ভারতের শীর্ষস্থানীয় ফুটবল লিগ ইন্ডিয়ান সুপার লিগের (ISL) ভবিষ্যৎ বর্তমানে এক গভীর অনিশ্চয়তার মুখে দাঁড়িয়ে। ২০১৪ সাল থেকে শুরু হওয়া এই লিগ প্রথম থেকেই দেশজুড়ে বিপুল জনপ্রিয়তা অর্জন করেছে। দেশীয় ফুটবলারদের পাশাপাশি আন্তর্জাতিক তারকা খেলোয়াড় ও কোচদের উপস্থিতিতে এই টুর্নামেন্ট ভারতীয় ফুটবলের পেশাদার মানে পৌঁছানোর অন্যতম চালিকা শক্তি হয়ে উঠেছে।
কিন্তু ২০২৫-২৬ মরসুমের আগে টুর্নামেন্টের আয়োজন নিয়ে তৈরি হয়েছে অভূতপূর্ব জটিলতা। মূল সমস্যা শুরু হয়েছে সর্ব ভারতীয় ফুটবল ফেডারেশন (AIFF) এবং ফুটবল স্পোর্টস ডেভেলপমেন্ট লিমিটেড (FSDL)মধ্যে মাস্টার রাইটস অ্যাগ্রিমেন্ট (MRA) নবীকরণ নিয়ে মতানৈক্য ঘিরে। ২০১০ সালে স্বাক্ষরিত হওয়া এই চুক্তির মেয়াদ চলতি বছর শেষ হচ্ছে। অথচ এখনও পর্যন্ত কোনও চূড়ান্ত সিদ্ধান্তে পৌঁছানো যায়নি।
FSDL-এর পক্ষ থেকে ISL পরিচালনার জন্য একটি নতুন কাঠামো প্রস্তাব করা হয়েছে। সেই অনুযায়ী, একটি নতুন কোম্পানির মাধ্যমে লিগ পরিচালিত হবে, যেখানে অংশগ্রহণকারী ক্লাবগুলি ৬০ শতাংশ, FSDL ২৬ শতাংশ এবং AIFF ১৪ শতাংশ শেয়ারহোল্ডার হিসেবে থাকবে। ফেডারেশন এহেন প্রস্তাব নিয়ে একপ্রকার দ্বিধাগ্রস্ত, এবং সেই জায়গা থেকেই সমস্যার সূত্রপাত।
এই প্রশাসনিক অচলাবস্থার ফলে উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েছে দেশের শীর্ষস্থানীয় ফুটবল ক্লাবগুলি। বেশ কয়েকটি ক্লাব ইতিমধ্যেই দল গঠন এবং ট্রান্সফার পরিকল্পনা নিয়ে ধীরে চলো নীতি গ্রহণ করেছে। যার ফলে ক্লাব স্তরে অনুশীলন শুরু হওয়া কিংবা প্রস্তুতি ম্যাচ আয়োজন কিছুই নিশ্চিত নয়। এই প্রসঙ্গে কয়েকদিন আগেই মুখ খুলেছিলেন ভারত অধিনায়ক সুনীল ছেত্রী।
এবার এই সংকট নিয়ে প্রকাশ্যে সরব হয়েছেন ভারতীয় জাতীয় দলের (Indian Football Team) অন্যতম অভিজ্ঞ ডিফেন্ডার সন্দেশ ঝিঙ্গান (Sandesh Jhingan)। তিনি The Economic Timesকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে বলেন, “আমরা একটা অজানা পরিস্থিতির মধ্যে রয়েছি। যত দ্রুত সম্ভব এই সমস্যার সমাধান হওয়া দরকার। আমরা শুধু চাই, মাঠে ফিরে খেলতে পারি। এটা শুধু আমাদের পেশার প্রশ্ন নয়, জাতীয় দলের ভবিষ্যতেরও প্রশ্ন।”
ঝিঙ্গান আরও বলেন, “আগামী অক্টোবর মাসে আমাদের চারটি গুরুত্বপূর্ণ এএফসি কোয়ালিফায়ার ম্যাচ রয়েছে। যদি আমরা ক্লাব ফুটবল না খেলতে পারি, তাহলে ম্যাচ ফিটনেস হারিয়ে ফেলব। তার প্রভাব জাতীয় দলের পারফরম্যান্সে পড়বে। আমি সত্যিই চাই না আমরা সেই পরিস্থিতিতে পড়ি।”
এই সংকট শুধু খেলোয়াড়দের কেরিয়ার নয়, তাদের জীবিকা এবং মানসিক স্বাস্থ্যেও গভীর প্রভাব ফেলতে পারে। তিনি যোগ করেন, “এই খেলাটাই আমাদের চাকরি, আমাদের পরিবারের রোজগারের উৎস। যদি এই লিগই না হয়, তাহলে বহু ফুটবলারের জীবন বিপর্যস্ত হয়ে পড়বে।”
এদিকে ফেডারেশন বর্তমানে এক সুপ্রিম কোর্টের মামলায় জড়িত, ফলে সংস্থার উপর আইনি চাপও তৈরি হয়েছে। এতে করে আলোচনার গতি আরও মন্থর হয়ে পড়েছে। পরিস্থিতি আরও ঘনীভূত হয়েছে যখন জানা যায় যে কোনও ক্লাবই নিশ্চিতভাবে জানে না, লিগ আদৌ অনুষ্ঠিত হবে কি না।
বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, যদি দ্রুত কোনও সমাধানে পৌঁছানো না যায়, তবে তা শুধুমাত্র ২০২৫-২৬ মরসুম নয়, গোটা ভারতীয় ফুটবলের উন্নয়নের গতি থমকে যেতে পারে। নতুন প্রতিভা উঠে আসার পথ বন্ধ হয়ে যাবে এবং আন্তর্জাতিক পর্যায়ে দেশের পারফরম্যান্সে নেতিবাচক প্রভাব পড়বে।
Indian Football Team star defender Sandesh Jhingan urges AIFF & FSDL to reach a quick resolution over ISL 2025-26 season