মালয়েশিয়ার কুয়ালালামপুরের বাইয়ুমাস ওভালে অনুষ্ঠিত মহিলাদের অনূর্ধ্ব-১৯ এশিয়া কাপের (U-19 Asia Cup) প্রথম আসরের ফাইনালে ভারতীয় মহিলা দল দেখিয়ে দিল তাদের শ্রেষ্ঠত্ব। রোববার ফাইনালে বাংলাদেশকে ৪১ রানে হারিয়ে ইতিহাসে নাম লেখাল তারা। ভারতের হয়ে এই জয়ের অন্যতম নায়িকা গঙ্গাদি তৃষা, যিনি ফাইনালের গুরুত্বপূর্ণ মুহূর্তে ব্যাট হাতে দাপট দেখিয়ে দলকে জয়ের মঞ্চ তৈরি করে দেন।
ভারতের ইনিংস: তৃষার হাফ-সেঞ্চুরি
টস হেরে প্রথমে ব্যাট করতে নেমে ভারতের শুরুটা খুব একটা ভালো হয়নি। ওপেনারদের ব্যর্থতার পর দায়িত্ব নিজের কাঁধে তুলে নেন গঙ্গাদি তৃষা। ৪৭ বলে ৫২ রানের দারুণ ইনিংস খেলেন তিনি, যেখানে ছিল পাঁচটি চার এবং দুটি ছক্কার মার। তবে অন্য ব্যাটাররা বড় স্কোর করতে ব্যর্থ হন। শেষদিকে মিথিলা বিনোদ ১২ বলে ১৭ রানের একটি গুরুত্বপূর্ণ ইনিংস খেলে দলের স্কোরকে ১১৭ রানে পৌঁছে দেন।
বাংলাদেশের বোলিং: ফারজানার দাপট
বাংলাদেশের পেসার ফারজানা ইয়াসমিন দুর্দান্ত বোলিং করে ভারতের ব্যাটিং লাইনআপে বড় ধাক্কা দেন। ৪ ওভারে ৩১ রান দিয়ে তিনি ৪টি গুরুত্বপূর্ণ উইকেট তুলে নেন। নিশিতা আক্তার নিশি দুই উইকেট দখল করেন এবং নিশ্চিত করেন যে ভারতীয় ব্যাটাররা বড় স্কোর করতে না পারেন।
বাংলাদেশের ব্যাটিং বিপর্যয়
১১৮ রানের লক্ষ্য তাড়া করতে নেমে বাংলাদেশের শুরুটা মোটামুটি হলেও পরে তাদের ব্যাটিং লাইনআপ ভেঙে পড়ে। ওপেনার ফাহমিদা চোয়া এবং জুয়ারিয়া ফেরদৌস যথাক্রমে ১৮ ও ২২ রান করেন। তবে দলের অধিনায়ক সুমাইয়া আক্তার মাত্র ১ রান করে আউট হন। এরপর থেকে বাংলাদেশের ব্যাটাররা ভারতের বোলিং আক্রমণের সামনে অসহায় হয়ে পড়েন।
ভারতের বোলিং: আয়ুষীর দুরন্ত ফর্ম
ভারতের হয়ে ফাইনালে বল হাতে দারুণ পারফরম্যান্স দেখান আয়ুষী শুক্লা। এই টুর্নামেন্টে সর্বাধিক উইকেট নেওয়া আয়ুষী ফাইনালেও নিজের ফর্ম ধরে রাখেন। তিনি ৩.৩ ওভারে ১৭ রান দিয়ে তুলে নেন ৩টি উইকেট। তার সঙ্গে সোনম যাদব এবং পারুনিকা সিসোদিয়াও দুইটি করে উইকেট নেন।
ম্যাচের টার্নিং পয়েন্ট
বাংলাদেশের ইনিংসের দ্বিতীয় ওভারেই ভি জে জোশিথার বলে এভা আউট হয়ে যাওয়ার পর ম্যাচের মোড় পুরোপুরি ভারতের দিকে ঘুরে যায়। এরপর বাংলাদেশ তাদের শেষ সাতটি উইকেট মাত্র ২১ রানে হারিয়ে বসে। ৪০ বলে এই পতনের ফলে তাদের ইনিংস শেষ হয়ে যায় ৭৬ রানে।
ভারতের জয়ের তাৎপর্য
এই জয়ের মাধ্যমে ভারতীয় মহিলা ব্রিগেড এশিয়া কাপের প্রথম আসরের শিরোপা ঘরে তুলল। দলের অধিনায়ক নিকি প্রসাদ বলেন, “এই জয় আমাদের কঠোর পরিশ্রমের ফল। দলের প্রত্যেক খেলোয়াড় তার সেরাটা দেওয়ার চেষ্টা করেছে এবং একসঙ্গে আমরা এই সাফল্য অর্জন করেছি।”
ভবিষ্যতের আশা
ভারতীয় মহিলা ক্রিকেটের এই উত্থান ভবিষ্যতের জন্য একটি বড় আশা দেখাচ্ছে। টুর্নামেন্ট জুড়ে দারুণ পারফরম্যান্স দেখিয়ে তারা প্রমাণ করেছে যে বিশ্বমঞ্চেও তারা প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার জন্য প্রস্তুত।
ভারতীয় মহিলা ব্রিগেডের এই দাপুটে জয় শুধু একটি শিরোপা জয় নয়, বরং ভবিষ্যতের জন্য এক বড় অনুপ্রেরণা। দেশের ক্রিকেটপ্রেমীদের মধ্যে উদযাপনের ঢল নেমেছে, আর এই জয়ের মাধ্যমে মহিলা ক্রিকেটের প্রতি মানুষের আগ্রহ আরও বাড়বে বলেই মনে করা হচ্ছে।