মোদীকে “স্বার্থপর” বলে কটাক্ষ হরভজনের, শ্রীশান্তের ভিডিও ফাঁস!

ভারতীয় প্রিমিয়ার লিগ (IPL)-এর প্রায় দুই দশক আগের একটি বিতর্কিত ঘটনা, যা ‘স্ল্যাপগেট’ নামে পরিচিত, সম্প্রতি সোশ্যাল মিডিয়ায় ব্যাপক আলোচনার বিষয় হয়ে উঠেছে। আইপিএল-এর প্রাক্তন…

harbhajan-singh

ভারতীয় প্রিমিয়ার লিগ (IPL)-এর প্রায় দুই দশক আগের একটি বিতর্কিত ঘটনা, যা ‘স্ল্যাপগেট’ নামে পরিচিত, সম্প্রতি সোশ্যাল মিডিয়ায় ব্যাপক আলোচনার বিষয় হয়ে উঠেছে। আইপিএল-এর প্রাক্তন চেয়ারম্যান ললিত মোদী (Lalit Modi) এই ঘটনার একটি অপ্রকাশিত ভিডিও সোশ্যাল মিডিয়ায় ফাঁস করেছেন, যা নতুন করে বিতর্কের জন্ম দিয়েছে। মাইকেল ক্লার্কের ‘বিয়ন্ড ২৩’ পডকাস্টে এই ঘটনা নিয়ে আলোচনার সময় ললিত মোদী এই ভিডিও প্রকাশ করেন। ২০০৮ সালে হরভজন সিং-এর (Harbhajan Singh) শ্রীশান্তকে চড় মারার ঘটনাটি সর্বজনবিদিত হলেও, এই ভিডিওটি এতদিন সোশ্যাল মিডিয়ায় প্রকাশিত হয়নি। ললিত মোদীর এই পদক্ষেপের ফলে ব্যাপক বিতর্ক সৃষ্টি হয়েছে।

শ্রীশান্তের স্ত্রী ইতিমধ্যেই এই ভিডিও ফাঁসের জন্য ললিত মোদীকে তীব্র সমালোচনা করেছেন। এবার প্রাক্তন ভারতীয় স্পিনার হরভজন সিংও ললিত মোদীকে তীব্রভাবে কটাক্ষ করেছেন। তিনি এই কাজকে “স্বার্থপর উদ্দেশ্যে” প্ররোচিত বলে মন্তব্য করেছেন। ইনস্ট্যান্ট বলিউডকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে হরভজন বলেন, “যেভাবে এই ভিডিও ফাঁস করা হয়েছে, তা একেবারেই ভুল। এটা হওয়া উচিত ছিল না। এর পিছনে তাদের কোনো স্বার্থপর উদ্দেশ্য থাকতে পারে। ১৮ বছর আগের একটি ঘটনা, যা মানুষ ভুলে গেছে, তারা আবার সেটা মনে করিয়ে দিচ্ছে।”

   

ঘটনার পটভূমি
২০০৮ সালে আইপিএল-এর প্রথম সংস্করণে মুম্বই ইন্ডিয়ান্স এবং কিংস ইলেভেন পাঞ্জাবের মধ্যে একটি ম্যাচের পর এই ঘটনা ঘটে। ম্যাচ চলাকালীন হরভজন সিং এবং শ্রীশান্তের মধ্যে উত্তপ্ত বাক্যবিনিময় হয়, এবং ম্যাচ শেষে হরভজন শ্রীশান্তকে চড় মারেন। এই ঘটনা ক্রিকেট বিশ্বে ব্যাপক আলোড়ন সৃষ্টি করে। হরভজনকে এই ঘটনার জন্য ১১টি ম্যাচের জন্য নিষিদ্ধ করা হয় এবং তিনি জরিমানার মুখোমুখি হন। শ্রীশান্ত, যিনি তখন কিংস ইলেভেন পাঞ্জাবের হয়ে খেলছিলেন, এই ঘটনায় মানসিকভাবে ভেঙে পড়েছিলেন।

হরভজন এই ঘটনার জন্য একাধিকবার শ্রীশান্তের কাছে ক্ষমা চেয়েছেন। তিনি বারবার বলেছেন যে এই ঘটনাটি তার জন্য লজ্জাজনক ছিল এবং তিনি এর জন্য আন্তরিকভাবে দুঃখিত। বর্তমানে হরভজন এবং শ্রীশান্তের মধ্যে সম্পর্ক স্বাভাবিক হয়েছে। তারা একসঙ্গে ক্রিকেট ধারাভাষ্য এবং বিভিন্ন অনুষ্ঠানে অংশ নিয়েছেন, যা তাদের পুনর্মিলনের প্রমাণ। তবে, ললিত মোদীর এই ভিডিও ফাঁসের ঘটনা ক্রিকেট ভক্তদের মনে পুরনো ক্ষত তাজা করে দিয়েছে।

হরভজনের প্রতিক্রিয়া
ইনস্ট্যান্ট বলিউডকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে হরভজন আরও বলেন, “যা ঘটেছিল, তার জন্য আমি খুবই লজ্জিত। আমরা খেলছিলাম, এবং প্রত্যেকের মনে বিভিন্ন চিন্তা ছিল। ভুল হয়ে গেছে, এবং আমরা এর জন্য লজ্জিত।” তিনি আরও বলেন, “হ্যাঁ, ভিডিওটি ভাইরাল হয়েছে। এটি একটি দুর্ভাগ্যজনক ঘটনা ছিল, এবং আমি বহুবার বলেছি যে আমি ভুল করেছি। মানুষ ভুল করে, আমিও করেছি। আমি ভগবান গণেশের কাছে প্রার্থনা করেছি যে ভবিষ্যতে যদি আবার ভুল করি, তিনি যেন আমাকে ক্ষমা করেন। ভুল তো হয়েই থাকে।”

Advertisements

হরভজনের এই মন্তব্য তার পরিপক্কতা এবং ঘটনাটির জন্য তার আন্তরিক অনুশোচনার প্রমাণ। তিনি এই ঘটনাকে অতীতে রেখে এগিয়ে যেতে চান, কিন্তু ললিত মোদীর এই পদক্ষেপ তাকে এবং শ্রীশান্তকে আবারও আলোচনার কেন্দ্রে নিয়ে এসেছে।

Harbhajan Singh Slams Lalit Modi
Harbhajan Singh Slams Lalit Modi

ললিত মোদীর ভূমিকা
ললিত মোদী, যিনি আইপিএল-এর প্রতিষ্ঠাতা এবং প্রথম চেয়ারম্যান ছিলেন, ২০১০ সালে আর্থিক অনিয়মের অভিযোগে ভারত ছেড়ে চলে যান। তিনি বর্তমানে লন্ডনে থাকেন এবং সোশ্যাল মিডিয়ায় সক্রিয়। তার এই ভিডিও ফাঁসের সিদ্ধান্ত অনেকের কাছে বিতর্কিত মনে হয়েছে। শ্রীশান্তের স্ত্রী ভুবনেশ্বরী এই কাজকে “অনৈতিক” বলে সমালোচনা করেছেন। তিনি সোশ্যাল মিডিয়ায় লিখেছেন, “১৮ বছর আগের একটি ঘটনার ভিডিও ফাঁস করা শুধুমাত্র স্বার্থপরতা এবং প্রচারের জন্য। এটি ক্রিকেটের চেতনার বিরুদ্ধে।”

ক্রিকেট ভক্তদের প্রতিক্রিয়া
সোশ্যাল মিডিয়ায় ভিডিওটি ভাইরাল হওয়ার পর ক্রিকেট ভক্তদের মধ্যে মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখা গেছে। কেউ কেউ হরভজন এবং শ্রীশান্তের পুনর্মিলনের প্রশংসা করেছেন, আবার কেউ কেউ ললিত মোদীর এই পদক্ষেপকে সমালোচনা করেছেন। একজন ভক্ত এক্স-এ লিখেছেন, “ললিত মোদী কেন এখন এই ভিডিও ফাঁস করলেন? এটা কেবল প্রচারের জন্য। হরভজন এবং শ্রীশান্ত এখন ভালো বন্ধু, তাহলে এই পুরনো ঘটনা কেন তুলে আনা হচ্ছে?” আরেকজন ভক্ত লিখেছেন, “হরভজনের ক্ষমা চাওয়া এবং তার পরিপক্কতা প্রশংসনীয়। ললিত মোদীর এই কাজ অপ্রয়োজনীয়।”

২০০৮ সালের আইপিএল স্ল্যাপগেট কাণ্ড একটি দুর্ভাগ্যজনক ঘটনা ছিল, যা হরভজন সিং এবং শ্রীশান্ত উভয়েই অতীতে রেখে এগিয়ে গেছেন। হরভজন বারবার তার ভুলের জন্য ক্ষমা চেয়েছেন এবং শ্রীশান্তের সঙ্গে তার সম্পর্ক এখন সৌহার্দ্যপূর্ণ। তবে, ললিত মোদীর এই ভিডিও ফাঁসের সিদ্ধান্ত এই ঘটনাকে নতুন করে আলোচনায় এনেছে। হরভজনের প্রতিক্রিয়া এবং শ্রীশান্তের স্ত্রীর সমালোচনা থেকে স্পষ্ট যে এই পদক্ষেপকে তারা “স্বার্থপর” এবং “অনৈতিক” বলে মনে করছেন। ক্রিকেট ভক্তরা এই ঘটনাকে অতীতে রেখে এগিয়ে যাওয়ার পক্ষে, এবং এই বিতর্ক ক্রিকেটের চেতনার বিরুদ্ধে বলে মনে করা হচ্ছে।