২২শে জানুয়ারি। ইডেনে ২২ গজে লড়াই করবে ভারতীয় দল আর ইংল্যান্ড দল। লড়াই টি-টোয়েন্টি ম্যাচের। এই ম্যাচের মাঝেই একটি ব্লক, বলা ভালো একটি স্ট্যান্ড নাম বদলে হয়ে যাবে “ঝুলন গোস্বামী স্ট্যান্ড” (Jhulan Goswami ) বলে । ইডেনের ক্লাব হাউসের ঠিক ডান দিকের ব্লকটিকে এখন বলা হয় “বি ব্লক” । নিচের অংশ টি “বি” । উপরের অংশটি “ বি ওয়ান” ( আপার টিয়ার)।
এই বি ব্লকের মাঝে যে কংক্রিটের অংশটি রয়েছে, তার মধ্যে এখনই লেখা হয়ে গেছে ঝুলন গোস্বামী স্ট্যান্ড লেখাটি। ঝুলন যখন আন্তর্জাতিক ক্রিকেট থেকে অবসর নেন, সেই বাইশ সালে অর্থাৎ ২০২২ সালে তখনই সিএবির পক্ষ থেকে জানিয়ে দেওয়া হয়েছিল যে ইডেনের একটা স্ট্যান্ড ঝুলন গোস্বামীর নামে হবে। কি আশ্চর্য তাই না! ২০২২ সালের প্রথম ভাবনা ২০২৪ সালে তা পূর্ণাঙ্গ রূপ নিতে চলেছে এবং ২২ শে জানুয়ারি একটি আন্তর্জাতিক ম্যাচের আসরে!!
২০২২ সালে সেই সময় সিএবির সভাপতি ছিলেন অভিষেক ডালমিয়া। আর তার সঙ্গে ছিলেন সচিব স্নেহাশিস গাঙ্গুলি। আজ স্নেহাশীষ গাঙ্গুলি এখন সংস্থার সভাপতি।
ঝুলন গোস্বামী ভারতীয় প্রমিলা ক্রিকেটের এক উজ্জ্বল তারকা, কিংবদন্তি ক্রিকেটার বলাই ভালো। তিনি আইসিসির ক্রিকেটার অফ দা ওম্যান হয়েছিলেন। ঝুলন বিশ্বের মধ্যে এক নম্বর বোলার যিনি একদিনের আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে ২৫৫ টি উইকেট পেয়ে এগিয়ে আছেন সকলের চেয়ে । আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে তিনি দুটি দশক খেলে ফেলেছেন। বিভিন্ন ধরনের ক্রিকেট মিলিয়ে ২৮৪ ম্যাচ খেলেছেন আর এই সব ম্যাচ খেলতে গিয়ে তার ঝুলিতে জমা হয়ে রয়েছে ৩৪৫ টি উইকেট।
এমন কৃতিত্বের দৌড়ে ভারতীয় ক্রিকেটে ঝুলনের আগে আরো দুই ক্রিকেটার আছেন। অবশ্যই প্রমিলা ক্রিকেটার – যাদের নাম ক্রিকেট মাঠে হয় প্যাভিলিয়নে নয়তো বিখ্যাত মাঠের গেটে অর্থাৎ প্রবেশদ্বারে তাদের নাম লেখা আছে।
দিল্লিতে অঞ্জুম চোপড়া
ভারতের প্রাক্তন ক্রিকেটার, অধিনায়ক অঞ্জুম চোপড়া। দিল্লির ক্রিকেটার তাই দিল্লির ফিরোজ শাহ কোটলা মাঠের তিন এবং চার নম্বর গেটে আজ তাঁর নামে লেখা। এই গেট এখন বলাই হয় অঞ্জুম চোপড়া গেট। ২০১৭ সালের নভেম্বর মাসে দিল্লিতে অঞ্জুমের নামে এই দুটি গেট বানিয়ে ফেলা হয় এবং উদ্বোধন হয়। দিল্লির এই রূপসী ক্রিকেটারটি কৃতিত্ব কিন্তু কম নয়। তিনি আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে ৩০০০ রান করেছেন। শুধু তাই নয় তিনি ছটি বিশ্বকাপেও খেলেছেন। আনজুম যে ১৫৭ টি মোট ম্যাচ খেলেছেন , তিনি প্রথম ক্রিকেটার (ভারতীয়দের মধ্যে ) যিনি ১০০টি একদিনের আন্তর্জাতিক ম্যাচ খেলে ফেলেছিলেন।
সিমলার সুষমা
ঝুলন গোস্বামীর সাথে খেলতেন আরও একজন প্রমিলা ক্রিকেটার। তিনি ২০১৪ সালে ভারতীয় দলের সাথে ইংল্যান্ড সফর করেন এবং সেটাই ছিল তাঁর অভিষেক। সিমলার মেয়ে অর্থাৎ হিমাচল প্রদেশের ক্রিকেটার এবং হিমাচল প্রদেশ ক্রিকেট অ্যাসোসিয়েশনের যে একাডেমী আছে সেখান থেকেই উঠে আসেন এই সুষমা ভার্মা। উইকেট কিপার ব্যাটসম্যান। হিমাচল প্রদেশ ক্রিকেট অ্যাসোসিয়েশনের মোট পাঁচটি মাঠ আছে। তার মধ্যে সেরা ধর্মশালা ক্রিকেট মাঠটি। এই পাঁচটি স্টেডিয়ামের মধ্যে সবচেয়ে হালফিলের স্টেডিয়াম যেটি হয়েছে সেটি এই সুষমার নিজের জেলায় সিমলাতে। প্রায় তিন কোটি টাকা খরচ করে এই স্টেডিয়ামটি তৈরি করা হয়েছে। সুষমা যেহেতু সিমলারই মেয়ে, তাই এই স্টেডিয়ামের প্যাভিলিয়নটি তার নামেই লেখা হয়ে রয়েছে। হিমাচল প্রদেশ ক্রিকেট অ্যাসমিশনের সভাপতি অনুরাগ ঠাকুর যখন ছিলেন তখন এই স্টেডিয়ামটির উদ্বোধন হয়। তা আজ থেকে প্রায় বছর চারেক হতে চলল।
এর থেকে একটা জিনিস খুব স্পষ্ট যে ভারতে প্রমিলা ক্রিকেটারদের জনপ্রিয়তা যথেষ্ট ভালো এবং শুধু তাই নয় তাদের নামে কোথাও স্টেডিয়ামের গেট কোথাও স্টেডিয়ামের প্যাভিলিয়ন আর একদম হালফিলে ইডেনের মতো মাঠে ঝুলন গোস্বামীর নামে স্ট্যান্ড তৈরি হয়ে যাচ্ছে। ভারতের বাইরে অবশ্য প্রমিলা ক্রিকেটারদের নামে স্টেডিয়াম, স্টেডিয়ামের গেট এ ধরনের ব্যাপার অনেক আগে থেকেই চালু আছে।
অস্ট্রেলিয়া:
২০১৮ সালের মার্চ মাস। অস্ট্রেলিয়ার মহিলা দলের অধিনায়িকা কারেন রোল্টন এর নামে নামাঙ্কিত হয় বিখ্যাত ওভাল মাঠ। অস্ট্রেলিয়ান ক্রিকেট অ্যাসোসিয়েশন এই প্রমিলা ক্রিকেটারটির নামে এই স্টেডিয়ামের নামকরণ করে ফেলে। কারেনের ১৪ বছরের ইন্টারন্যাশনাল ক্রিকেট ক্যারিয়ারে অনেক মাইলস্টোন। তিনি ১৪ টি টেস্ট ম্যাচ খেলে ১০০২ রান করে রেখেছেন । এর মধ্যে আছে আবার একটি ডাবল সেঞ্চুরি। ১৪১ টি ওয়ানডে ইন্টারন্যাশনাল ম্যাচ খেলার সঙ্গে সঙ্গে করে রেখেছেন প্রায় ৪৮০০ রান। তিনি আবার টি-টোয়েন্টি ইন্টারন্যাশনাল ম্যাচ ও খেলেছেন। ১৫টি ম্যাচে তার রানের সংগ্রহ প্রায় ৪০০। নাম পরিবর্তিত হয়ে যাওয়া এই কারেন রোলটন ওভাল মেয়েদের ক্রিকেটের সেরা মাঠ। এই মাঠে, অস্ট্রেলিয়ার জাতীয় যে ক্রিকেট হয় অর্থাৎ ন্যাশনাল লিগ – সেই সব ম্যাচ এই মাঠেই হয়। প্রমিলাদের “বিগ ব্যাস” ক্রিকেট টুর্নামেন্টের ম্যাচেও হয় এই মাঠে। এমনকি সেফিল্ড শিল্ডের ম্যাচও হয় এখানে।
ইংল্যান্ড:
ইংল্যান্ডের ঐতিহাসিক লর্ডসে অভিষেক ঘটেছিল বাংলারই সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায়ের। আর এই মাঠেই শেষ আন্তর্জাতিক ম্যাচ খেলেছিলেন ঝুলন গোস্বামী। তিনি যেমন ভারতের তেমনি তিনি বাংলারও। যখন ঝুলন এই ম্যাচ খেলছিলেন ততদিনে নিশ্চয়ই তিনি জেনে ফেলেছিলেন এই লর্ডসেই একটি গেট আছে সেটি একজন ইংল্যান্ডের প্রমিলা ক্রিকেটারের নামে। লর্ডস ক্রিকেট গ্রাউন্ডের একটি গেটের নাম ছিল ইস্ট গেট। সেই গেটের নাম বদলে যায় ২০২২ এর অগাস্ট মাসে। ইংল্যান্ডের প্রাক্তন মহিলা ক্রিকেটার এবং অধিনায়িকা রাচেল হেয়র ফ্লিন্ট এর নামে ( হেয়র ফ্লিন্ট গেট) । এই গেট এখন এই নামে পরিচিত। কে এই রাচেল? রাসেল ইংল্যান্ডের হয়ে টেস্ট আর ওয়ানডে মিলিয়ে প্রায় ৪৫টি বেশি ম্যাচ খেলেছেন। ২ হাজারেরও বেশি তার রান। এমসিসিতে তিনি অন্যতম প্রধান একজন মহিলা মেম্বার। শুধু তাই নয় ইন্টারন্যাশনাল ক্রিকেট কাউন্সিল যখন হল ফ্রেম চালু করে তখন তিনি প্রথম প্রমিলা ক্রিকেটার যিনি এই তালিকায় এসেছিলেন।
ইংল্যান্ড:
নাট সিভার ব্রান্ট । এখনো ইংল্যান্ডের হয়ে এই প্রমিলা ক্রিকেটারটি খেলছে। বিশ্বের অন্যতম সেরা অলরাউন্ডার। সারে ক্রিকেট গ্রাউন্ডের কেনিনিটন ওভাল তার নামে একটি গেটের নামকরণ করেছে এক্কেবারে হালে। করবেই না কেন! সারের এই প্রমিলা ক্রিকেটারের দক্ষতা দেখুন, ১৫০ টার বেশি আন্তর্জাতিক ম্যাচ খেলা হয়ে গেছে। সাত হাজার রান টপকে গেছেন। ১৮০ টি উইকেট শিকার হয়ে গেছে।