ইস্টবেঙ্গল মানেই আবেগ, ঐতিহ্য এবং লাল-হলুদের গর্ব। সেই গর্বের সঙ্গেই আবারও যুক্ত হল আশার নতুন অধ্যায়। স্প্যানিশ কোচ অস্কার ব্রুজো (Oscar Bruzon) আরও এক মরসুম থাকছেন ইস্টবেঙ্গলের (East Bengal FC) ডাগআউটে। ২০২৫-২৬ মরসুম পর্যন্ত লাল-হলুদ শিবিরের সঙ্গে সঙ্গে চুক্তি নবায়ন করলেন তিনি। ক্লাবের তরফ থেকে এই ঘোষণার পরেই সমর্থকদের মধ্যে তৈরি হয়েছে নতুন আশার সঞ্চার।
অস্কার ব্রুজো যখন গত মরশুমে মাঝপথে দলের দায়িত্ব নেন, তখন ইস্ট বেঙ্গলের পারফরম্যান্সে ছিল ঘোর অনিশ্চয়তা। কিন্তু তাঁর অধীনে বদলে যায় দলের মানসিকতা, খেলার ধরণ ও ফলাফল। ইন্ডিয়ান সুপার লিগে (আইএসএল) দল শেষ পর্যন্ত ২৮ পয়েন্ট নিয়ে তাদের ইতিহাসের সেরা পারফরম্যান্স করে। পাশাপাশি, নবপ্রবর্তিত এএফসি চ্যালেঞ্জ লিগে গ্রুপ এ-তে শীর্ষে থেকে কোয়ার্টার ফাইনাল পর্যন্ত পৌঁছায় লাল-হলুদ বাহিনী। যদিও এরই মধ্যে রয়ে গিয়েছে ২০২৫ সুপার কাপে ব্যর্থতার কথাও।
ইস্টবেঙ্গল ক্লাবের সহ-মালিক এবং ইমামি গ্রুপের প্রতিনিধি বিবাস বর্ধন আগরওয়াল স্পষ্ট করেই জানিয়েছেন, “কোচ অস্কার আমাদের দলে নতুন প্রাণ এনেছেন। তাঁর পেশাদারিত্ব, দলের প্রতি অঙ্গীকার এবং জয় পাওয়ার তীব্র মনোভাব আমাদের ভবিষ্যতের পরিকল্পনার সঙ্গে পুরোপুরি সামঞ্জস্যপূর্ণ। তিনি শুধু খেলোয়াড়দের অনুপ্রাণিত করছেন না, সমর্থকদের মধ্যেও নতুন আশা জাগিয়ে তুলেছেন।”
অস্কার ব্রুজো নিজেও ক্লাবের সঙ্গে চুক্তি বাড়িয়ে উচ্ছ্বসিত। তাঁর কথায়, “ইস্টবেঙ্গলের সঙ্গে আমার সফর আরও একটি মরসুম বাড়ানো নিঃসন্দেহে সম্মানের। গত সিজনে চ্যালেঞ্জ ছিল প্রচুর, বিশেষ করে শুরুটা খুব একটা ভালো হয়নি। কিন্তু আমরা দল হিসেবে তা কাটিয়ে উঠেছি। এখন সময় এসেছে সেই জয়ের মানসিকতাকে পুরো মরসুম জুড়ে ধরে রাখার। ইস্টবেঙ্গলের গৌরবময় ইতিহাস আমাদের অনুপ্রেরণা। আমাদের সমর্থকেরা যা আশা করেন, আমরা সেটা দেওয়ার জন্য সম্পূর্ণ প্রস্তুত।”
ব্রুজোর কোচিংয়ের মূল দিকগুলোর মধ্যে রয়েছে প্রতিপক্ষ বিশ্লেষণ, স্ট্র্যাটেজিক মিডফিল্ড কন্ট্রোল এবং কনট্রোলড প্রেসিং। তাঁর অধীনে ইস্টবেঙ্গল যেমন গোল করার সুযোগ তৈরি করেছে, তেমনি রক্ষণেও উন্নতি চোখে পড়েছে। এই ভারসাম্যপূর্ণ ফুটবলই আগামীতেও দলকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার রসদ জোগাবে বলে মনে করছেন ফুটবল বিশেষজ্ঞরা।
তাঁর অধীনে নতুন কিছু মুখ যেমন উঠে এসেছে, তেমনি পুরোনো খেলোয়াড়রাও নিজেদের নতুন করে চিনিয়েছেন। ট্যাকটিক্যাল ডিসিপ্লিন এবং ব্যক্তিগত উন্নয়ন—এই দুই দিকেই তিনি নজর দিয়েছেন। ক্লাবের প্রশিক্ষণ পদ্ধতি, ফিজিওথেরাপি এবং ডায়েট ম্যানেজমেন্টেও এসেছে পেশাদারিত্ব।
সমর্থকদের মধ্যে এখন সবচেয়ে বড় প্রশ্ন, আগামী মরসুমে কি ট্রফির স্বপ্ন দেখতে পারে লাল-হলুদ? স্প্যানিশ কোচ সেই স্বপ্ন দেখাচ্ছেন বাস্তবতার মাটিতে দাঁড়িয়ে। তিনি জানেন, শুধু প্রতিভা দিয়ে নয়, দল গড়ে ওঠে আত্মবিশ্বাস, একাগ্রতা এবং ধারাবাহিকতায়।
ইস্ট বেঙ্গলের ইতিহাসে অনেক নামী কোচ এসেছেন, অনেকেই স্মরণীয় হয়ে আছেন। কিন্তু অস্কার ব্রুজো যেন এক নতুন অধ্যায়ের সূচনা করেছেন—যেখানে পেশাদারিত্ব, পরিকল্পনা এবং আবেগ একসঙ্গে মিলেছে। সেই অভিযানের সঙ্গী হতে আবার তৈরি হয়ে উঠছে গোটা লাল-হলুদ পরিবার।