আইপিএল ২০২৫ (IPL 2025) মেগা নিলামে ইতিহাস সৃষ্টি করে লখনউ সুপার জায়ান্টস (Lucknow Super Giants) ২৭ কোটি টাকায় ঋষভ পন্থকে (Rishabh Pant) দলে ভেড়ায়। এটি আইপিএলের ইতিহাসে এখন পর্যন্ত সর্বোচ্চ মূল্য। তবে নিলামের এই রেকর্ড ভাঙা চুক্তি নিয়ে শুরু হয়েছে বিতর্ক—এই বিপুল বিনিয়োগ আদৌ কি যুক্তিযুক্ত ছিল?
ব্যাট হাতে হতাশাজনক পারফরম্যান্স
ঋষভ পন্থ এই সিজনে ১৪টি ম্যাচে মাত্র ২৬৯ রান করেন, যার ফলে প্রতিটি রানের মূল্য দাঁড়ায়১০.০৩ লাখ। এটি আইপিএলের ইতিহাসে একজন খেলোয়াড়ের প্রতি রানের সর্বোচ্চ মূল্য। যদিও তিনি সিজনের শেষ ম্যাচে বেঙ্গালুরুর বিপক্ষে দুর্দান্ত সেঞ্চুরি (১১৮*) করেছেন। কিন্তু বাকি ১৩টি ম্যাচে মোটে ১৫১ রান তুলে তার ধারাবাহিকতার ঘাটতি স্পষ্ট হয়।
তার স্ট্রাইক রেট ছিল ১৩৩.১৭, যা ২০১৮ সালের তার সেরা পারফরম্যান্স (১৭৩.৬০) থেকে অনেকটাই কম। তার ব্যাটিং গড় ছিল মাত্র ২৪.৪৫—একজন কোটির খেলোয়াড়ের জন্য এটি মোটেই সন্তোষজনক নয়।
আগের রেকর্ড ও প্রত্যাশা
ঋষভ পন্থ ২০১৭ সাল থেকে আইপিএলের প্রতি সিজনে ৩০০ রান পেরিয়েছেন। তার আগের দল দিল্লি ক্যাপিটালসের হয়ে তিনি দলকে নেতৃত্বও দিয়েছেন এবং ফিনিশার হিসেবেও নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করেছেন। এমন একজন খেলোয়াড়কে পেয়ে লখনউ ভেবেছিল ব্যাটিং অর্ডারের মধ্যে আক্রমণাত্মকতা এবং নেতৃত্ব দু’টিই পাবে। তবে বাস্তবে তার ২০২৫ মরসুম ছিল অনেকটাই হতাশাজনক।
সামাজিক মাধ্যমে আলোড়ন
পন্থকে নিয়ে সোশ্যাল মিডিয়া, বিশেষ করে টুইটারে নানা আলোচনা-সমালোচনা চলছে। অনেকেই প্রশ্ন তুলেছেন ২৭ কোটি টাকায় ২৬৯ রান, এটা কি ন্যায্য? কেউ কেউ তার আগের পারফরম্যান্স এবং অভিজ্ঞতার দিক থেকে বিনিয়োগকে সমর্থন করলেও, অনেকে মনে করছেন এই মূল্য ছিল অতিরঞ্জিত এবং লখনউর জন্য তা ব্যর্থ বাজি।
তুলনামূলক বিশ্লেষণ
২০২০ সালে ডেভিড ওয়ার্নার প্রতি রানে ৩.২ লাখ উপার্জন করেছিলেন। তার তুলনায় পন্থের প্রতি রানের মূল্য তিনগুণেরও বেশি। এমনকি আগের ব্যয়বহুল খেলোয়াড় স্যাম কারেন বা ক্যামেরুন গ্রিনকেও ছাড়িয়ে গিয়েছেন তিনি।
কেবল ব্যাট নয়, নেতৃত্বের দিকও বিবেচ্য
এমন এক পরিস্থিতিতে প্রশ্ন উঠছে লখনউ কি কেবল তার ব্যাটিংয়ের জন্যই কোটি খরচ করেছে? না কি তার নেতৃত্বগুণ এবং ভবিষ্যৎ বিনিয়োগ হিসেবে একে বিবেচনা করছে? যদিও দলের সাফল্যে পন্থের বিশেষ ভূমিকা ছিল না, কিন্তু একটি বড় নাম এবং অভিজ্ঞ নেতৃত্ব দলের ব্র্যান্ড ভ্যালু এবং মিডিয়া কভারেজে গুরুত্বপূর্ণ প্রভাব ফেলেছে, সেটি অস্বীকার করা যায় না।
২০২৫ আইপিএল সিজনে ঋষভ পন্থের পারফরম্যান্স তার মূল্যের সঙ্গে তাল মিলিয়ে উঠতে পারেনি—এটা স্পষ্ট। তবে একজন খেলোয়াড়ের মূল্য শুধু রান দিয়ে নয়, তার অভিজ্ঞতা, নেতৃত্ব, দর্শক টানার ক্ষমতা, এবং ভবিষ্যৎ সম্ভাবনার উপরও নির্ভর করে। এখন দেখার বিষয়, পন্থ পরের মরসুম তার ফর্মে ফিরতে পারেন কি না এবং এই ২৭ কোটি টাকার ইনভেস্টমেন্টকে সত্যিই মূল্যবান করে তুলতে পারেন কি না।
