসি কাপে খেলার যোগ্যতা নেই। ওদের কখনও পরিকল্পনাতেও ছিল না যে মোহনবাগান এএফসি কাপে খেলতে পারবে। মোহনাবাগন তো নিজস্ব গায়ের জোরে আজ পর্যন্ত খেলল না। এতদিন সেই কারণেই এএফসি কাপে খেলেনি তারা। এটিকে আসাতেই সেই সুযোগ পেয়েছে তারা। ফলে মোহনবাগান সমর্থকদের এটিকে মোহনবাগানকেই সমর্থন করা উচিত। মোহনবাগান এখন অতীত।’
পারেখ-কান্ডের পরেই মোহনবাগান অ্যাথলেটিক ক্লাবের পক্ষ থেকে এটিকে-মোহনবাগানের অন্যতম ডিরেক্টর দেবাশীষ দত্ত এবং সৃঞ্জয় বসু জানিয়ে দেন, সমর্থকদের আবেগকে গুরুত্ব দিতেই হবে। উৎসব পারেখের বক্তব্য অপমান করেছে মোহনবাগানের শতাব্দীপ্রাচীন আবেগকে। তারপরেই এটিকের পক্ষ থেকে ক্ষমা চাওয়া হয় মোহনবাগান ক্লাবে সভ্য-সমর্থকদের কাছে। জানিয়ে দেওয়া হয়েছিল, উৎসব পারেখের বক্তব্যকে সমর্থন করেন না তাঁরা। যদিও তাতেও কমছে না সবুজ-মেরুন সমর্থকদের রাগ।
প্রসঙ্গত, গত বছরও এটিকে-মোহনবাগানের নতুন জার্সিতে তিনটি স্টার থাকা এবং ক্রমাগত তাদের ডিফেন্ডিং চ্যাম্পিয়ন বলে উল্লেখ করায় ক্ষিপ্ত হয়েছিলেন সবুজ-মেরুন সমর্থকেরা। তাদের ক্রমাগত আন্দোলনের পরে তিন স্টার সরিয়ে নিয়েছে ক্লাব অফিসিয়ালরা। ঝামেলা বেড়েছিল আইএসএলের একটি প্রোমোশনাল ভিডিওকে ঘিরেও। ওই ভিডিওতে দেখা যায় এটিকের অন্যতম কর্ণধার সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায়কে। সবুজ-মেরুন জনতার বিক্ষোভে সেই ভিডিওটিও সরিয়ে নিয়েছিল আইএসএল কর্তৃপক্ষ।