ইন্ডিয়ান সুপার লিগের (ISL) ২০২১-২২ মরসুমের শিরোপা জয়ী হায়দরাবাদ ফুটবল ক্লাব (Hyderabad FC) হঠাৎ করেই নিজাম শহর থেকে রাজধানী দিল্লিতে (Delhi) ঘাঁটি স্থানান্তরের সিদ্ধান্তে হতাশ হয়ে পড়েছেন হায়দরাবাদ ও তেলেঙ্গানার ফুটবলপ্রেমীরা। একসময় দেশের ফুটবলের ‘মক্কা’ হিসেবে খ্যাত হায়দরাবাদ, আজ যেন আবারও পিছিয়ে পড়ল দেশের ফুটবল মানচিত্রে।
এই সিদ্ধান্তে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন ভারতের প্রাক্তন দুই ফুটবল অধিনায়ক এবং হায়দরাবাদের গর্ব শাব্বির আলি ও ভিক্টর আমলরাজ। তাঁদের মতে, হায়দরাবাদ শুধুমাত্র একটি ফুটবল ক্লাব ছিল না, বরং তেলেঙ্গানার তরুণ প্রতিভাদের কাছে একটি স্বপ্ন, একটি লক্ষ্য। এই সিদ্ধান্তে সে স্বপ্ন ভেঙে চুরমার হয়েছে।
প্রাক্তন ভারত অধিনায়ক শাব্বির আলি বলেন, “এইচএফসির কারণে হায়দরাবাদ ও তেলেঙ্গানার অনেক তরুণ ফুটবলার নিজের ভবিষ্যতের স্বপ্ন দেখতে শিখেছিল। এই ক্লাবের উপস্থিতি তাদের আশা জাগিয়েছিল যে তারাও একদিন আইএসএলে খেলতে পারবে। এখন সেই আশাটাই শেষ হয়ে গেল।”
৬৯ বছর বয়সী শাব্বির, যিনি দেশের প্রথম ফুটবলার হিসেবে ধ্যানচাঁদ পুরস্কারে সম্মানিত হয়েছেন, বলেন, “হায়দরাবাদ বা তেলেঙ্গানার ফুটবলের মান এখনও ততটা উন্নত নয় যে এখানকার খেলোয়াড়রা সরাসরি আইএসএলে সুযোগ পাবে। তবে এইচএফসি ও আই-লিগে খেলা শ্রীনিধি ডেকান এফসি অনেকটাই অনুপ্রেরণা জুগিয়েছিল এখানকার তরুণদের জন্য।”
তিনি আরও বলেন, “প্রাক্তন কোচ মানোলো মার্কুয়েজের প্রশংসা করতেই হবে। তিনি অনেক তরুণ খেলোয়াড়কে সুযোগ দিয়েছেন, জাতীয় দলে খেলার পথ দেখিয়েছেন। তার কোচিংয়ে এইচএফসি শুধু ভালো পারফর্ম করেনি, বরং তরুণ প্রতিভাদেরও তুলে ধরেছিল।”
ভিক্টর আমলরাজ, যিনি একমাত্র খেলোয়াড় হিসেবে কলকাতার তিন ঐতিহাসিক ক্লাব—ইস্ট বেঙ্গল, মোহনবাগান ও মোহামেডান স্পোর্টিংদীর্ঘ সময় খেলেছেন, তিনিও স্পষ্টভাবে তার হতাশা প্রকাশ করেছেন। তিনি বলেন, “আজকের পর থেকে আমরা হায়দরাবাদিরা আইএসএলে আর কোনো দলকে নিজেদের বলতে পারব না। এই অনুভূতির অভাব অনেক বড় ক্ষতি।”
তিনি আরও বলেন, “রাজ্য সরকার, অল ইন্ডিয়া ফুটবল ফেডারেশন (AIFF), শ্রীনিধি গ্রুপ ও তেলেঙ্গানা ফুটবল অ্যাসোসিয়েশন মিলিয়ে সাম্প্রতিক কালে ফুটবলকে সামনে নিয়ে আসার জন্য প্রচুর কাজ করেছে। হায়দরাবাদে ফিফা ফ্রেন্ডলি ম্যাচ, তিন দেশের টুর্নামেন্ট ও সান্তোষ ট্রফির মতো আয়োজন হয়েছে। এমন অবস্থায় এইচএফসির চলে যাওয়া খুবই হতাশাজনক।”
যদিও এইচএফসিতে স্থানীয় খেলোয়াড়ের সংখ্যা খুব কম ছিল, তবুও ক্লাবের অস্তিত্ব নিজেই একটি পরিচয় ছিল, একটি আত্মবিশ্বাস ছিল তেলেঙ্গানার ফুটবলপ্রেমীদের মধ্যে।
বিশ্লেষকরা মনে করছেন, এই সিদ্ধান্ত তেলেঙ্গানার ফুটবল সংস্কৃতিকে বড় ধাক্কা দেবে। তরুণ প্রতিভারা হয়তো আবার ফুটবলকে ক্যারিয়ার হিসেবে দেখার আগ্রহ হারাতে পারে। এখন আশার চোখে তাকিয়ে আছে সকলে—ফিরে আসবে কি ‘আপনা হায়দরাবাদ’?
ভবিষ্যতের সম্ভাবনার দিকে তাকিয়ে ভিক্টর আমলরাজ বলেন, “হ্যাঁ, কিছু একটা ভুল হয়েছে। তবে আমি আশাবাদী, হায়দরাবাদ আবার আইএসএলে ফিরবে। আমরা যে ঐতিহ্য বহন করি, তা সহজে মুছে যাবে না।”
যদিও হায়দরাবাদ এফসি ইন্ডিয়ান সুপার লিগের পরবর্তী মরসুম থেকে তাদের নাম প্রত্যাহার করছে না। বরং, তারা আগামী আইএসএল মরসুমের জন্য দলটির পুনঃব্র্যান্ডিং এবং রাজধানী দিল্লিতে স্থানান্তরের পরিকল্পনা করছে।