জেলা ফুটবলের ভীত মজবুত করতে শুরু হচ্ছে নতুন লিগ, সূচনা অক্টোবরের গোড়াতেই

বাংলার ফুটবল (Bengal Football) মানেই এতদিন ছিল মূলত কলকাতা ময়দান কেন্দ্রিক আলোচনা। মোহনবাগান, ইস্টবেঙ্গল, মহমেডান কিংবা ভবানীপুর এই নামগুলোর বাইরে গিয়ে জেলার ফুটবলারদের জন্য খুব…

IFA and Srachi Sports launches Bengal Super Legaue as Football Tournamnet focus on District Talent for Bengal Football

বাংলার ফুটবল (Bengal Football) মানেই এতদিন ছিল মূলত কলকাতা ময়দান কেন্দ্রিক আলোচনা। মোহনবাগান, ইস্টবেঙ্গল, মহমেডান কিংবা ভবানীপুর এই নামগুলোর বাইরে গিয়ে জেলার ফুটবলারদের জন্য খুব একটা মঞ্চ ছিল না। এবার সেই চিত্র বদলাতে চলেছে। গ্রামবাংলার প্রতিভাদের তুলে ধরতেই শুরু হচ্ছে নতুন ফ্র্যাঞ্চাইজি ভিত্তিক লিগ ‘বেঙ্গল সুপার লিগ’ (Bengal Super Legaue)।

   

মঙ্গলবার কলকাতার এক পাঁচতারা হোটেলে এক জমকালো অনুষ্ঠানে আনুষ্ঠানিকভাবে এই লিগের সূচনা হয়। লোগো উন্মোচনের মাধ্যমে ঘোষিত হয় বাংলার ফুটবলের এই নতুন অধ্যায়। এদিনের অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন ইন্ডিয়ান ফুটবল অ্যাসোসিয়েশনের (IFA) সভাপতি অজিত বন্দ্যোপাধ্যায়, সচিব অনির্বাণ দত্ত, শ্রাচী স্পোর্টসের (Shrachi Sports) ম্যানেজিং ডিরেক্টর রাহুল টোডি। পাশাপাশি উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে ছিল একপ্রকার চাঁদের হাট। উপস্থিত ছিলেন আটের দশক থেকে শুরু করে বর্তমান প্রজন্মের বহু প্রাক্তন ও বর্তমান ফুটবলার। প্রশান্ত বন্দ্যোপাধ্যায়, মনোরঞ্জন ভট্টাচার্য, মিহির মিহির বসু, বিশ্বজিৎ ভট্টাচার্য, বিকাশ পাঁজি, বিদেশ বোস, সাব্বির আলি জামশেদ নাসিরি, মানস ভট্টাচার্য, শ্যাম থাপা, রহিম নবি, অর্ণব মন্ডল, অ্যালভিটো ডি কুনহা সহ আরও বেশকিছু প্রাক্তন ফুটবলার। তাঁদের সকলকেই সংবর্ধনা জানানো হয় আইএফএ এবং শ্রাচীর তরফে।

লিগের অন্যতম আয়োজক ‘শ্রাচী স্পোর্টস’, যারা আইএফের সঙ্গে যৌথভাবে এই টুর্নামেন্ট পরিচালনা করবে। লিগের সম্প্রচার করবে জি বাংলা সিনেমা। ৮টি ফ্র্যাঞ্চাইজি দলকে নিয়ে অক্টোবর মাসে শুরু হবে প্রথম আসর। ডিসেম্বরের মধ্যে শেষ হবে প্রতিযোগিতা।

বেঙ্গল সুপার লিগের অন্যতম বড় বৈশিষ্ট্য, এই লিগের ম্যাচগুলো হবে একাধিক জেলার মাটিতে। মূলত হোম এবং অ্যাওয়ে ভিত্তিক ফরম্যাটে খেলা হবে। তালিকাভুক্ত স্টেডিয়ামগুলির মধ্যে রয়েছে শিলিগুড়ির কাঞ্চনজঙ্ঘা স্টেডিয়াম, দুর্গাপুরের ভগত সিং স্টেডিয়াম, নৈহাটি, বহরমপুর, কৃষ্ণনগর, হলদিয়া, ডিএসএ মালদা, ব্যারাকপুর এবং বারাসাত স্টেডিয়াম। এর মধ্যে থেকে প্রাথমিকভাবে চারটি স্টেডিয়াম চূড়ান্ত করা হবে প্রথম আসরের জন্য।

মোট ৬১টি ম্যাচ অনুষ্ঠিত হবে। যার মধ্যে ৫৬টি লিগ ম্যাচ, দুইটি সেমিফাইনাল (হোম-অ্যাওয়ে ভিত্তিক) এবং একটি গ্র্যান্ড ফাইনাল। প্রতি দলে ২৫ জন ফুটবলার থাকবে। উল্লেখযোগ্যভাবে, প্রতিটি ফ্র্যাঞ্চাইজিকে জেলার নির্দিষ্ট সংখ্যক ফুটবলার রাখতে হবে।

লিগে জেলার ভিত্তিতে ৮টি জোন করা হয়েছে:
১. উত্তরবঙ্গ জোন: জলপাইগুড়ি, দার্জিলিং, কোচবিহার, আলিপুরদুয়ার, কালিম্পং
২. উত্তর-মধ্য বঙ্গ জোন: মালদহ, মুর্শিদাবাদ, উত্তর ও দক্ষিণ দিনাজপুর
৩. বর্ধমান-বীরভূম জোন: পূর্ব ও পশ্চিম বর্ধমান, বীরভূম
৪. উত্তর ২৪ পরগনা-নদিয়া জোন
৫. হাওড়া-হুগলি জোন
৬. পুরুলিয়া-বাঁকুড়া-ঝাড়গ্রাম জোন
৭. পূর্ব ও পশ্চিম মেদিনীপুর জোন
৮. দক্ষিণ ২৪ পরগনা জোন

Advertisements

প্রতিটি জোন থেকে একটি করে ফ্র্যাঞ্চাইজি দল তৈরি হবে। স্থানীয় প্রতিভাবান ফুটবলারদের নিয়েই গঠিত হবে এই দলগুলি।

আইএফএ সচিব অনির্বাণ দত্ত বলেন, “কলকাতার বাইরের জেলাগুলিতে ফুটবলপ্রেম বরাবরই বেশি। কিন্তু এতদিন তাদের কোনো উপযুক্ত প্ল্যাটফর্ম ছিল না। এই লিগ সেই ঘাটতি পূরণ করবে। পুরুলিয়া, দার্জিলিং, মুর্শিদাবাদ এসব জায়গা থেকেই উঠে আসবে আগামী দিনের তারকারা। একইসঙ্গে জেলার মানুষদের ফুটবলের প্রতি ভালোবাসা বেশি”

শ্রাচী স্পোর্টসের কর্ণধার রাহুল টোডি বলেন, “বেঙ্গল সুপার লিগ শুধু বাংলার নয়, ভারতীয় ফুটবলের জন্যও এক ঐতিহাসিক পদক্ষেপ। দীর্ঘমেয়াদী পরিকল্পনা নিয়ে আমরা এগোচ্ছি। জেলাগুলি থেকেই প্রতিভা তুলে এনে জাতীয় স্তরে পৌঁছে দেওয়াই লক্ষ্য।”

অনুষ্ঠানে একটাই বার্তা উঠে এসেছে—এই লিগের মাধ্যমে ‘ময়দান’ আর ‘গ্রামবাংলা’র দূরত্ব কমবে’। জেলা লিগে খেলা প্রতিভাবান ফুটবলারদের জন্য তৈরি হবে পেশাদার ফুটবলের দরজা। কলকাতা ময়দানের ভবিষ্যৎ তারকাদের অনেকেই এই লিগ থেকেই উঠে আসবে, এমনটাই মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।

IFA and Srachi Sports launches Bengal Super Legaue as Football Tournamnet focus on District Talent for Bengal Football