আইসিসি চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফি (ICC Champions Trophy), যে টুর্নামেন্টটি বিশ্ব ক্রিকেটের (World Cricket) অন্যতম আলোচিত এবং গুরুত্বপূর্ণ প্রতিযোগিতাগুলোর মধ্যে অন্যতম। এই ট্রফির ভবিষ্যৎ কী হবে? সেই নিয়ে এখন চলছে জটিল আলোচনা। আইসিসি এখনও চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির সূচি (Match Schedule)ঘোষণা করেনি এবং শোনা যাচ্ছে যে আগামী কয়েকদিনের মধ্যেই এই সূচি প্রকাশিত হতে পারে। তবে, সেসব ঘোষণা পাকিস্তান (Pakistan) ক্রিকেট বোর্ড (PCB) এবং ভারতীয় (India) ক্রিকেট বোর্ড (BCCI) এর মধ্যে বিতর্কের সমাধান এনে দেবে কিনা, সে বিষয়ে সন্দেহ থেকেই যাচ্ছে।
কন্যাশ্রী কাপে খেলবে উত্তরবঙ্গের এই ক্লাব? জানুন
পাকিস্তান ক্রিকেট বোর্ড (PCB) এখন অত্যন্ত ক্ষুব্ধ অবস্থায় রয়েছে। কারণ, ভারত নিজেদের অবস্থান থেকে নড়তে রাজি নয়। ভারত চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফিতে অংশগ্রহণ করলেও, তারা পাকিস্তানে গিয়ে খেলবে না বলে সিদ্ধান্ত নিয়েছে। পাকিস্তানের ক্ষোভের মূল কারণ হলো ভারতের এই ‘অনৈতিক’ দাবি। ভারতের খেলোয়াড়দের জন্য একটি হাইব্রিড মডেল প্রস্তাব করা হয়েছে, যার মধ্যে ভারতীয় দল চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির যে সমস্ত ম্যাচ পাকিস্তানে অনুষ্ঠিত হবে, সেগুলো খেলবে না, বরং অন্য এক নিরপেক্ষ স্টেডিয়ামে খেলবে। একইভাবে, পাকিস্তানও ভারতের সঙ্গে ম্যাচ খেলতে হলে, তাদের সেই নিরপেক্ষ ভ্যেনুতেই যেতে হবে। এই সিদ্ধান্ত পিসিবির জন্য অত্যন্ত অবমাননাকর এবং তাঁদের আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে নিজের মর্যাদা বজায় রাখার জন্য এক বড় চ্যালেঞ্জ।
কেরালা ম্যাচে ফিরছেন সাহাল! বড় আপডেট বাগান শিবিরের
পাকিস্তান দীর্ঘদিন ধরে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে কিছুটা পিছিয়ে পড়েছিল। বিশেষত ২০০৯ সালে শ্রীলঙ্কা ক্রিকেট দলের উপর সন্ত্রাসী হামলার পর, পাকিস্তানে আন্তর্জাতিক ক্রিকেট বন্ধ হয়ে গিয়েছিল। এরপরেও পাকিস্তান ক্রিকেট দল মাঝে মাঝে নিজেদের জায়গা করে নিয়েছে, তবে এখনও তাঁরা এখনও অনেক ক্ষেত্রে পিছিয়ে। এখন, চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির মাধ্যমে পিসিবি এক নতুন সুযোগের দিকে তাকিয়ে রয়েছে। তাদের লক্ষ্য এই টুর্নামেন্টের মাধ্যমে পাকিস্তান ক্রিকেটের পুনর্জন্ম ঘটানো। এই টুর্নামেন্টের মাধ্যমে তাঁরা নিজেদের অবস্থান তুলে ধরতে চাইছে, পাশাপাশি আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে আরও শক্তিশালীভাবে ফিরে আসার স্বপ্ন দেখছে।
গাব্বা টেস্টে রোহিতের কী করণীয় পরামর্শ ভাজ্জির
তিনটি স্টেডিয়ামের সংস্কার করা হয়েছে, পাকিস্তান ক্রিকেটের উন্নতির জন্য। এই টুর্নামেন্ট যদি কোনো কারণে বয়কট করা হয়, তাহলে পিসিবির জন্য তা হবে এক ভীষণ আর্থিক ক্ষতি। তাদের আয়ের প্রধান উৎস হবে এই টুর্নামেন্ট, তাই পাকিস্তান যদি চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফি বয়কট করে, তবে আর্থিক ক্ষতির পরিমাণ হবে অত্যন্ত বড়। এমন পরিস্থিতি পিসিবি কীভাবে সামাল দিতে পারবে, তা বড় প্রশ্ন।
পাকিস্তান যদি চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফি থেকে নাম তুলে নেয়, তাহলে শুধু আর্থিক ক্ষতির সম্মুখীন হবে না। বরং আইসিসি তাদের বিরুদ্ধে আইনি পদক্ষেপ নিতে পারে। এমনকি, পাকিস্তানকে আন্তর্জাতিক ক্রিকেট থেকে নির্বাসিত করার মতো পদক্ষেপও নেওয়া হতে পারে। এই পরিস্থিতি পিসিবি কখনও চাইবে না। কারণ, আইসিসি যদি পাকিস্তানকে আন্তর্জাতিক ক্রিকেট থেকে নির্বাসিত করে, তবে তা হবে পাকিস্তান ক্রিকেটের জন্য এক বড় আঘাত।
ম্যাচ বয়কটের পরিকল্পনা নিয়ে সমর্থকদের ঝাঁঝালো উত্তর মিকেল স্ট্যাহরের
পাকিস্তান ক্রিকেট বোর্ড আইসিসিকে জানিয়েছে যে, যদি হাইব্রিড মডেলই মেনে নিতে হয়, তাহলে ২০২৭ সাল পর্যন্ত এটি মেনে চলতে হবে। অর্থাৎ, ভারত যদি পাকিস্তানে গিয়ে খেলার জন্য প্রস্তুত না থাকে, তাহলে পাকিস্তানও ভারতে গিয়ে খেলবে না। এই অবস্থানে, পিসিবি দৃঢ় অবস্থানে রয়েছে এবং বিসিসিআই-এর এই ‘অনৈতিক’ দাবির বিরুদ্ধে তারা একধাপ এগিয়ে।
পাকিস্তানের প্রাক্তন ক্রিকেট অধিনায়ক রশিদ লতিফ এই বিষয়ে মন্তব্য করেছেন। তিনি বলেছেন, পাকিস্তান যদি চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফি বয়কট করতে চায়, তবে সেটি তার মতে সঠিক সিদ্ধান্ত হবে। তিনি বলেন, ‘‘বিসিসিআইয়ের সামনে পিসিবি, এসিবি বা আইসিসি কেউই লড়াই করার মতো অবস্থানে নেই। আমরা চিরকালই বলির পাঁঠা হয়ে আসছি।’’ তাঁর এই মন্তব্যে পাকিস্তানের ক্ষোভ এবং অসন্তোষের প্রতিফলন দেখা যায়।
আলবার্তোদের দিকে বাড়তি নজর বাগান কোচের, চলল কেরালা বধের প্রস্তুতি
আইসিসির এক কর্মকর্তা জানিয়েছেন, চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফি থেকে পাকিস্তানের সরে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়া সহজ হবে না। কারণ, পাকিস্তান ইতিমধ্যেই অন্যান্য দেশের সঙ্গে চুক্তি সই করে ফেলেছে, যা চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফিতে অংশগ্রহণের জন্য। আইসিসি যেহেতু ব্রডকাস্টিং স্বত্ব নিয়ে চুক্তি করেছে, তাই অংশগ্রহণকারী দেশগুলোকে নিশ্চিত করতে হয় যে তাঁরা টুর্নামেন্টে খেলবে। পাকিস্তান যদি এই চুক্তি ভঙ্গ করে, তা হলে আইসিসি পাকিস্তানকে আইনি পদক্ষেপের আওতায় আনতে পারে।
পাকিস্তান ক্রিকেট বোর্ডের জন্য, চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির মতো গুরুত্বপূর্ণ টুর্নামেন্টে অংশগ্রহণ অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। ২০২৫ সালে ভারতে মহিলা বিশ্বকাপ অনুষ্ঠিত হবে এবং ২০২৬ সালে টি২০ বিশ্বকাপও ভারতে হবে। এর ফলে, পাকিস্তান ক্রিকেট বোর্ডের উপর চাপ বেড়েছে। যদি চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির মতো বড় টুর্নামেন্টে তারা বয়কটের সিদ্ধান্ত নেয়, তবে তা অন্যান্য টুর্নামেন্টে তাদের অংশগ্রহণকে প্রভাবিত করতে পারে।