এশিয়ান গেমসে অ্যাথলেটরা থাকবেন জাহাজে! বিশেষ প্রস্তুতিতে এই দেশ

২০২৬ সালের এশিয়ান গেমস (Asian Games 2026) অনুষ্ঠিত হতে চলেছে জাপানের (Japan) আইচি ও নাগোয়ায়। অনুষ্ঠিত হবে আগামী বছর ১৯ সেপ্টেম্বর থেকে ৪ অক্টোবর পর্যন্ত।…

Asian Games 2026 athletes staying on floating Games Village

২০২৬ সালের এশিয়ান গেমস (Asian Games 2026) অনুষ্ঠিত হতে চলেছে জাপানের (Japan) আইচি ও নাগোয়ায়। অনুষ্ঠিত হবে আগামী বছর ১৯ সেপ্টেম্বর থেকে ৪ অক্টোবর পর্যন্ত। তবে এই সময়কালটি জাপানে টাইফুন বা ঘূর্ণিঝড়ের মরসুমে হওয়ায় আয়োজকদের জন্য এটি এক বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে। বিশেষ করে এবারের গেমসে অ্যাথলেটদের এক-তৃতীয়াংশ রাখা হবে একটি বিলাসবহুল ক্রুজ জাহাজে, যা নাগোয়া বন্দরে নোঙর করে রাখা হবে। এই ‘ভাসমান গেমস ভিলেজ’র কারণে প্রাকৃতিক দুর্যোগের সময় দ্রুত ও নিরাপদ সরিয়ে নেওয়ার জন্য আয়োজন করা হয়েছে বিশেষ পরিকল্পনা।

অলিম্পিক কাউন্সিল অব এশিয়ার (OCA) দুই সিনিয়র কর্মকর্তা জানিয়েছেন, টাইফুন, সুনামি বা অন্য কোনো প্রাকৃতিক দুর্যোগের সময় দ্রুত সরিয়ে নেওয়ার জন্য একটি পূর্ণাঙ্গ কন্টিনজেন্সি পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে। নাগোয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের ডিজাস্টার মিটিগেশন রিসার্চ সেন্টারের মতে, উপকূলীয় শহর নাগোয়া বিশেষভাবে ঝুঁকিপূর্ণ, কারণ এখানে একাধিক নদী রয়েছে এবং এটি প্রায়শই বন্যার কবলে পড়ে।

   
Japan Planning in Asian Games 2026 athletes staying on floating Games Village
Japan Planning in Asian Games 2026 athletes staying on floating Games Village

OCA-র ডেপুটি ডিরেক্টর জেনারেল বিনোদ তিওয়ারি বলেন, “জাপানি কর্তৃপক্ষ প্রাকৃতিক দুর্যোগ সামলাতে অত্যন্ত অভিজ্ঞ এবং আমরা আত্মবিশ্বাসী যে তারা যথাযথ ব্যবস্থা নেবে।” এশিয়ান গেমস কো-অর্ডিনেশন কমিটির চেয়ারম্যান তায়্যাব ইকরাম বলেন, “নাগোয়া টোকিওর তুলনায় বেশি প্রাকৃতিক দুর্যোগপ্রবণ। আমরা বিভিন্ন আশ্রয়কেন্দ্র ঘুরে দেখেছি এবং স্থানীয় কর্তৃপক্ষের কাছ থেকে আগের দুর্যোগগুলোর বিস্তারিত তথ্য পেয়েছি।”

এই ভাসমান গেমস ভিলেজে থাকবে প্রয়োজনীয় সব সুবিধা — ডাইনিং হল, জিম, চিকিৎসা পরিষেবা এবং বিনামূল্যে ইন্টারনেট। এই প্রথমবারের মতো কোনো এশিয়ান গেমসে এত বড় পরিসরে ক্রুজ জাহাজকে অ্যাথলেটদের আবাস হিসেবে ব্যবহার করা হবে। প্রায় ৪,৬০০ অ্যাথলেট ও কর্মকর্তাকে রাখা হবে এই বিলাসবহুল জাহাজে, যা কিনজো পিয়ারে থাকবে। আরও ২,৪০০ জনকে রাখা হবে কাছাকাছি একটি পিয়ারে।

তবে বন্দরের জাহাজে থাকা অনেক বেশি ঝুঁকিপূর্ণ, বিশেষ করে যদি সুনামি বা টাইফুন হয়। এজন্য আয়োজকরা সিদ্ধান্ত নিয়েছেন যে দুর্যোগের সময় এই জাহাজটি দ্রুত খোলা সাগরে চলে যাবে, যেখানে অপেক্ষাকৃত নিরাপদ অবস্থানে থাকবে। অন্যদিকে, গার্ডেন পিয়ারে থাকা অ্যাথলেটদের কাছের আশ্রয়কেন্দ্রে সরিয়ে নেওয়া হবে এবং সেখান থেকে তাদের হোটেল বা অন্য নিরাপদ জায়গায় পাঠানো হবে।

তিওয়ারি আরও জানান, “এই ক্রুজ জাহাজ শুধু একটি আবাস নয়, এটি ২০তম এশিয়ান গেমসের প্রতীক হয়ে উঠবে। এটি অনেক অ্যাথলেটের জীবনের একবারের নতুন অভিজ্ঞতা হবে — এক ছাদের নিচে বিভিন্ন দেশের অ্যাথলেটদের সঙ্গে থাকা এবং একসঙ্গে খেলা।”

তবে কিছু চ্যালেঞ্জও রয়েছে। একমাত্র গ্যাংওয়ে দিয়ে জাহাজে ওঠা-নামা করার ফলে ভিড় বা বিলম্ব হতে পারে। এজন্য OCA কর্তৃপক্ষ দ্বিতীয় গ্যাংওয়ে রাখার পরামর্শ দিয়েছে, যাতে দ্রুততার সঙ্গে সবাই জাহাজে উঠতে বা নামতে পারে।

সবশেষে কর্মকর্তারা বলেন, “অ্যাথলেটদের নিরাপত্তা এবং সুস্থতা আমাদের প্রথম অগ্রাধিকার। আমরা সব ধরনের দুর্যোগের জন্য প্রস্তুত আছি, এবং অ্যাথলেটদের জন্য সবরকমের দিকনির্দেশনা ও প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করা হবে।” ২০২৬ সালের এশিয়ান গেমস শুধু ক্রীড়ার এক বিশাল উৎসব নয়, বরং প্রযুক্তি, পরিকল্পনা ও দুর্যোগ ব্যবস্থাপনার একটি নজির হয়ে উঠবে — এমনটাই প্রত্যাশা আয়োজক ও আন্তর্জাতিক মহলের।