ভারতীয় সিনিয়র জাতীয় ফুটবল দলের (Indian Football Team) প্রশিক্ষণ শিবির মানেই স্বপ্নপূরণের এক মঞ্চ। এখানে প্রথমবার জার্সি পরে অনুশীলনে নামা, জাতীয় দলের জার্সিতে মাঠে পা রাখা কিংবা দেশের হয়ে প্রথম গোল করার স্বপ্ন নিয়ে হাজির হন বহু তরুণ ফুটবলার। এমনই তিন স্বপ্নবাজ ফুটবলারের নাম — সুহেল আহমেদ ভাট (Suhail Ahmad Bhat), নিখিল প্রভু (Nikhil Prabhu) এবং হৃত্বিক তিওয়ারি (Hrithik Tiwari)। এই তিনজনই প্রথমবারের মতো সিনিয়র জাতীয় দলের শিবিরে ডাক পেয়ে স্বপ্নপূরণের পথে এক বড় ধাপ ফেলেছেন।
২০ বছর বয়সী সুহেল ভাট হলেন শিবিরের সবচেয়ে কনিষ্ঠ সদস্য। যখন সুনীল ছেত্রী ভারতের হয়ে অভিষেক করেন ও প্রথম গোল করেন, তখন মাত্র দুই মাসের শিশু ছিলেন তিনি। আজ সেই ছেত্রীর সঙ্গেই অনুশীলন করছেন একসঙ্গে। তিনি বলেন, “ছেত্রী ভাইয়ের সঙ্গে অনুশীলন করা স্বপ্নের মতো। তাঁর সঙ্গে কথা বলা, শেখা এটা আমার বহু দিনের আকাঙ্ক্ষা ছিল।”
সুহেল মোহনবাগান সুপার জায়ান্টের হয়ে ক্লাব ফুটবল খেলেন এবং ভারতের অনূর্ধ্ব-১৬, অনূর্ধ্ব-১৯ ও অনূর্ধ্ব-২৩ দলের হয়ে প্রতিনিধিত্ব করেছেন। ২০২৩ সালের এএফসি অনূর্ধ্ব-২৩ এশিয়ান কাপ বাছাইপর্বে ১৮ বছর বয়সেই জাতীয় দলে সুযোগ পেয়েছিলেন। তবে এবার সিনিয়র দলে সুযোগ পাওয়াটা তাঁর জীবনে বিশেষ তাৎপর্য বহন করছে।
তিনি বলেন, “অনূর্ধ্ব পর্যায়ে জাতীয় দলের হয়ে খেললেও সিনিয়র দলে আসা একেবারেই আলাদা। এখানকার প্রতিযোগিতা, মান এবং চ্যালেঞ্জ একদম ভিন্ন। আমি নিজের অভিষেকের স্বপ্ন দেখি, শুধু আমার জন্য নয়, কাশ্মীরের জন্যও। এটা আমার পরিবারের, আমার এলাকার স্বপ্ন। আমি কঠোর পরিশ্রম চালিয়ে যাব।”
পাঞ্জাব এফসির হয়ে ইন্ডিয়ান সুপার লিগে দুর্দান্ত পারফর্ম করে নজর কেড়েছেন ২৪ বছর বয়সী ডিফেন্সিভ মিডফিল্ডার নিখিল প্রভু। জাতীয় দলের কোচ মানোলো মার্কুয়েজ তার খেলা দেখে মুগ্ধ, বিশেষ করে তার পজিশন ভেদে খেলার দক্ষতা ও বল জেতার ক্ষমতা।
নিখিল বলেন, “জাতীয় দলের ডাক পাওয়া আমার এবং আমার পরিবারের এক বিরাট স্বপ্নপূরণ। তবে আমি জানি, এটি শুরু মাত্র। এখান থেকে অনেক দূর যেতে হবে।”
তিনি আরও বলেন, “ক্লাবে খেললে বিদেশিদের সঙ্গে খেলা হয় এবং একটা নির্দিষ্ট স্টাইলে খেলা হয়। কিন্তু জাতীয় দলে আপনি তাদের সঙ্গে খেলছেন, যাঁদের আপনি ছোটবেলা থেকে দেখে এসেছেন। ফলে এটা এক বিশেষ দায়িত্ব এবং সম্মানের অনুভূতি দেয়।”
এদিকে ২৩ বছর বয়সী গোলকিপার হৃত্বিক তিওয়ারির কাছে এই শিবির মানে শেখার এক বিশাল সুযোগ। তিনি এফসি গোয়ার হয়ে খেলে থাকেন এবং কোচ মানোলো মার্কুয়েজ মনে করেন, ভবিষ্যতে হৃত্বিক ভারতীয় ফুটবলের অন্যতম সেরা গোলকিপার হয়ে উঠবেন।
“জাতীয় দলে ডাক পাওয়া সত্যিই অবিশ্বাস্য এক অনুভূতি। আমি ছোটবেলা থেকে এই স্বপ্ন দেখেছি। কঠোর পরিশ্রম করেছি, অনেক কিছু ত্যাগ করেছি। আজ এই পর্যায়ে আসতে পেরে আমি গর্বিত,” বলেন ঋত্বিক।
তিনি আরও যোগ করেন, “আমার মতো তরুণ গোলকিপারদের জন্য এই শিবির শেখার এক বড় প্ল্যাটফর্ম। অমরিন্দর সিং, বিশাল কাইথ ও গুরমিত সিং মতো অভিজ্ঞদের সঙ্গে প্রতিদিন অনুশীলন করে অনেক কিছু শিখছি।”
এই তিন ফুটবলারের চোখে এখন শুধু একটাই লক্ষ্য ভারতের হয়ে মাঠে নামা। দেশের জার্সিতে নিজের সেরাটা দেওয়া এবং আগামী প্রজন্মের অনুপ্রেরণা হয়ে ওঠা। তাদের এই যাত্রা শুরু হয়েছে এখনই, আর এই যাত্রার গন্তব্য হতে পারে ভারতীয় ফুটবলের এক নতুন দিগন্ত।