গত বৃহস্পতিবার কলকাতা ময়দানে আইএসএলের এক উত্তেজনাপূর্ণ ম্যাচে খেলতে নেমেছিল হায়দরাবাদ এফসি। তাদের প্রতিপক্ষ ছিল কলকাতার শক্তিশালী দল মোহনবাগান সুপার জায়ান্ট। ম্যাচে দুর্দান্ত পারফরম্যান্স উপহার দিয়ে শেষ পর্যন্ত ৩-০ ব্যবধানে জয়ী হয় মোহনবাগান। তবে ম্যাচ শেষে হায়দরাবাদ এফসির কোচ শামিল চেম্বাকথ (Shameel Chembakath) তাদের পারফরম্যান্স নিয়ে হতাশ না হয়ে সন্তুষ্টি প্রকাশ করেছেন। তাঁর মতে, দলের লড়াই ছিল প্রশংসনীয়, তবে কিছু ভুল ছিল যা পরবর্তীতে সংশোধন করতে হবে।
হায়দরাবাদ এফসি এই ম্যাচে মাঠে নেমেছিল আত্মবিশ্বাসী হয়ে, কারণ তারা তার আগের ম্যাচে ইস্টবেঙ্গলের বিপক্ষে ভালো লড়াই করে শেষ মুহূর্তে গোল করে ড্র নিয়ে ফিরে এসেছিল। কিন্তু মোহনবাগানের বিরুদ্ধে তাদের খেলায় কিছু ভুলের কারণে স্বপ্ন ভঙ্গ হয়। শামিল চেম্বাকথ ম্যাচ শেষে সাংবাদিকদের সামনে এসে বলেছিলেন, “আমরা যেভাবে খেলতে চেয়েছিলাম, ছেলেরা সেভাবেই লড়াই করেছে। তবে কিছু ভুলের কারণে ম্যাচের গতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে পারিনি।”
প্রথমার্ধের দুর্দান্ত পারফরম্যান্সে মোহনবাগান
ম্যাচের প্রথমার্ধে মোহনবাগান ছিল আরও শক্তিশালী। ম্যাচের শুরু থেকেই তারা আক্রমণাত্মক খেলা শুরু করে। হায়দরাবাদ এর শুরুটা ছিল কিছুটা ধীরগতিতে, এবং সেই সুযোগকে কাজে লাগিয়ে মোহনবাগান প্রথম গোলটি করে। স্টেফান সাপিচের আত্মঘাতী গোলের পর থেকে ম্যাচটি হায়দরাবাদের জন্য আরও কঠিন হয়ে পড়ে। এরপর মোহনবাগান আরও আক্রমণাত্মক হয়ে উঠতে থাকে।
মোহনবাগানের ম্যানেজার খালেদ জামিলের পরিকল্পনা ছিল বল দখল করা এবং আক্রমণ করতে থাকা। তাদের মিডফিল্ড এবং আক্রমণভাগে দুর্দান্ত সমন্বয় ছিল। প্রথমার্ধে জেসন কামিন্স, টম অলড্রেড এবং অন্যান্য খেলোয়াড়রা একের পর এক আক্রমণ চালিয়ে হায়দরাবাদকে কষ্টে ফেলে দেন। প্রথমার্ধের শেষ লগ্নে টম অলড্রেডের একটি দুর্দান্ত গোলের পর মোহনবাগান ২-০ ব্যবধানে এগিয়ে যায়।
হায়দরাবাদের আক্রমণাত্মক মনোভাব, কিন্তু গোলের অভাব
দ্বিতীয়ার্ধে হায়দরাবাদ তার আক্রমণাত্মক খেলায় আরও মনোযোগী হয়ে ওঠে। কোচ শামিল চেম্বাকথ কিছু পরিবর্তন আনেন এবং আক্রমণাত্মক শৈলী প্রয়োগ করেন। সাই গডার্ড, এডমিলসন কোরিয়া, আয়ুষ অধিকারী এবং অন্যরা একাধিক সুযোগ তৈরি করার চেষ্টা করেছিলেন। তবে মোহনবাগানের রক্ষণভাগ এতটা শক্তিশালী ছিল যে তারা হায়দরাবাদের আক্রমণ প্রতিহত করতে সফল হয়।
হায়দরাবাদের একটি বড় সমস্যা ছিল, গোল করার সময় তারা ফিনিশিংয়ে বেশ হতাশাজনক ছিল। একটি সময়ে মনে হচ্ছিল, তারা যদি গোল করতে পারত, তবে হয়তো ম্যাচের গতিপথ পরিবর্তিত হতে পারত। কিন্তু মোহনবাগানের রক্ষণ ও গোলরক্ষক সুমিত বর্মন যেভাবে গোল পোস্টের সামনে নিজেদের অবস্থান নিয়েছিলেন, তাতে হায়দরাবাদের আক্রমণগুলো বাধাগ্রস্ত হয়।
দ্বিতীয়ার্ধের মাঝামাঝি সময়ে, আরও একটি গোল পায় মোহনবাগান, যখন জেসন কামিন্স একটি দুর্দান্ত গোল করে ব্যবধান বাড়ান। ৩-০ ব্যবধানে এগিয়ে যাওয়ার পর মোহনবাগান ম্যাচের নিয়ন্ত্রণ পুরোপুরি নিজেদের হাতে নেয়।
কোচ শামিল চেম্বাকথের বিশ্লেষণ
ম্যাচ শেষে হায়দরাবাদ কোচ শামিল চেম্বাকথ সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলার সময় বলেছিলেন, “ম্যাচের শুরুটা আমাদের জন্য ভালো ছিল না, তবে পরে আমরা নিজেদের খেলা নিয়ন্ত্রণ করার চেষ্টা করেছি। বিশেষ করে কিছু ভুল ছিল, যা আমাদের ভবিষ্যতে সংশোধন করতে হবে। যদি আমরা সেই ভুলগুলো এড়াতে পারতাম, তবে হয়তো খেলার গতি আরও ভালোভাবে নিয়ন্ত্রণ করতে পারতাম।”
তিনি আরও বলেন, “আমাদের রক্ষণভাগের কাজ অনেক উন্নত করার প্রয়োজন। আসন্ন ম্যাচগুলোতে এইসব ভুলগুলো শুধরে নিয়ে এগিয়ে যেতে হবে। আমরা জানি, আগামী ম্যাচগুলো আমাদের জন্য চ্যালেঞ্জিং হতে চলেছে, তবে আমরা প্রস্তুত আছি।”
চেম্বাকথ আরও বলেন, “আমার জন্য সবচেয়ে বড় বিষয় হলো, ছেলেরা ম্যাচে প্রতিনিয়ত চেষ্টা করেছে এবং তাদের লড়াইয়ের মনোভাব ছিল দারুণ। কিন্তু ফুটবলে কখনও কখনও কিছু ভুলে ম্যাচ হেরে যেতে হয়, কিন্তু এটা আমাদের শিখতে সাহায্য করবে।”
হায়দরাবাদ এফসি মোহনবাগানের বিপক্ষে ৩-০ ব্যবধানে পরাজিত হলেও, কোচ শামিল চেম্বাকথ দলের পারফরম্যান্স নিয়ে মোটেও হতাশ নন। তিনি মনে করেন, তাদের খেলা অনেক ভালো ছিল এবং কিছু ভুল শুধরে নেওয়ার মাধ্যমে তারা আরও উন্নতি করতে সক্ষম হবে। যদিও এই পরাজয় হায়দরাবাদের জন্য একটি বড় আঘাত, তবে তাদের আত্মবিশ্বাস এবং পরবর্তী ম্যাচগুলোর জন্য কোচের পরিকল্পনা দলের ভবিষ্যত উজ্জ্বল করতে সাহায্য করবে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
দলটির পরবর্তী ম্যাচগুলিতে ভুলগুলো শুধরে নিয়ে আরও শক্তিশালী হয়ে মাঠে নামবে, এবং সমর্থকদের প্রত্যাশা পূরণ করার চেষ্টা করবে।