প্রীতম সাঁতরা : মোহন-ইস্ট ডার্বিতে হ্যাটট্রিক করেছেন নাসিরি। কিয়ান নাসিরি (Kian Nasiri)। জামশিদ নাসিরির ছেলে। বাবা হিসেবে নিশ্চয় খুশি হয়েছেন তিনি। ছেলেও খেলছে কলকাতার বড় ক্লাবে। তিনিও ভারতে কেরিয়ার শুরু করেছিলেন তিলোত্তমাতেই।
বাবার ইরানি ফুটবল গালিচা এবার মেলে দিলেন জুনিয়র নাসিরি।
ভারতীয় ফুটবলে জামশিদ নাসিরি ও মজিদ বিস্কর জুটি এখনও স্মরণীয়। অশান্ত ইরান থেকে ভারতে এসেছিলেন জামশিদ নাসিরি। সেই ১৯৭৯ সালে। তখন বিদ্রোহে অশান্ত ইরান। চলছিল ইরানের পহ্লবী রাজতন্ত্র বিরোধী ইসলামিক বিপ্লব। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র মদতে রাজতন্ত্র টিকেছিল। বিপ্লবের ধাক্কায় পতন ফের ক্ষমতা দখল ফের পতন-পরপর ক্ষমতা দখলের কেন্দ্রে ইরান।
অশান্ত দেশ থেকে ভারতে চলে এসেছিলেন নাসিরি, বিস্কর। আলিগড় বিশ্ববিদ্যালয়ের পড়াশুনা করার মাঝে ১৯৮০ সালে ইস্টবেঙ্গল ক্লাবের হয়ে ময়দানে শুরু হয় তাঁদের ফুটবল ঝলক।
![Kian Nasiri](https://kolkata24x7.in/wp-content/uploads/2022/01/13-18-03-268645063_5457935574233900_6315862777389095110_n-300x157.jpg)
মজিদ, খাবাজি এবং জামশিদ। আশির দশকে ইরানের এই তিন ফুটবলারকে দেখেছিল কলকাতা। মজিদের উত্থান ধুমকেতুর মতো। প্রচারে আসতে পারেননি খাবাজি। জামশিদ নাসিরি নেপথ্য নায়ক। প্রতি ম্যাচে নিঃশব্দে নিজের কাজটুকু করে যেতে তিনি। ঠিক যেমন ইরানে নিঃশব্দে ঘুণ পোকা ছড়িয়ে দিয়েছিল মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র।
মধ্য প্রাচ্যে মিলেছিল তেলের সন্ধান। তেলের বিপুল ভান্ডার। রাতারাতি বড়লোক হয়ে যাওয়ার মতো রসদ। প্রমাণ গুনেছিল ব্রিটেন। সাধারণ মানুষের অগোচরে পারস্যে প্রবেশ করেছিল গুপ্তচর। ইরানিরা বড়লোক হলেই তো মুশকিল। ব্রিটেনকে আর হয়তো তোয়াক্কাই করবে না আর! অংক কষে তাই ঝোলানো হল টোপ। এর জেরে বিখ্যাত ইসলামি বিপ্লব থেকে আধুনিক ইরানের জন্ম।
রাজতন্ত্র ইরান থেকে বিপ্লব আগুনে ঝলসানো দেশ কিশোর বয়সে নিজের চোখে দেখেছিলেন নাসিরি। ফুটবল খেলতে খুব ভালবাসতেন। খেলছিলেনও। ১৯৭৫ সাল থেকে সেখানকার পরিস্থিতি আরও ব্যাপক আকার ধারণ করতে শুরু করেছিলেন। ইতিহাসের বইয়ে ৭ জানুয়ারি ১৯৭৮ -এর কথা বিশেষভাবে উল্লেখ্য। এই তারিখকেই ইরানিয়ান বিপ্লবের জন্মলগ্ন হিসেবে গণ্য করা হয়। জামসেদ ভারতে এসেছিলেন ১৯৭৯ সালে। তাঁরই ছেলে কিয়ান হ্যাটট্রিক করল মোহন-ইস্ট ডার্বিতে। কিয়ান নাসিরির বয়স মাত্র ২১ বছর। এক নক্ষত্রের জন্ম হল ২০২২ সালে ৩০ জানুয়ারি।
কিয়ানের পায়ের জাদুতে নাসিরি পরিবার ধারাবাহিকতা ধরে রাখল। যেটা পারেননি মজিদ ও খাবাজি। তবে মজিদ এখনও বিশ্ময়। তাঁকে বিস্মৃতির অতল থেকে তুলে এনেছেন বন্ধু জামশেদ নাসিরি।