ভারতীয় ক্রিকেটে (Indian Cricket Team) এক নতুন অধ্যায়ের সূচনা হয়েছে। টেস্ট অধিনায়ক হিসেবে রোহিত শর্মা (Rohit Sharma) ও বিরাট কোহলির (Virat Kohli) যুগ শেষ করে এখন হাল ধরেছেন শুভমন গিল (Shubman GIll)। ২০ জুন থেকে শুরু হতে যাওয়া ইংল্যান্ডের (England) বিপক্ষে ৫ ম্যাচের টেস্ট সিরিজে ভারতের নেতৃত্বে থাকবেন এই তরুণ ব্যাটার। তার কাঁধে ভর করে এবার ইংল্যান্ডের মাটিতে ১৮ বছরের খরা কাটানোর স্বপ্ন দেখছে টিম ইন্ডিয়া।
২০০৭ সালে রাহুল দ্রাবিড়ের নেতৃত্বে শেষবার ইংল্যান্ডের মাটিতে টেস্ট সিরিজ জিতেছিল ভারত। এরপর ২০১১, ২০১৪, ২০১৮ ও ২০২১-২২ সালে চারবার সফর করেও সিরিজ জয় ধরা দেয়নি। ২০২১-২২ সালের সিরিজটি ২-২ ব্যবধানে ড্র হলেও, পূর্ণাঙ্গ জয় অধরাই থেকে গেছে ভারতের জন্য। এবার একদম নতুন, অভিজ্ঞতাহীন এক দলের হাত ধরে সেই খরা ঘোচানোর মিশনে নামছে ভারত।
রোহিত শর্মা ও বিরাট কোহলির টেস্ট থেকে অবসরের পর দলের ভারসাম্য ও অভিজ্ঞতায় স্পষ্ট ঘাটতি দেখা যাচ্ছে। নতুন অধিনায়ক শুভমন গিল, যার নিজেরই টেস্ট অভিজ্ঞতা সীমিত, তাকে সামনে রেখে গড়ে উঠেছে এই নবীন দল। দলের বড় অংশেরই ইংল্যান্ডে খেলার অভিজ্ঞতা নেই। ইংল্যান্ডের সুইং, বাউন্স আর আবহাওয়ার সঙ্গে মানিয়ে নিয়ে টেস্ট ম্যাচ জেতা এমনিতেই কঠিন, তার ওপর এত অনভিজ্ঞ এক দল নিয়ে সিরিজ জয় কেবল চ্যালেঞ্জ নয়, এক ধরনের অ্যাডভেঞ্চার।
তবে দলকে নিয়ে আশাবাদী শুভমান গিল। এক সংবাদ সম্মেলনে গিল বলেন, “আমরা জানি এটা সহজ হবে না। তবে এই দলটার শক্তি হলো তার ক্ষুধা, সাহস আর লড়াই করার মানসিকতা। ইংল্যান্ডে টেস্ট সিরিজ জেতা মানে ইতিহাস লেখা, আর আমরা সেটাই করতে চাই।”
ভারতের ইতিহাসে এখন পর্যন্ত মাত্র তিনজন অধিনায়ক ইংল্যান্ডে টেস্ট সিরিজ জিততে পেরেছেন। ১৯৭১ সালে অজিত ওয়াদেকর, ১৯৮৬ সালে কপিল দেব এবং সর্বশেষ ২০০৭ সালে রাহুল দ্রাবিড় সেই কীর্তি গড়েছিলেন। উল্লেখযোগ্যভাবে, মহেন্দ্র সিং ধোনি, বিরাট কোহলি কিংবা রোহিত শর্মার মতো সফল অধিনায়করাও ইংল্যান্ডে টেস্ট সিরিজ জিততে পারেননি।
এই প্রেক্ষাপটে গিলের নেতৃত্বে টিম ইন্ডিয়া যদি এই ইংল্যান্ড সফরে সিরিজ জয় করে, তাহলে সেটা নিঃসন্দেহে ভারতের টেস্ট ইতিহাসের অন্যতম স্মরণীয় অধ্যায় হয়ে থাকবে। গিলের সামনে রয়েছে ব্যাট হাতে ধারাবাহিকতা বজায় রাখা, বোলারদের সঠিকভাবে ব্যবহার করা এবং কঠিন পরিস্থিতিতে দলের মনোবল ধরে রাখা এই তিনটি বড় চ্যালেঞ্জ।
অন্যদিকে, ভারতের সাবেক ওপেনার গৌতম গম্ভীরও গিলের প্রতি আস্থা রেখেছেন। তিনি বলেন, “গিলের মধ্যে নেতৃত্বের সমস্ত গুণ রয়েছে। ও শুধু একজন প্রতিভাবান ব্যাটার নয়, দারুণ পর্যবেক্ষকও। এটা ঠিক যে দল তরুণ, কিন্তু কখনও কখনও নতুনদের মধ্য থেকেই আশ্চর্যজনক কিছু উঠে আসে।”
ইংল্যান্ডের কন্ডিশনে ভারতীয় ব্যাটসম্যানদের টিকে থাকা সবসময় কঠিন হয়েছে। এই সিরিজেও ব্যতিক্রম হবে না। তবে ভারতীয় বোলিং লাইনআপ, বিশেষ করে পেস আক্রমণ যথেষ্ট প্রতিভাবান এবং কন্ডিশনের সদ্ব্যবহার করতে পারলে ইংল্যান্ডের ব্যাটিংকে বিপদে ফেলতে পারে।
শেষ পর্যন্ত, গিলের নেতৃত্ব কেমন হয়, দল কেমন পারফর্ম করে—সবটাই নির্ভর করছে তাদের মানসিক দৃঢ়তা ও ম্যাচ পরিস্থিতি অনুযায়ী সিদ্ধান্ত নেওয়ার উপর। ইংল্যান্ড সফর যে একটি বিশাল চ্যালেঞ্জ, তা বলার অপেক্ষা রাখে না। তবে সেই চ্যালেঞ্জ থেকেই জন্ম নিতে পারে এক নতুন বিজয়গাথা। ভারতীয় ক্রিকেটভক্তদের চোখ এখন তাই শুভমান গিলের দিকেই, যিনি কি না হতে পারেন ভারতীয় ক্রিকেটের পরবর্তী আইকনিক নেতা।