১৬ জুন অনুষ্ঠিত আইএফএ ইন্ডিয়ান ফুটবল অ্যাসোসিয়েশনের (IFA) গভর্নিং বডির সভায় (Governing Body) একাধিক গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়েছে, যা বাংলার ফুটবলের (Bengal Football) প্রশাসনিক ও ক্রীড়াঙ্গনের উন্নয়নে গভীর প্রভাব ফেলবে। এই সভায় উপস্থিত ছিলেন আইএফএ সভাপতি অজিত বন্দোপাধ্যায়, সচিব অনির্বাণ দত্ত, কোষাধ্যক্ষ দেবাশীষ সরকার, সহ-সভাপতি সৌরভ পাল ও স্বরূপ বিশ্বাস, সহ-সচিব রাকেশ ঝাঁ, মহম্মদ জামাল, সুদেষ্ণা মুখার্জী, গভর্নিং বডির সদস্য এবং কো-অপ্ট সদস্যরা। সভায় বিভিন্ন ক্লাব, অ্যাকাডেমি এবং ফুটবল প্রশাসনের সঙ্গে সম্পর্কিত বিষয়গুলো নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা হয়।
ক্লাবের নাম পরিবর্তনের প্রস্তাব গৃহীত
সভার অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত ছিল তিনটি ক্লাবের নাম পরিবর্তনের প্রস্তাব গ্রহণ। বি এস এস স্পোর্টিং ক্লাব, জানবাজার এসি এবং শ্যামা প্রসাদ স্মৃতি সংঘ তাদের নাম পরিবর্তনের জন্য আবেদন করেছিল। আইএফএ গভর্নিং বডি এই প্রস্তাব পর্যালোচনা করে তিনটি ক্লাবের নাম পরিবর্তনের অনুমোদন দেয়। এই সিদ্ধান্তের ফলে ক্লাবগুলো নতুন নামে তাদের কার্যক্রম চালিয়ে যেতে পারবে, যা তাদের পরিচয় ও ব্র্যান্ডিংয়ে নতুন দিশা প্রদান করবে।
২০২৪-২৫ খসড়া বার্ষিক আর্থিক হিসাব অনুমোদিত
আর্থিক স্বচ্ছতা ও দায়বদ্ধতা বজায় রাখার জন্য সভায় ২০২৪-২৫ অর্থবর্ষের খসড়া বার্ষিক আর্থিক হিসাব উপস্থাপন করা হয়। কোষাধ্যক্ষ দেবাশীষ সরকার এই হিসাব বিস্তারিতভাবে তুলে ধরেন। সকল সদস্যদের আলোচনা ও পর্যালোচনার পর এই খসড়া হিসাব সর্বসম্মতিক্রমে অনুমোদিত হয়। এই পদক্ষেপ আইএফএর আর্থিক শৃঙ্খলা ও সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনার প্রতি প্রতিশ্রুতি প্রতিফলিত করে।
ইস্টবেঙ্গল এখন অতীত! কোথায় যোগ দিলেন রিচার্ড সেলিস?
অ্যাকাডেমি পরিদর্শন রিপোর্ট ও অনুমোদন
ফুটবল প্রতিভা বিকাশে অ্যাকাডেমিগুলোর ভূমিকা অপরিসীম। সভায় একাধিক ফুটবল অ্যাকাডেমির পরিদর্শন রিপোর্ট পেশ করা হয়। এই রিপোর্টগুলোতে অ্যাকাডেমিগুলোর পরিকাঠামো, প্রশিক্ষণ ব্যবস্থা, কোচিং স্টাফ এবং অন্যান্য সুযোগ-সুবিধার বিস্তারিত তথ্য ছিল। আলোচনার পর বেশ কিছু অ্যাকাডেমির অনুমোদন দেওয়া হয়। তবে, কিছু অ্যাকাডেমির পরিকাঠামোর মান নিয়ে প্রশ্ন উঠায় সেগুলো পুনরায় পরিদর্শনের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। এই পদক্ষেপ বাংলার ফুটবল অ্যাকাডেমিগুলোর মান উন্নয়নে সহায়ক হবে।
ক্লাবের অভ্যন্তরীণ সমস্যা সমাধানে কমিটি গঠন
সহযাত্রী ও বেঙ্গল স্পোর্টিং ক্লাবের অভ্যন্তরীণ গোলমাল নিয়ে সভায় বিশদ আলোচনা হয়। এই দুই ক্লাবের মধ্যে সৃষ্ট সমস্যা সমাধানের জন্য তিন সদস্যের একটি কমিটি গঠন করা হয়েছে। এই কমিটির দায়িত্ব হবে উভয় ক্লাবের সঙ্গে আলোচনা করে সমস্যার মূল কারণ চিহ্নিত করা এবং স্থায়ী সমাধান প্রদান করা। আইএফএ-র এই উদ্যোগ ক্লাবগুলোর মধ্যে সৌহার্দ্য ও ঐক্য ফিরিয়ে আনতে সহায়ক হবে বলে আশা করা হয়েছে।
কালীঘাট স্পোর্টস লাভারস অ্যাসোসিয়েশনের অভিযোগ প্রত্যাহার
কালীঘাট স্পোর্টস লাভারস অ্যাসোসিয়েশনের বিরুদ্ধে উত্থাপিত অভিযোগ নিয়েও সভায় আলোচনা হয়। অভিযোগের প্রেক্ষিতে ক্লাব কর্তৃপক্ষের কাছ থেকে মুচলেখা চাওয়া হয়। তারা ভবিষ্যতে এ ধরনের ভুল না করার লিখিত প্রতিশ্রুতি দেওয়ায় তাদের বিরুদ্ধে থাকা অভিযোগ প্রত্যাহার করা হয়। এই সিদ্ধান্তের মাধ্যমে ক্লাবটি পুনরায় তাদের কার্যক্রম সুষ্ঠুভাবে চালিয়ে যাওয়ার সুযোগ পেল।
আইএফএ সভাপতি অজিত বন্দোপাধ্যায় সভার সমাপ্তিতে বলেন, “আমাদের লক্ষ্য বাংলার ফুটবলের উন্নয়ন এবং তাই আমরা প্রশাসনিক শৃঙ্খলা ও ক্লাব-অ্যক্যাডেমিগুলোর মান উন্নয়নে ক্রমাগত কাজ করে যাচ্ছি।।” সচিব অনির্বাণ দত্ত জানান, গভর্নিং বডি নিয়মিতভাবে ক্লাব ও অ্যাকাডেমিগুলোর কার্যক্রম পর্যবেক্ষণ করবে।
এই সভা বাংলার ফুটবল প্রশাসনে স্বচ্ছতা, দায়বদ্ধতা এবং উন্নয়নের প্রতি আইএএফ-এর প্রতিশ্রুতির প্রতিফলন। ক্লাবের নাম পরিবর্তন, আর্থিক হিসাব অনুমোদন, অ্যাকাডেমি পরিদর্শন এবং অভ্যন্তরীণ সমস্যা সমাধানের উদ্যোগের মাধ্যমে আইএফএ বাংলার ফুটবলের ভিত্তি মজবুত করার পথে এগিয়ে চলছে।।
