ভারতের দ্বিতীয় ডিভিশন ফুটবল লিগ আইলিগ (I-League) শুরু হয়েছে গত শুক্রবার। প্রথম ম্যাচে শ্রীনিধি ডেকান মুখোমুখি হয়েছিল গোকুলাম কেরালা এফসি-র। হায়দরাবাদে অনুষ্ঠিত এই ম্যাচে গোকুলাম কেরালা তাদের প্রতিপক্ষ শ্রীনিধিকে পরাজিত করে। অন্যদিকে, দ্বিতীয় ম্যাচে ইন্টার কাশী এক গোলে পরাজিত করে স্পোর্টিং ক্লাব বেঙ্গালুরুকে। এই ম্যাচগুলির মাধ্যমে ফুটবলপ্রেমীরা জমজমাট আইলিগ মরশুমের প্রত্যাশা করছেন। তবে মাঠের উত্তেজনার পাশাপাশি আইলিগ সম্প্রচার নিয়ে সাম্প্রতিক সময়ে তৈরি হওয়া বিতর্ক এবং তার সমাধানও সমান গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছিল।
সম্প্রচার নিয়ে ধোঁয়াশা
আইলিগ, যা ভারতের ফুটবল পিরামিডের দ্বিতীয় স্তরের লিগ, সাম্প্রতিক বছরগুলিতে জনপ্রিয়তা বাড়ালেও তার টেলিভিশন সম্প্রচার নিয়ে সমস্যার শেষ ছিল না। আগে স্টার স্পোর্টস আইলিগ সম্প্রচারের দায়িত্ব নিলেও, চুক্তি শেষ হওয়ার পর এই লিগ সম্প্রচারের কোনও নির্দিষ্ট প্ল্যাটফর্ম পাওয়া যাচ্ছিল না। ক্লাব এবং ফুটবলপ্রেমীদের হতাশার কারণ ছিল এই বিষয়টি। অনেকের ধারণা ছিল, ডিজিটাল প্ল্যাটফর্মেই হয়তো এই বছর আইলিগ দেখা যাবে, টিভি সম্প্রচারের কোনও সম্ভাবনা নেই।
বেশ কয়েক মাস আগে, অল ইন্ডিয়া ফুটবল ফেডারেশন (এআইএফএফ) এই সংকট সমাধানের জন্য একটি বৈঠক আহ্বান করে। বৈঠকে বিভিন্ন সম্প্রচার সংস্থার নাম নিয়ে আলোচনা হলেও, কোনও চূড়ান্ত সিদ্ধান্তে পৌঁছানো যায়নি। এর ফলে আইলিগের ক্লাবগুলোর মধ্যে উদ্বেগ বাড়তে থাকে।
সোনি স্পোর্টস’ এগিয়ে এল
দীর্ঘ আলোচনার পরে, শেষ পর্যন্ত সোনি স্পোর্টস আইলিগ সম্প্রচারের দায়িত্ব নিতে এগিয়ে আসে। বৃহস্পতিবার এই চুক্তি চূড়ান্ত হওয়ার খবর পাওয়া যায়। তবে চুক্তিটি বেশ কয়েকটি শর্তের ভিত্তিতে সম্পন্ন হয়েছে, যার মধ্যে অন্যতম হল আইলিগে অংশগ্রহণকারী প্রতিটি ক্লাবকে সম্প্রচার ফি হিসেবে ১২.৫ লক্ষ টাকা করে প্রদান করতে হবে।
ফেডারেশন ও সোনি স্পোর্টসের এই মেক-অর-ব্রেক চুক্তি আইলিগ সম্প্রচারের সমস্যার সমাধান করেছে। ক্লাবগুলিও এই চুক্তি মেনে নিয়েছে, কারণ তারা জানে যে টিভিতে সম্প্রচারের মাধ্যমে আইলিগের জনপ্রিয়তা এবং ব্র্যান্ড ভ্যালু অনেকটাই বাড়বে।
কেন এত গুরুত্বপূর্ণ এই সম্প্রচার?
টিভি সম্প্রচার যেকোনও ক্রীড়া প্রতিযোগিতার জনপ্রিয়তা বাড়ানোর একটি প্রধান উপায়। আইএসএল (ইন্ডিয়ান সুপার লিগ) টিভি সম্প্রচারের মাধ্যমে যে বিশাল দর্শকসংখ্যা অর্জন করেছে, তা অন্য ক্রীড়া লিগগুলোর জন্য উদাহরণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। আইলিগের ক্ষেত্রেও এর প্রভাব অনেক বড় হতে পারে।
টিভি সম্প্রচারের ফলে শুধুমাত্র আইলিগের দর্শকসংখ্যাই বাড়বে না, বরং ক্লাবগুলোর জন্য স্পনসরশিপ পাওয়া আরও সহজ হয়ে যাবে। টেলিভিশনের মাধ্যমে প্রচারিত ম্যাচগুলি স্থানীয় ফুটবলারদের প্রতিভা প্রদর্শনের একটি প্ল্যাটফর্ম তৈরি করবে, যা তাদের ভবিষ্যতে বড় লিগে বা জাতীয় দলে জায়গা করে নিতে সাহায্য করবে।
ক্লাবগুলোর প্রতিক্রিয়া
এই চুক্তির পরে বেশ কিছু ক্লাব ইতিবাচক প্রতিক্রিয়া দিয়েছে। তাদের মতে, সোনি স্পোর্টসের মতো বড় একটি প্ল্যাটফর্মে ম্যাচ সম্প্রচারিত হলে আইলিগের গুরুত্ব বাড়বে। তবে ১২.৫ লক্ষ টাকার ফি নিয়ে কিছু ক্লাবের মধ্যে অস্বস্তি রয়ে গেছে। অনেক ছোট ক্লাবের জন্য এই ফি বহন করা কঠিন, কারণ তাদের বাজেট সীমিত। তবুও, আইলিগের ভবিষ্যৎ উন্নতির জন্য তারা এই ফি মেনে নিয়েছে।
ফুটবলপ্রেমীদের প্রতিক্রিয়া
আইলিগ সম্প্রচার চুক্তি নিয়ে ফুটবলপ্রেমীদের মধ্যে মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখা গেছে। অনেকেই মনে করেন, ভারতের দ্বিতীয় স্তরের ফুটবল লিগের জন্য এটি একটি যুগান্তকারী পদক্ষেপ। তবে কিছু সমর্থক মনে করেন, এই ধরনের গুরুত্বপূর্ণ লিগের সম্প্রচার খরচ ফেডারেশন বা সরকারকে বহন করা উচিত ছিল। ক্লাবগুলির উপর এই দায় চাপানো কিছুটা অন্যায় বলে তাদের মত।
আইলিগের ভবিষ্যৎ
টিভি সম্প্রচার নিশ্চিত হওয়ার ফলে আইলিগ আরও প্রতিযোগিতামূলক এবং আকর্ষণীয় হয়ে উঠবে বলে আশা করা হচ্ছে। ফেডারেশনের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, সোনি স্পোর্টসের সঙ্গে এই চুক্তি দীর্ঘমেয়াদী হতে পারে, যদি তারা তাদের প্রতিশ্রুতি পালন করে।
এছাড়াও, এই চুক্তি অন্যান্য ছোট লিগ এবং টুর্নামেন্টগুলির জন্য অনুপ্রেরণা হতে পারে, যারা দীর্ঘদিন ধরে সম্প্রচারের অভাবে জনপ্রিয়তা অর্জন করতে পারেনি।
আইলিগের টিভি সম্প্রচার শুধুমাত্র একটি চুক্তি নয়, এটি ভারতীয় ফুটবলের ভবিষ্যতের জন্য একটি বড় পদক্ষেপ। সোনি স্পোর্টসের মতো বড় প্ল্যাটফর্মে সম্প্রচার আইলিগের প্রতিযোগিতা, খেলোয়াড় এবং ক্লাবগুলিকে আরও স্বীকৃতি দেবে।
১২.৫ লক্ষ টাকার ফি নিয়েও বিতর্ক থামেনি। যদি ক্লাবগুলি এই ফি নিয়েও আর্থিক চাপ সামলাতে না পারে, তাহলে ভবিষ্যতে এই ধরনের চুক্তি স্থায়ী হওয়া কঠিন হবে। এখন দেখার বিষয় হল, আইলিগ কতটা সাফল্যের সঙ্গে এই চ্যালেঞ্জকে মোকাবিলা করতে পারে। সকল সমস্যা পেরিয়ে আইলিগ যখন টিভি পর্দায় হাজির হবে, তখন ফুটবলপ্রেমীরা কতটা সাড়া দেয় সেটাই হবে মূল বিষয়।