রোহিত শর্মার (Rohit Sharma) টেস্ট কেরিয়ার কী কোনোদিন দুরন্ত ছিল? উত্তর, একেবারেই না। অনেকবার চেষ্টা করা হয়েছে, যেমন ইংল্যান্ড রয় কে করেছে বা অস্ট্রেলিয়া ফিঞ্চ কে, কিন্তু বারবার ই বোঝা গেছে যে রোহিত লাল বল এ সেট হলে ভালো খেলবে, কিন্তু সেট হওয়ার জন্য সাদা বলে যে সুবিধে গুলো পাওয়া যায়, কন্ডিশন বা ফিল্ড রেস্ট্রিকশন ওয়াইজ সেগুলো লাল বলে ছিল না। আর রোহিত কে কখনই ভারতে দরকার এই ভেবে খেলানো হয়নি। রোহিত এর পেস এর বিরুদ্ধে দক্ষতা সব টিম ম্যানেজমেন্ট কেই মনে করতো যে ও বিদেশে ভালো করবে।
ক্রিকেট বোদ্ধারা বলছেন, ২০১৯ এ মুরলী বিজয় চলে যাবার পর শাস্ত্রী এবং কো ভাবে যে আরেকবার চেষ্টা করা যাক। রোহিত এর পুরনো টেকনিক আর ব্যাটিং স্টাইল এ কোয়ালিটি স্পিন ছাড়া কোনো এটাকের বিরুদ্ধে সমস্যা হওয়ার কথা ছিলোনা, এবং দক্ষিণ আফ্রিকা কে তুলোধোনা করে (এই এক ই দক্ষিণ আফ্রিকা কে ময়ঙ্ক আগরওয়াল এর মতো লিমিটেড টেকনিক এর ব্যাটার ও মেরেছিলো) উনি টেস্ট ক্রিকেট এ ওপেনার হয়ে গেলেন।
একবার জায়গা পাকা হয়ে যাওয়ার পর উনি বেশ সিরিয়াসলি ভরত অরুন এবং শ্রীধর দের সাথে টেকনিক নিয়ে কাজ করতে শুরু করলেন। ২০২০ তে অস্ট্রেলিয়া তে কোয়ারেন্টাইন এর সময় কিছু ছোট কাজ করেছিলেন, কিন্তু সবথেকে বড় বদল আনলেন ২০২১ ইংল্যান্ড ট্যুর এর আগে যখন উনি ওঁনার ‘রিস্ট কক’ বা কব্জির মাংসপেশী অবলম্বন এর পদ্ধতি পাল্টালেন। ঐ ট্যুর এর ক্লিপ চালিয়ে দেখবেন, রোহিত এর ব্যাট একদম গায়ের সাথে লেগে আছে, ডাউনস্যুইং একদম সোজা আর ইনসাইড দা লাইন খেলার প্রবনতা বেশি। যাতে সুইঙ্গি কন্ডিশন এ বল আউটসাইড এজ বিট করে। ও ট্যুরটা ওঁনার জীবনের সেরা ট্যুর।
তারপরেও দেশের মাটিতেও বেশ ভালোই পারফরম্যান্স হচ্ছিল। কিন্তু পরিস্থিতি বদলালো যখন রোহিত তিন ফরম্যাট এ ভারত অধিনায়ক হলেন। এখন দায়িত্ব পড়লো যে আগামী টি টোয়েন্টি বিশ্বকাপ এ ভালো করতে হবে। ইনটেন্ট নিয়ে তখন বিশ্ব ক্রিকেট এ হৈ হৈ উঠেছে। রোহিত এবার টেস্ট টেকনিক আনলার্ন করে পাওয়ারপ্লে স্লগিঙ্গ শিখতে লাগলেন। প্রথম বারে হলোনা, ব্যাট হাওয়ায় ঘুরে এলো। শিখতে শিখতে দু হাজার তেইশ হয়ে গেলো। মনে করে দেখুন বিশ্বকাপও কিন্তু বারবার তর্ক উঠেছে যে রোহিত যিনি সেট হয়ে ২৬৪ করতে পারেন, তিনি চল্লিশ পঞ্চাশ কেন করবেন। কিন্তু টিম জিতছে আর বড় রান হচ্ছিলো বলে বড় প্রশ্ন ওঠেনি। এটা সবাই এড়িয়ে গেছে যে রোহিত বড় রান করার মেথড কম্প্রোমাইজ করে এটা করছে।
একই কাজ উনি টি টোয়েনটি বিশ্বকাপ এও করলেন। স্টার্ক কে আঠাশ মারলেন এক ওভারে। তখনো অব্দি সব ঠিক ছিল। টেস্ট এও একটা হাওয়া উঠে গেলো যে ভারত ইনটেন্ট ক্রিকেট খেলবে আর সেটা সেটা করবেন রোহিত। তাই ভালো খারাপ মিশিয়ে পারফরম্যান্স চললো। আসল সমস্যা শুরু হলো নিউজিল্যান্ড সিরিজ থেকে কারণ এঁরা সঠিক প্ল্যান নিয়ে এসেছিলো।
রোহিত সাদা বলে ক্রিকেট-এ সফল হওয়ার জন্য যে টেকনিকাল বদল গুলো করেছিলেন তার মধ্যেও অন্যতম হোলো বলের কাছে নিজে যাওয়া, বল কে কাছে আসতে না দেওয়া। প্রতি বল এর প্রতি ইনস্টিনঃক্টিভ আক্রমণাত্মক রিয়াকশন দেওয়া। আর এটা করতে গেলে আপনার ট্রিগার মুভমেন্টও পাল্টায়। যেটা হওয়া উচিত ছিল ব্যাক এন্ড এক্রস, সেটা হয়ে গেলো ব্যাক এন্ড ব্যাক। ব্যাকফুট লোড হয়ে সামনের পা বেরোয় ই না স্ট্রোক রেঞ্জ বাড়াবার জন্য। কিন্তু মাসেল মেমোরি আছে ইনসাইড দা লাইন খেলার। তাই ঐ মিডল লেগ থেকে হালকা সিম এওয়ে হয়ে বলে বারবার বোল্ড।
মেলবোর্ন-এ দ্বিতীয় ইনিংস। রোহিত এর ব্যাট শরীরের কত আগে! এরকম সমস্যা হলে গেম সেন্স খারাপ হয়ে যায়। বাজে শট সিলেকশন আর লেংথ মিসজাজমেন্ট দৌড়ে দৌড়ে সিম্পটম হয়ে আসে। ঐ গুড লেংথ বলে নটরাজ মারতে যাওয়া বা গায়ের জোরে পুল করতে চাওয়া সেই সিম্পটমেরই ফলাফল।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, রোহিত নিজের বেস্ট মেন্টাল স্পেস এ নেই। হতেই পারে। এর সাথে আছে ফ্যাটিগ। রোহিত এর টেস্ট কেরিয়ার অনেক পরে শুরু তাই ও যতটা পারে দূরে টানতে চাইবে। কিন্তু যদি লাল বলে পারফরম্যান্স করতে হয়, তাহলে কিন্তু লাল বলার ক্রিকেটের জন্য আলাদা কাজ করতে হবে, দরকার হলে ব্রেক নিয়ে কারণ এক দু মাস সময় লাগবেই । ভারতীয় দলের সহকারী কোচ নায়ার রোহিত এর ছোটবেলার বন্ধু, মেন্টর এবং পার্সোনাল কোচ। বলুক কথা নায়ার এর সাথে, একটা পরিকল্পনা করুক। তার পরেই সিদ্ধান্ত নিক যে কি করা দরকার। তবে ৩৭ বছর বয়সে চোখ-ব্রেন-মাসেল এর এক্সিস, রিয়াকশন এর সময় আর একটা কঠিন কমিটমেন্ট এর জন্য মনের জোর, সবই কিন্তু সময়ের সাথে কমছে এবং কমবে।