কেরালা ব্লাস্টার্স এফসি-র (Kerala Blasters) প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) অভিক চট্টোপাধ্যায় সম্প্রতি রাজ্য সরকারের কাছ থেকে ফুটবল ইকোসিস্টেম গড়ে তুলতে প্রয়োজনীয় সমর্থনের অভাব নিয়ে তীব্র ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন। ভারতীয় ফুটবলের উন্নয়নে সরকারি সহায়তার অভাব দীর্ঘদিন ধরে একটি জ্বলন্ত সমস্যা। ক্লাবগুলো যখন তাদের অর্থ ও শ্রম বিনিয়োগ করে ফুটবলের ভিত্তি মজবুত করার চেষ্টা করছে, তখন রাজ্য সরকারের উদাসীনতা তাদের পথে বড় বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে। সম্প্রতি ‘খেল নাউ টিভি’-র সঙ্গে এক সাক্ষাৎকারে অভিক চট্টোপাধ্যায় এই বিষয়ে খোলাখুলি কথা বলেছেন।
কেরালা ব্লাস্টার্স, যিনি কেরালার ফুটবলপ্রেমীদের কাছে একটি আবেগের নাম, তাদের সমাজের প্রতি দায়বদ্ধতা এবং তরুণ প্রজন্মের জন্য ফুটবলের পথ সুগম করার বিষয়ে বিশেষ গুরুত্ব দিয়েছেন। তিনি বলেন, “আমরা স্থানীয় শিশুদের জন্য একটি প্ল্যাটফর্ম তৈরি করছি, যারা দেশের প্রতিনিধিত্ব করার স্বপ্ন দেখে। যেসব শিশু তাদের রাজ্যের জন্য খেলতে চায়, আমরা তাদের জন্য একটি পথ তৈরি করে দিচ্ছি।” ক্লাবটি শুধু ফুটবলের মাঠে প্রতিযোগিতা করছে না, বরং সমাজের উন্নয়নে এবং তরুণ প্রতিভাদের গড়ে তোলার ক্ষেত্রেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে।
ফুটবল ইকোসিস্টেমে সরকারি সহায়তার প্রয়োজনীয়তা
ভারতীয় ফুটবলের কাঠামো এখনও শৈশব পর্যায়ে রয়েছে। এই পরিস্থিতিতে ক্লাবগুলোর জন্য সরকারি সহায়তা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। ইন্ডিয়ান সুপার লিগ (আইএসএল) ক্লাবগুলো ইতিমধ্যেই বিরাট অর্থ বিনিয়োগ করেছে, কিন্তু তারা এখনও লাভের মুখ দেখেনি। এখন যখন তারা তাদের গ্রাসরুট প্রোগ্রামকে শক্তিশালী করার পরিকল্পনা করছে, তখন তারা রাজ্য সরকারের কাছ থেকে নিয়ম-কানুনের ক্ষেত্রে শিথিলতা এবং সহযোগিতা আশা করে। অভিক চট্টোপাধ্যায় বলেন, “আমরা বিনামূল্যে স্টেডিয়াম চাই না। আমরা কিছু ভর্তুকি চাই। আমরা যদি কিছু সঞ্চয় করতে পারি, তবে তা আবার ফুটবলের উন্নয়নেই বিনিয়োগ করা হবে।”
কেরালা ব্লাস্টার্স শুধুমাত্র খেলাধুলার ক্ষেত্রে নয়, সমাজে কর্মসংস্থানের সুযোগ তৈরি করতেও অবদান রাখছে। তরুণ প্রজন্ম, যারা ফুটবলকে ক্যারিয়ার হিসেবে বেছে নিতে চায়, তাদের জন্য ক্লাবটি একটি স্বপ্নের প্ল্যাটফর্ম তৈরি করছে। এই ধরনের উদ্যোগ শুধু ক্লাবের ভবিষ্যৎ স্থায়িত্বের জন্য নয়, বরং ভারতীয় ফুটবলের গ্লোবাল মঞ্চে উত্থানের জন্যও গুরুত্বপূর্ণ।
অবকাঠামোর অভাব: একটি বড় চ্যালেঞ্জ
ভারতীয় ফুটবলের অন্যতম বড় সমস্যা হল অবকাঠামোর অভাব। বেশিরভাগ ক্লাবের নিজস্ব স্টেডিয়াম নেই, এবং তারা রাজ্য সরকারের উপর নির্ভর করে স্টেডিয়ামের জন্য। অভিক চট্টোপাধ্যায় জানান, একটি স্টেডিয়াম তৈরি করতে ২০০ কোটি টাকার বেশি বিনিয়োগ প্রয়োজন, যা আইএসএল ক্লাবগুলোর জন্য এই মুহূর্তে অসম্ভব। তিনি বলেন, “আমরা এখনই নিজস্ব স্টেডিয়াম তৈরির দিকে তাকাচ্ছি না। আমরা একটি কার্যকরী পিচ বা অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ অবকাঠামো তৈরি করতে চাই, যা আমাদের স্বনির্ভরতার পথে এগিয়ে যাওয়ার জন্য প্রাথমিক পদক্ষেপ হতে পারে।”
কিন্তু এই ধরনের অবকাঠামো তৈরিতে সরকারি সহায়তার অভাব ক্লাবগুলোর জন্য বড় হতাশার কারণ। রাজ্য সরকার যদি ভর্তুকি বা নিয়ম-কানুনের ক্ষেত্রে শিথিলতা প্রদান করত, তবে ক্লাবগুলো তাদের বিনিয়োগ আরও ফলপ্রসূভাবে ব্যবহার করতে পারত।
স্টেডিয়াম ব্যবস্থাপনায় সমস্যা
কেরালা ব্লাস্টার্স কালুর স্টেডিয়ামে খেলে, যেটি তাদের নিজস্ব নয়। এই স্টেডিয়ামে খেলার জন্য ক্লাবকে আর্থিক ও লজিস্টিকাল সমস্যার মুখোমুখি হতে হয়। এ বছরের শুরুতে কোচি কর্পোরেশন ক্লাবকে ম্যাচের জন্য বিনোদন কর দাবি করে নোটিশ জারি করেছিল। এই ধরনের আর্থিক চাপ ক্লাবের বাজেটের উপর অতিরিক্ত বোঝা চাপিয়ে দেয়।
এছাড়া, স্টেডিয়ামের একচেটিয়া ব্যবস্থাপনার অধিকার ক্লাবের হাতে না থাকায় লজিস্টিকাল সমস্যাও দেখা দেয়। মাঠের টার্ফের ক্ষতি একটি পুনরাবৃত্তিমূলক সমস্যা, যা খেলার মানকে প্রভাবিত করে। এই সমস্ত বাধা ক্লাবের কার্যক্রমকে মসৃণভাবে পরিচালনার পথে বড় প্রতিবন্ধকতা।
ভবিষ্যতের পথ
কেরালা ব্লাস্টার্সের মতো ক্লাব, যারা রাজ্যের বিশাল সমর্থন পায়, তাদের জন্য সমাজের প্রতি দায়বদ্ধতা পালন করা এবং তরুণ প্রতিভাদের জন্য একটি শক্তিশালী কাঠামো তৈরি করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। কিন্তু এই লক্ষ্য অর্জনে সরকারি সহায়তা ছাড়া পথচলা কঠিন। অভিক চট্টোপাধ্যায়ের বক্তব্য স্পষ্ট—ক্লাবগুলো শুধু নিজেদের জন্য নয়, ভারতীয় ফুটবলের ভবিষ্যৎ গড়তে কাজ করছে। সরকার যদি এই যাত্রায় তাদের পাশে থাকে, তবে ভারতীয় ফুটবলের সম্ভাবনা আরও উজ্জ্বল হবে।
ক্লাবগুলোর আশা, ভবিষ্যতে সরকার এবং সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ নিয়ম-কানুনের জটিলতা কমিয়ে এবং আর্থিক সহায়তা প্রদান করে ফুটবল ইকোসিস্টেমকে শক্তিশালী করতে এগিয়ে আসবে। এটি শুধু ক্লাবগুলোর জন্য নয়, সমগ্র দেশের ফুটবলপ্রেমীদের জন্যও একটি জয় হবে।