শনিবার ধনধান্য অডিটোরিয়ামে জাঁকজমকপূর্ণ ভাবে আয়োজিত হয়েছে সিএবির বার্ষিক পুরস্কার (CAB Annual Award 2025) বিতরণী অনুষ্ঠান। সেখানে উপস্থিত হয়েছিলেন বাংলার ক্রিকেট প্রশাসক থেকে শুরু করে জাতীয় স্তরের ক্রিকেটাররাও। কিন্তু সব আলো যেন পড়ল আকাশ দীপের (Akash Deep) ওপর। ইংল্যান্ড সফরে ভারতীয় দলে (India Cricket Team) দুর্দান্ত পারফরম্যান্স করে আসা এই পেসারকে বিশেষ পুরস্কারে সম্মানিত করল ক্রিকেট অ্যাসোসিয়েশন অফ বেঙ্গল (CAB)।
আর এই সম্মান আরও তাৎপর্যপূর্ণ হয়ে ওঠে যখন প্রাক্তন ভারত অধিনায়ক সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায়ের (Sourav Ganguly) হাত থেকে পুরস্কার গ্রহণ করেন আকাশ। আবেগে ভেসে গিয়ে মঞ্চেই আকাশ দীপ বলে ওঠেন, “আমার মা আমাকে জন্ম দিয়েছেন, কিন্তু সিএবি আমার ক্রিকেটের জন্ম দিয়েছে।”
অনুষ্ঠানে সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায় আকাশ দীপের প্রশংসায় পঞ্চমুখ হন। সৌরভ জানান, ইংল্যান্ড সফরের প্রতিটি দিন আকাশের পারফরম্যান্সের জন্য তিনি অপেক্ষা করতেন। পঞ্চম উইকেট নেওয়ার দিন তিনিও ছিলেন অধীর আগ্রহে। এই ধরণের সম্মান প্রসঙ্গে আকাশ বলেন, “এটা আমার কাছে গর্বের মুহূর্ত। রাজ্যের ক্রিকেট প্রশাসনের পক্ষ থেকে সম্মান পাওয়া মানে অনেক বড় প্রাপ্তি। কঠিন সময়ে এমন মুহূর্তগুলি সাহস দেয়।”
আকাশ দীপ ইংল্যান্ড সফরে এক টেস্ট ম্যাচে নিয়েছিলেন ১০ উইকেট, আবার এক ইনিংসে করেছিলেন ৬৬ রান। কোনটা বেশি স্মরণীয়? উত্তরে আকাশ বলেন, “যে পারফরম্যান্সে দলের জয় আসে, সেটাই বেশি মূল্যবান। আমি একজন বোলার, তাই চাই বল করে দলের জয় এনে দিতে। তবে দুই পারফরম্যান্সই গুরুত্বপূর্ণ ছিল।”
ইংল্যান্ডে দাপট দেখিয়ে CAB বিশেষ সম্মান পেলেন তারকা পেসার
ভারতীয় ক্রিকেটে এই মুহূর্তে একাধিক মেন্টর, কোচ ও অধিনায়কের অধীনে খেলার অভিজ্ঞতা হয়েছে আকাশ দীপের। গৌতম গম্ভীর (Gautam Gambhir ) সম্পর্কে বলেন, “গৌতম স্যার সব সময় অনুপ্রাণিত করেন। আমার স্কিল সম্পর্কে উনি যা বলেন, আমি নিজেও জানি না!”
রাহুল দ্রাবিড় এবং গম্ভীরের কোচিং স্টাইলের মধ্যে তুলনা টেনে বলেন, “দু’জনেরই নিজস্ব স্টাইল আছে, কিন্তু দু’জনেই পজিটিভ দৃষ্টিভঙ্গিতে কথা বলেন। ওঁরা যেভাবে আমাদের গাইড করেন, সেটা দারুণ।”
অধিনায়ক হিসেবে শুভমন গিলের (Shubman Gill) নেতৃত্বের প্রশংসা করে আকাশ বলেন, “ওর ঠান্ডা মাথার সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষমতা দারুণ। আমি ভাগ্যবান যে ওর নেতৃত্বে খেলেছি।” আইপিএলে লখনউ সুপার জায়ান্টে ঋষভ পন্থের অধিনায়কত্বেও খেলেছেন আকাশ। তিনি ঋষভ সম্পর্কেও বলেন, “ও একজন মানসিকভাবে খুব শক্ত ক্রিকেটার। যে চোট ও পেয়েছে, সেটা দেখে মনে হয়, কেউ খেলতে পারবে না। কিন্তু ঋষভ সেই অবস্থাতেই মাঠে নেমেছে, ব্যাট করেছে। এটা বাকিদের জন্য বড় শিক্ষা।”
বর্তমানে ভারতীয় পেস আক্রমণে প্রতিযোগিতা তুঙ্গে। আকাশ দীপকে প্রথমে একাদশে সুযোগ না পেলেও পরে দুর্দান্তভাবে কামব্যাক করতে দেখা যায়। তখন কীভাবে মানসিক প্রস্তুতি নিয়েছিলেন? উত্তরে আকাশ বলেন, “দলে কম্বিনেশন কাজ করে। কিন্তু আমি নেটসেও কাজ করে যাচ্ছিলাম। কখন সুযোগ আসবে, জানতাম না, তবে প্রস্তুতি থাকতাম।”
তিনি আরও বলেন, “বুমরাহ ভাইয়ের মতো সিনিয়ররা পাশে থাকেন। পরিস্থিতি অনুযায়ী ওদের সঙ্গে আলোচনা করি। দীর্ঘ সফরে একসঙ্গে সময় কাটানোর ফলে সম্পর্ক গড়ে ওঠে। যেকোনও সময় সাহায্য চাইলে ওরা পাশে থাকেন।”
আকাশ দীপ কিছুটা চোটপ্রাপ্ত হলেও জানিয়েছেন, পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে। তিনি বলেন, “ছয় মাস টানা খেলার পর রেস্ট দরকার ছিল। কাল থেকে আবার বোলিং শুরু করব।” ব্রাঙ্কো টেস্ট নিয়ে চলা বিতর্ক প্রসঙ্গে প্রশ্ন করা হলে সরাসরি উত্তর দেন, “ওটা ফিজিও আর ট্রেনারের কাজ। খেলোয়াড়ের ফোকাস খেলার দিকেই থাকা উচিত।”
পরবর্তী লক্ষ্য কী? উত্তরে আকাশ দীপ বলেন, “আমার একটাই লক্ষ্য, দেশের হয়ে যতদিন সম্ভব খেলতে চাই। দলের জয়ে অবদান রাখতে চাই। এটা আমার একমাত্র ধ্যান-জ্ঞান।”