রোমাঞ্চকর টাইব্রেকারে বাংলাদেশেকে উড়িয়ে ইতিহাস গড়ল ভারত

১৮ মে গোল্ডেন জুবিলি স্টেডিয়ামে রবিবার রাতে যে নাটকীয় দৃশ্যের সাক্ষী হল দর্শকরা, তা কোনো সিনেমার চিত্রনাট্যের চেয়েও কম ছিল না। সাফ অনূর্ধ্ব ১৯ চ্যাম্পিয়নশিপ…

India Clinches SAFF U-19 Championship

১৮ মে গোল্ডেন জুবিলি স্টেডিয়ামে রবিবার রাতে যে নাটকীয় দৃশ্যের সাক্ষী হল দর্শকরা, তা কোনো সিনেমার চিত্রনাট্যের চেয়েও কম ছিল না। সাফ অনূর্ধ্ব ১৯ চ্যাম্পিয়নশিপ ( SAFF U-19 Championship) ফাইনালে ভারত (India) ১ (৪) – ১ (৩) গোলে টাইব্রেকারে বাংলাদেশকে (Bangladesh) হারিয়ে টুর্নামেন্টের শিরোপা ধরে রাখল।

খেলার শুরুতেই আগুন ঝরিয়ে দেয় ভারতের তরুণ দল। দ্বিতীয় মিনিটেই ফ্রি-কিক থেকে অধিনায়ক সিংগামায়ুম শামি অসাধারণ এক গোল করে দলকে এগিয়ে দেন। ৩০ গজ দূর থেকে তার বাঁকানো শটে বল পৌঁছায় বাংলাদেশের গোলরক্ষক মহম্মদ ইসমাইল হোসেন মাহিনের হাতে, কিন্তু বলের গতি ও দিক তার হাত ফাঁকি দিয়ে জালে জড়িয়ে যায়।

   

এই গোলে উজ্জীবিত হয়ে ভারত আরও আক্রমণাত্মক হয়ে ওঠে। ওমাং ডোডুম দুর্দান্ত এক ড্রাইভে প্রতিপক্ষের রক্ষণভাগ ভেদ করে দ্বিতীয় গোলের খুব কাছে পৌঁছে গিয়েছিলেন, কিন্তু মাহিন তখন গুরুত্বপূর্ণ এক সেভ করেন। প্রথমার্ধে বাংলাদেশ কিছুটা দিশেহারা থাকলেও ধীরে ধীরে খেলার মেজাজে ফিরে আসে। তারা ভারতীয় পাসিং চ্যানেলগুলো বন্ধ করে দেয় এবং মাঝমাঠে নিয়ন্ত্রণ নেওয়ার চেষ্টা করে।

দ্বিতীয়ার্ধে, ৬১ মিনিটে বাংলাদেশ সমতায় ফেরে। কর্নার থেকে ডি-বক্সে বল পড়ে যায়, সেখানে গোলমালের মধ্যে মোহাম্মদ জয় আহমেদ সুযোগ বুঝে বল জালে পাঠিয়ে দেন। এই গোলটি ছিল টুর্নামেন্টে ভারতের বিরুদ্ধে প্রথম গোল।

এরপর দুই দলই একাধিকবার আক্রমণে ওঠে, কিন্তু রক্ষণভাগের দৃঢ়তা এবং ফাইনালের চাপ খেলায় রুদ্ধতা এনে দেয়। নির্ধারিত সময়ে আর কোনো গোল না হওয়ায় খেলা গড়ায় পেনাল্টি শুটআউটে।

টাইব্রেকারে প্রথমেই ভারতের জন্য ধাক্কা আসে। রোহেন সিংয়ের দুর্বল শট রুখে দেন মাহিন এবং বাংলাদেশ এগিয়ে যায়। কিন্তু এরপর নাটকীয় মোড় নেয় ম্যাচ। বাংলাদেশের অধিনায়ক নাজমুল হুদা ফয়সাল নিজের শট ক্রসবারের ওপর দিয়ে মারলে ম্যাচ আবার ভারসাম্যে ফিরে আসে।

Advertisements

এই সুযোগকে কাজে লাগায় ভারত। একে একে নিজেদের পেনাল্টিগুলো নিশ্চিত করে তারা। ভারতের গোলরক্ষক সুরজ সিং আহেইবাম ঠিক সময়ে সঠিক দিক চিহ্নিত করে সালাহউদ্দিন সাঈদের শট আটকে দেন। আর ম্যাচের শুরুতে গোল করা অধিনায়ক শামি ফাইনাল পেনাল্টিটি নিখুঁতভাবে জালে জড়িয়ে দেন, যা নিশ্চিত করে ভারতের বিজয়।

বিবিয়ানো ফার্নান্দেজের প্রশিক্ষণে ভারতীয় দল পুরো টুর্নামেন্টে দুর্দান্ত পারফরম্যান্স করেছে। ফাইনালে তারা দেখিয়েছে মনোবল, ধৈর্য এবং চাপের মুখে মাথা ঠাণ্ডা রাখার ক্ষমতা।

এই জয়ে ভারত শুধু শিরোপাই ধরে রাখেনি, বরং প্রমাণ করেছে যে তারা ভবিষ্যতের জন্য প্রস্তুত। তরুণদের এই সাফল্য ভবিষ্যতের সিনিয়র দলের জন্য এক শক্ত ভিত তৈরি করবে। অন্যদিকে, বাংলাদেশও লড়াইয়ে কম যায়নি। তারা গোটা টুর্নামেন্টে সাহসী ফুটবল খেলেছে এবং ফাইনালেও ভারতের সঙ্গে সমানে সমান লড়েছে।

রবিবার রাতের সেই ম্যাচের স্মৃতি দীর্ঘদিন মনে রাখবে ফুটবলপ্রেমীরা। উত্তেজনা, গতি, ট্যাকটিকস আর আবেগ—সব কিছু মিশে গিয়েছিল একটি ম্যাচে। শেষ হাসি হাসলো ভারত, কিন্তু দুই দলের এই লড়াই ছিল সত্যিই অনবদ্য।