এএফসি এশিয়ান কাপ ২০২৭-এর (AFC Asian Cup 2027) কোয়ালিফায়ারে ভারতীয় ফুটবল দলের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ লড়াই অপেক্ষা করছে। ফিফা বিশ্বকাপ ২০২৬-এর কোয়ালিফায়ারে শীর্ষ দুইয়ে জায়গা করে নিতে ব্যর্থ হওয়ার পর ভারতকে গ্রুপ সি-তে বাংলাদেশ, হংকং এবং সিঙ্গাপুরের সঙ্গে মুখোমুখি হতে হচ্ছে। প্রথম ম্যাচের পর গ্রুপ সি-এর চারটি দলই একই পরিস্থিতিতে রয়েছে। ভারত ও বাংলাদেশের মধ্যে গোলশূন্য ড্র হয়েছে, অন্যদিকে হংকং এবং সিঙ্গাপুরের মধ্যেও একই ফলাফল দেখা গেছে। এই পরিস্থিতিতে ভারতের প্রতিপক্ষরা তাদের সাম্প্রতিক প্রীতি ম্যাচে কেমন পারফর্ম করেছে। ভারতীয় দলের সামনে কী চ্যালেঞ্জ অপেক্ষা করছে, দেখে নেওয়া যাক।
হংকংয়ের গোলশূন্য ড্র এবং সমালোচনার মুখে কোচ
হংকং সম্প্রতি ১৭৫তম স্থানে থাকা নেপালের বিরুদ্ধে একটি গোলশূন্য ড্র খেলেছে। এই ম্যাচে হংকংয়ের খেলোয়াড়রা আক্রমণাত্মক ফুটবল খেললেও নেপালের শক্তিশালী প্রতিরক্ষার বিরুদ্ধে গোল করতে ব্যর্থ হয়। নেপালের ডিফেন্স সাম্প্রতিক ম্যাচগুলোতে দুর্দান্ত ফর্মে রয়েছে, যা হংকংয়ের জন্য বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে। হংকংয়ের কোচ অ্যাশলি ওয়েস্টউড এই ম্যাচে তার কৌশল এবং খেলোয়াড় নির্বাচন নিয়ে সমালোচনার মুখে পড়েছেন। বিশেষ করে লাউ চি-লোককে দলে না রাখার সিদ্ধান্ত নিয়ে সমর্থকদের মধ্যে ক্ষোভ দেখা গেছে। হংকংয়ের আক্রমণভাগ নেপালের বিরুদ্ধে একেবারেই নিষ্প্রভ ছিল।
হংকংয়ের সাম্প্রতিক ফর্মও তেমন আশাব্যঞ্জক নয়। তাদের শেষ জয় এসেছিল প্রায় তিন মাস আগে ম্যাকাওয়ের বিরুদ্ধে। এএফসি এশিয়ান কাপ কোয়ালিফায়ারের প্রথম ম্যাচে সিঙ্গাপুরের বিরুদ্ধেও তারা গোলশূন্য ড্র খেলেছে। এই পরিস্থিতিতে ভারতের বিরুদ্ধে আসন্ন ম্যাচটি হংকংয়ের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এই ম্যাচে জয় পেলে তারা গ্রুপে শক্ত অবস্থান তৈরি করতে পারবে।
বাংলাদেশের জয় এবং হামজার অভিষেক গোল
বাংলাদেশ তাদের সাম্প্রতিক প্রীতি ম্যাচে ভুটানের বিরুদ্ধে ২-০ গোলে জয় পেয়েছে। এই জয় বাংলাদেশের জন্য মানসিকভাবে বড় প্রেরণা হিসেবে কাজ করবে। প্রিমিয়ার লিগের খেলোয়াড় হামজা চৌধুরী তার অভিষেক ম্যাচে গোল করে দলকে জয় এনে দিয়েছেন। এই জয় বাংলাদেশের জন্য আসন্ন সিঙ্গাপুরের বিরুদ্ধে ম্যাচের আগে বড় প্রেরণা। এর আগে তারা ভারতের বিরুদ্ধে এএফসি এশিয়ান কাপ কোয়ালিফায়ারের প্রথম ম্যাচে গোলশূন্য ড্র খেলেছে। হামজার এই পারফরম্যান্স এবং দলের আত্মবিশ্বাস বাংলাদেশকে গ্রুপে শক্তিশালী প্রতিযোগী করে তুলেছে।
সিঙ্গাপুরের দুর্দান্ত জয়
১৬১তম স্থানে থাকা সিঙ্গাপুর মালদ্বীপের বিরুদ্ধে ৩-১ গোলে জয় পেয়েছে। এই জয় তাদের ছয় ম্যাচের জয়হীন ধারা ভেঙেছে এবং বাংলাদেশের বিরুদ্ধে আসন্ন ম্যাচের আগে তাদের আত্মবিশ্বাস বাড়িয়েছে। আমিরুল আদলি এবং ইকসান ফান্ডির গোল সিঙ্গাপুরের জয় নিশ্চিত করেছে। মালদ্বীপের পক্ষে শেষ মুহূর্তে পেনাল্টি থেকে আহমেদ রিজুওয়ানের গোল কেবল সান্ত্বনার গোল হিসেবে রয়ে গেছে। এই জয় সিঙ্গাপুরকে গ্রুপে শক্তিশালী অবস্থানে নিয়ে এসেছে।
ভারতের প্রস্তুতি এবং চ্যালেঞ্জ
ভারতীয় ফুটবল দল প্রথম ম্যাচে বাংলাদেশের বিরুদ্ধে ঘরের মাঠে জয় পেতে ব্যর্থ হয়ে একটি মাত্র পয়েন্ট নিয়ে সন্তুষ্ট থাকতে হয়েছে। গ্রুপের পয়েন্ট তালিকায় ভারত ও বাংলাদেশের মধ্যে কোনো পার্থক্য নেই। তবে, হংকংয়ের বিরুদ্ধে আসন্ন ম্যাচটি ভারতের কোচ মানোলো মার্কেজের দলের জন্য সুবর্ণ সুযোগ। এই ম্যাচে জয় পেলে ভারত গ্রুপে শীর্ষে উঠে আসতে পারে এবং এএফসি এশিয়ান কাপ ২০২৭-এর জন্য কোয়ালিফাই করার পথে এগিয়ে যেতে পারে।
তবে, থাইল্যান্ডের বিরুদ্ধে সাম্প্রতিক প্রীতি ম্যাচে ২-০ গোলে পরাজয় ভারতীয় দলের জন্য উদ্বেগের কারণ। দলকে এখন পুনর্গঠন করে মনোযোগ বাড়াতে হবে। মার্কেজের কৌশল এবং খেলোয়াড়দের মাঠের পারফরম্যান্স এই ম্যাচে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে। হংকংয়ের দুর্বল আক্রমণভাগের সুযোগ নিয়ে ভারত যদি তাদের আক্রমণাত্মক খেলার ধরন বজায় রাখতে পারে, তাহলে জয়ের সম্ভাবনা অনেকটাই বেড়ে যাবে।