ভারতীয় ক্রিকেটের উদীয়মান তারকা সরফরাজ খান (Sarfaraz Khan) সম্প্রতি তার অবিশ্বাস্য শারীরিক রূপান্তর দিয়ে সবাইকে হতবাক করেছেন। সোমবার তিনি তার একটি সাম্প্রতিক ছবি শেয়ার করেছেন, যেখানে তাকে আগের তুলনায় অনেক স্লিম দেখা গেছে। বিভিন্ন প্রতিবেদন অনুযায়ী, ২৭ বছর বয়সী এই প্রতিভাবান ব্যাটসম্যান মাত্র দুই মাসেরও কম সময়ে ১৭ কেজি ওজন কমিয়েছেন। সরফরাজ নিজেও সামাজিক মাধ্যমে শেয়ার করা একটি ছবিতে এই ওজন হ্রাসের কথা নিশ্চিত করেছেন। ছয়টি টেস্ট ম্যাচে ৩৭১ রান করা এই ক্রিকেটার বর্তমানে ইংল্যান্ডে ভারতীয় দলের সঙ্গে নেই। তবে তিনি ইন্ডিয়া এ দলের ইংল্যান্ড সফরে অংশ নিয়েছিলেন এবং সেখানে একটি সেঞ্চুরিও করেছেন। ২০২৪ সালের ফেব্রুয়ারিতে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে টেস্ট অভিষেক হলেও, সরফরাজ এখনও জাতীয় দলে তার স্থান পাকা করতে পারেননি। তবে দেশীয় ক্রিকেটে তার ব্যাট থেকে রানের ধারা অব্যাহত থাকার পাশাপাশি, তিনি তার ফিটনেসের উপর কঠোর পরিশ্রম করে নিজের প্রতিশ্রুতি প্রমাণ করেছেন।
তাহলে, সরফরাজ খান কীভাবে এই ১৭ কেজি ওজন কমিয়েছেন? গত মে মাসে, যখন তাকে ইন্ডিয়া এ দলের জন্য মনোনীত করা হয়েছিল, তখন তার বাবা নওশাদ খান হিন্দুস্তান টাইমসকে তার ওজন হ্রাসের যাত্রার বিস্তারিত বিবরণ দিয়েছিলেন। নওশাদ জানিয়েছেন, “আমরা আমাদের খাদ্যাভ্যাস অনেক নিয়ন্ত্রণ করেছি। আমরা রুটি, ভাত ইত্যাদি খাওয়া বন্ধ করে দিয়েছি। গত দেড় মাস ধরে আমরা বাড়িতে রুটি বা ভাত খাইনি। আমরা ব্রকোলি, গাজর, শসা, সালাদ এবং সবুজ শাকসবজির সালাদ খাচ্ছি। এর পাশাপাশি, আমরা গ্রিলড মাছ, গ্রিলড মুরগি, সেদ্ধ মুরগি, সেদ্ধ ডিম ইত্যাদি খাচ্ছি। আমরা সবুজ চা এবং সবুজ কফিও পান করছি।”
তিনি আরও যোগ করেন, “আমরা অ্যাভোকাডো খাচ্ছি। স্প্রাউটসও রয়েছে। তবে মূল বিষয় হলো, আমরা রুটি এবং ভাত খাওয়া বন্ধ করেছি। আমরা চিনি খাওয়া বন্ধ করেছি। ময়দা এবং বেকারি পণ্যও বন্ধ করেছি।” নওশাদ আরও জানান, সরফরাজ এমনকি তার প্রিয় বিরিয়ানিও ছেড়ে দিয়েছেন। তিনি বলেন, “তিনি দেড় মাসে প্রায় ১০ কেজি ওজন কমিয়েছেন। তিনি আরও ওজন কমানোর জন্য কাজ করছেন। আমি নিজেও ১২ কেজি ওজন কমিয়েছি কারণ আমার হাঁটুর সমস্যা ছিল। ডাক্তার আমাকে বলেছিলেন যে আমার হাঁটু প্রতিস্থাপন করতে হবে। তাই আমি তাকে বলেছিলাম যে আমি এটি বিলম্ব করতে চাই। তিনি আমাকে বলেছিলেন যে এর জন্য আমাকে ওজন কমাতে হবে।”
সরফরাজের এই ফিটনেস যাত্রা কেবল তার ব্যক্তিগত প্রতিশ্রুতির প্রমাণই নয়, বরং ভারতীয় ক্রিকেটে ফিটনেসের গুরুত্বও তুলে ধরে। আধুনিক ক্রিকেটে, যেখানে শারীরিক সুস্থতা একটি বড় ভূমিকা পালন করে, সরফরাজের এই রূপান্তর তাকে জাতীয় দলে নিয়মিত স্থান পেতে সাহায্য করতে পারে। তার বাবা নওশাদের নির্দেশনা এবং কঠোর খাদ্যাভ্যাস তার এই সাফল্যের পেছনে মূল চালিকাশক্তি।
ইংল্যান্ড সফরে ভারতীয় দলে সরফরাজের না থাকা অনেক প্রাক্তন ক্রিকেটারের সমালোচনার মুখে পড়েছে। তিনি দেশীয় ক্রিকেটে ধারাবাহিকভাবে পারফর্ম করলেও, জাতীয় দলে তার স্থান এখনও অনিশ্চিত। তবে তার সাম্প্রতিক ফিটনেস রূপান্তর এবং ইন্ডিয়া এ দলের হয়ে সেঞ্চুরি প্রমাণ করে যে তিনি কেবল প্রতিভাবানই নন, বরং কঠোর পরিশ্রমী এবং দৃঢ়প্রতিজ্ঞও।
সরফরাজের এই ওজন হ্রাসের যাত্রা অনেক তরুণ ক্রিকেটারের জন্য অনুপ্রেরণা হতে পারে। ক্রিকেটের মতো প্রতিযোগিতামূলক খেলায়, যেখানে প্রতিটি খেলোয়াড়ের শারীরিক ও মানসিক সুস্থতা গুরুত্বপূর্ণ, সরফরাজের এই প্রচেষ্টা তাকে দলের একটি গুরুত্বপূর্ণ সদস্য হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করতে পারে। তার খাদ্যাভ্যাসে সবুজ কফি, ব্রকোলি, এবং চিনি ও ময়দাবিহীন ডায়েট অনুসরণ করা কেবল তার শরীরের ওজনই কমায়নি, বরং তার সামগ্রিক ফিটনেস এবং স্ট্যামিনাও বাড়িয়েছে।
এই রূপান্তরের পেছনে তার পরিবারের সমর্থনও উল্লেখযোগ্য। তার বাবা নওশাদ নিজেও একই ডায়েট অনুসরণ করে ওজন কমিয়েছেন, যা সরফরাজের জন্য একটি অতিরিক্ত প্রেরণা হিসেবে কাজ করেছে। এই পারিবারিক প্রচেষ্টা এবং সরফরাজের দৃঢ়সংকল্প তাকে ক্রিকেটের উচ্চতর পর্যায়ে পৌঁছাতে সাহায্য করতে পারে।
ভবিষ্যতে, সরফরাজের এই ফিটনেস যাত্রা তাকে ভারতীয় দলে একটি স্থায়ী স্থান অর্জনে সহায়ক হতে পারে। তার ব্যাটিং প্রতিভা এবং এখন ফিটনেসের প্রতি এই নিষ্ঠা তাকে ভারতীয় ক্রিকেটের একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ করে তুলতে পারে। ক্রিকেটপ্রেমীরা এখন অপেক্ষায় রয়েছেন, সরফরাজ কীভাবে তার এই নতুন শারীরিক রূপের সঙ্গে মাঠে আরও উজ্জ্বল পারফরম্যান্স দেখান।