আজ ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী তাঁর সরকারের (Modi government) ১১ বছর পূর্ণ করছেন। এই উপলক্ষে, সরকার একটি নতুন স্লোগান ঘোষণা করেছে – “১১ বছর সেবা”। গত এক দশক ধরে, মোদী সরকারের নেতৃত্বে বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ প্রকল্প চালু হয়েছে, যা দেশের সাধারণ মানুষের কল্যাণে অগ্রণী ভূমিকা রেখেছে। বিজেপি সভাপতি জেপি নাড্ডা জানিয়েছেন, প্রধানমন্ত্রী মোদীর নেতৃত্বে দেশব্যাপী যেসব কার্যক্রম চালু হয়েছে, সেগুলি ‘সোনালী অক্ষরে’ লেখা হবে এবং সাধারণ মানুষের কল্যাণে এসব কার্যক্রম চিরকাল স্মরণীয় হয়ে থাকবে।
এখানে আলোচনা করা হবে, কীভাবে সরকারের কিছু মূল প্রকল্প সাধারণ মানুষের জীবনযাত্রা উন্নত করেছে এবং তাদের জন্য কেমন সুবিধা প্রদান করেছে।
১. আয়ুষ্মান ভারত
প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর উদ্যোগে চালু হওয়া আয়ুষ্মান ভারত প্রকল্পের মাধ্যমে দেশের প্রায় ৯ কোটি মানুষ বিনামূল্যে চিকিৎসা সুবিধা পেয়েছেন। এই সংখ্যা কানাডার জনসংখ্যার দ্বিগুণেরও বেশি। আয়ুষ্মান ভারত স্বাস্থ্যসেবায় এক অভাবনীয় বিপ্লব সৃষ্টি করেছে, যেখানে দেশের দরিদ্র এবং গ্রামীণ জনগণের জন্য চিকিৎসা সেবা পাওয়া সহজতর হয়েছে।
২. ডিরেক্ট বেনিফিট ট্রান্সফার (DBT)
ডিরেক্ট বেনিফিট ট্রান্সফার (DBT) প্রকল্প দেশের মানুষকে welfare benefits সরাসরি তাদের ব্যাংক অ্যাকাউন্টে পৌঁছে দেওয়ার একটি নির্ভরযোগ্য মাধ্যম হয়েছে। সরকারি তথ্য অনুযায়ী, DBT মাধ্যমে প্রায় ৪৪ লাখ কোটি টাকার সুবিধা জনগণের কাছে পৌঁছেছে। প্রতিটি মিনিটে ১ লক্ষ টাকা গণনা করলে এটি সম্পূর্ণ করতে ৮৩৩ বছর সময় লাগবে, যা প্রকল্পটির বিশালতার ইঙ্গিত দেয়।
৩. মুদ্রা ঋণ
সাম্প্রতিক বছরগুলোতে মুদ্রা ঋণ প্রকল্প (Mudra Loan) দেশের ছোট ব্যবসায়ীদের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ পৃষ্ঠপোষকতা হয়ে উঠেছে। এই প্রকল্পের আওতায় ৫২ কোটি ঋণ দেওয়া হয়েছে, যা যুক্তরাষ্ট্র, রাশিয়া ও অস্ট্রেলিয়ার মোট জনসংখ্যার চেয়েও বেশি। মুদ্রা ঋণের মাধ্যমে দেশের ক্ষুদ্র উদ্যোক্তারা সহজেই ব্যবসা শুরু করার সুযোগ পেয়েছেন এবং কর্মসংস্থানের সুযোগও সৃষ্টি হয়েছে।
৪. জল পরিষেবা
প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর সরকার গৃহস্থালির জন্য নিরাপদ পানির সরবরাহের জন্য যথেষ্ট পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে। বর্তমানে ১৫ কোটি বাড়ি জল সংযোগ পেয়েছে, যা রাশিয়ার মোট জনসংখ্যার সমান। এই প্রকল্পটি দেশের গ্রামাঞ্চলে বিশুদ্ধ পানির প্রবাহকে নিশ্চিৎ করেছে এবং কোটি কোটি মানুষ সুস্থ জীবনযাপন করছে।
৫. কৃষক কল্যাণ
কৃষকদের জন্য সরকারের উদ্যোগও অত্যন্ত প্রশংসনীয়। প্রায় ২৫ কোটি কৃষককে মাটির স্বাস্থ্য কার্ড দেওয়া হয়েছে, যা ব্রাজিলের জনসংখ্যার থেকেও বেশি। এই কার্ডের মাধ্যমে কৃষকরা তাদের জমির মাটি কেমন আছে, তা সম্পর্কে প্রয়োজনীয় তথ্য পেয়ে উন্নত চাষাবাদ করতে সক্ষম হয়েছেন।
৬. জন ধন যোজনার মাধ্যমে ব্যাংক অ্যাকাউন্ট
জন ধন যোজনার মাধ্যমে দেশের ৫৫ কোটি মানুষ ব্যাংক অ্যাকাউন্ট পেয়েছেন, যা ইউরোপীয় ইউনিয়নের জনসংখ্যার চেয়েও বেশি। এই প্রকল্পের মাধ্যমে ভারতের বড় একটি অংশ প্রথমবারের মতো ব্যাংকিং সুবিধা পেয়েছে, যা তাদের আর্থিক সুরক্ষা এবং স্বাচ্ছন্দ্য নিশ্চিত করেছে।
৭. বিনামূল্যে রেশন
প্রধানমন্ত্রী মোদীর সরকার প্রতি মাসে ৮১ কোটি মানুষের জন্য বিনামূল্যে রেশন বিতরণ করছে, যা আমেরিকা এবং দক্ষিণ আমেরিকার মোট জনসংখ্যার সমান। এই উদ্যোগটি খিদে বা খাদ্য সংকটের সমস্যা দূর করতে সহায়ক হয়েছে, বিশেষ করে করোনাভাইরাস মহামারীর সময়।
৮. বিনামূল্যে এলপিজি সংযোগ
প্রধানমন্ত্রী উজ্জ্বলা যোজনার মাধ্যমে ১০ কোটি মানুষের জন্য বিনামূল্যে এলপিজি সংযোগ প্রদান করা হয়েছে, যা কানাডা, স্পেন, নিউজিল্যান্ড এবং আয়ারল্যান্ডের মোট জনসংখ্যার সমান। এর ফলে দেশের লক্ষ লক্ষ পরিবার এখন পরিশোধিত এবং নিরাপদ রান্না গ্যাস ব্যবহার করতে পারছে, যা স্বাস্থ্যগতভাবে অত্যন্ত উপকারী।
৯. মেক ইন ইন্ডিয়া
ভারতকে বিশ্বের বৃহত্তম স্মার্টফোন নির্মাতা দেশগুলোর মধ্যে একটি করে তুলতে ‘মেক ইন ইন্ডিয়া’ প্রকল্প গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে। এখন প্রতি সপ্তাহে ৬৩ লাখ স্মার্টফোন তৈরি হচ্ছে, যা ভারতের প্রযুক্তি খাতের উজ্জ্বল ভবিষ্যতকেই ইঙ্গিত দেয়।
নরেন্দ্র মোদীর নেতৃত্বে ভারত সরকার বিভিন্ন মহৎ প্রকল্প চালু করেছে, যা দেশের সাধারণ মানুষের জীবনে ব্যাপক পরিবর্তন নিয়ে এসেছে। ডিরেক্ট বেনিফিট ট্রান্সফার, আয়ুষ্মান ভারত, মুদ্রা ঋণ, জল সরবরাহ, কৃষক কল্যাণ, এবং অন্যান্য প্রকল্পগুলির মাধ্যমে লক্ষ লক্ষ মানুষের জীবনযাত্রা উন্নত হয়েছে এবং তাদের জন্য সুরক্ষা ও স্বাচ্ছন্দ্য নিশ্চিত করা হয়েছে।
বিজেপি সভাপতি জেপি নাড্ডা বলেছেন, “প্রধানমন্ত্রী মোদীর নেতৃত্বে ভারত সরকারের যেসব কার্যক্রম হয়েছে, সেগুলি সোনালী অক্ষরে লেখা উচিত।” সত্যিই, এই ১১ বছরে সরকারের কর্মকাণ্ডের ফলাফল শুধু দেশের অভ্যন্তরেই নয়, বরং আন্তর্জাতিক পর্যায়েও প্রশংসিত হয়েছে।