ডুরান্ড কাপের আরেকটি স্মরণীয় ফাইনালের দোরগোড়ায় পৌঁছে গিয়েছে নর্থইস্ট ইউনাইটেড এফসি (NorthEast United FC)। গত মঙ্গলবার সন্ধ্যায় শিলংয়ের জওহরলাল নেহরু স্টেডিয়ামে আয়োজিত সেমিফাইনালে শক্তিশালী শিলং লাজংকে ১-০ গোলে হারিয়ে ফাইনালের টিকিট নিশ্চিত করেছে হুয়ান পেদ্রো বেনালির (Juan Pedro Benali) দল। এই জয়ে তারা টানা দ্বিতীয়বার ফাইনালে উঠল। এবার তাদের প্রতিপক্ষ বাংলার নতুন দল ডায়মন্ড হারবার এফসি (Diamond Harbour FC)। একেবারেই নতুন এক দল, যারা প্রথমবার ডুরান্ডে খেলছে এবং সেমিফাইনালে চমক দেখিয়ে ইস্টবেঙ্গলকে পরাজিত করেছে।
Also Read | ব্রাইস মিরান্ডাকে বিদায় জানাল কেরালা ব্লাস্টার্স
ফাইনাল ম্যাচের আগেরদিন সাংবাদিকদের মুখোমুখি হয়েছিলেন নর্থইস্ট ইউনাইটেড এফসির স্প্যানিশ কোচ হুয়ান পেদ্রো বেনালি এবং অধিনায়ক মিকেল জাবাকো। আত্মবিশ্বাসী হলেও, প্রতিপক্ষ ডায়মন্ড হারবারকে কোনোভাবেই ছোট করে দেখছেন না কোচ বেনালি। তিনি বলেন, “এটা ফাইনাল। এখানে নতুন বা পুরনো দলের প্রশ্ন নেই। এটা দুটো দলের লড়াই। ডায়মন্ড হারবার অসাধারণ একটা দল, যারা এই বছর ইস্টবেঙ্গলকে হারিয়ে সবাইকে চমকে দিয়েছে। আমরা তাদের প্রতি সম্পূর্ণ সম্মান জানাই। কিন্তু ফাইনাল মানেই চাপ, মানেই লড়াই।”
বাংলার ঐতিহ্যবাহী দলগুলি মোহনবাগান, ইস্টবেঙ্গল এবং মহামেডানের মতো সমর্থক সংখ্যা নেই ডায়মন্ড হারবার এফসির। তাহলে কি নর্থইস্টের জন্য ম্যাচ সহজ হবে? প্রশ্ন শুনেই কোচ বেনালি উল্টো মত পোষণ করলেন। তাঁর বক্তব্য, “আমি উল্টোটা মনে করি। বেশি দর্শক থাকলে, খেলার মান বাড়ে। দল বা জনপ্রিয়তার চেয়ে বড় হলো ফুটবল। আমি সকল দর্শকদের বলবো, কাল স্টেডিয়ামে আসুন। এটা শুধু একটা খেলা নয়, এটা আমাদের ভালোবাসা, আমাদের উৎসব। ফাইনাল মানেই ফুটবলের জয়।”
Also Read | কবে থেকে মিলবে মোহনবাগানের এসিএল ম্যাচের টিকিট?
গত বছরের ডুরান্ড ফাইনালে নর্থইস্ট ইউনাইটেড ছিল আন্ডারডগ। কিন্তু এবার পরিস্থিতি একেবারেই অন্যরকম, ফেভারিটের তকমা নিয়েই নামছে তারা। এই প্রসঙ্গে কোচ বলেন, “ফাইনালে কোনো ফেভারিট থাকে না। এখানে বড় বা ছোট দলের ধারণা অপ্রাসঙ্গিক। দুটো দলই যোগ্যতা অর্জন করেই এসেছে। আমাদের পুরো মনোযোগ রাখতে হবে খেলার প্রতি।”
নর্থইস্ট দলের মালিক জন আব্রাহামের উপস্থিতি প্রসঙ্গেও প্রশ্ন ওঠে। কারণ গত বছর ফাইনালের সময় উপস্থিত ছিলেন। এবছরও কি তিনি উপস্থিত থাকবেন? হুয়ান পেদ্রো বেনালি বলেন, “এটা জনকে জিজ্ঞেস করতে হবে। তবে তিনি সবসময় আমাদের পাশে থাকেন। তাঁর একটুকু হাসি বা চাহনি থেকেই আমরা অনুপ্রাণিত হই। তিনি আমাদের আশা, আমাদের শক্তি।”
ডায়মন্ড হারবার দলের অন্যতম খেলোয়াড় লুকা মাজসেনকে ঘিরে কি কোনো বিশেষ পরিকল্পনা রয়েছে? প্রশ্ন শুনে বেনালি হাসতে হাসতে বলেন, “লুকা আমার ভালো বন্ধু ও অসাধারণ একজন খেলোয়াড়। তবে শুভকামনা আজ নয়, কাল ম্যাচের পর থেকে। আমরা লড়াই করতেই এসেছি।”
এখনও আইএসএল অনিশ্চিত। এহেন প্রেক্ষাপটে খেলোয়াড়দের মানসিক প্রস্তুতি কতটা কঠিন হচ্ছে? বেনালির বলেন, “এটা শুধু আমাদের নয়, সাংবাদিক, সাপোর্ট স্টাফ, এমনকি ফুটবল প্রেমী প্রত্যেক মানুষের চিন্তার বিষয়। ফুটবল শুধু একটি খেলা নয়, এটাই আমাদের জীবন। ১৫ কোটি মানুষ এই দেশে ফুটবল ভালোবাসে। এটি স্পেনের জনসংখ্যার চারগুণ। এতবড় একটা ভিত্তি নিয়ে বলবেন ফুটবল গুরুত্বপূর্ণ নয়?”
তিনি আরও বলেন, “আমরা মাত্র দুই সপ্তাহ আগে প্রি-সিজন শুরু করেছি। অনেক নতুন খেলোয়াড় এসেছে। প্রতিটি ম্যাচই আমাদের কাছে শেখার সুযোগ। প্রতি তিনদিন অন্তর খেলা, জলবায়ু পরিবর্তন, যাতায়াত সব মিলিয়ে ফাইনালটা হবে মানসিক এবং শারীরিক লড়াই। যে দলটা ছোট ছোট খুঁটিনাটি ব্যাপারে মনোযোগী থাকবে এবং মানসিকভাবে দৃঢ় থাকবে, সেই জিতবে।”
ডুরান্ড কাপের ফাইনাল শুধু নর্থইস্ট বা ডায়মন্ড হারবারের ম্যাচ নয়। বরং ভারতীয় ফুটবলের উন্নতি ও ঐক্যের প্রতীক হয়ে উঠতে পারে, এমনটাই জানালেন বেনালি। তিনি বলেন, “ফুটবলের ভবিষ্যৎ আমাদেরই হাতে। কাল মাঠে যদি ৩০ হাজার মানুষ আসে, তাহলে সবাই বুঝবে আমরা ফুটবল ভালোবাসি এবং আমরা একসাথে।”
পাশাপাশি অধিনায়ক মিকেল জাবাকোকে প্রশ্ন করা হয় ডায়মন্ড হারবার এবং ফাইনালকে ঘিরে আপনার দৃষ্টিভঙ্গি কী? তিনি বলেন, “হ্যাঁ, কোচদের দৃষ্টিভঙ্গি থেকে বললে। আমরা এমন একটি দলের বিপক্ষে খেলতে নামবো, যারা ফাইনালে উঠেছে। আমরা জানি, একটি টুর্নামেন্টে বা কাপ প্রতিযোগিতায় ফাইনালে ওঠা খুব কঠিন ব্যাপার। প্রতিপক্ষ যেই হোক না কেন, আমরা তাদের সম্পর্কে জানি। আমরা তাদের সব শক্তির জায়গা সম্পর্কে অবগত। আমরা জানি, তাদের দলে অনেক ভালো, লড়াকু এবং শারীরিকভাবে শক্তিশালী খেলোয়াড় আছে। তাই আমরা পুরোপুরি সচেতন, ওরা কেমনভাবে খেলে এবং কীভাবে আমাদের মোকাবিলা করতে পারে।”