সিরাজের ৪ উইকেটে সানরাইজার্স হায়দ্রাবাদকে হারিয়ে গুজরাটের জয়

আইপিএল ২০২৫-এর ১৯তম ম্যাচে রাজীব গান্ধী ইন্টারন্যাশনাল স্টেডিয়ামে রবিবার গুজরাট টাইটান্স (জিটি) সানরাইজার্স হায়দ্রাবাদকে (এসআরএইচ) ৭ উইকেটে পরাজিত করেছে (GT vs SRH)। এই ম্যাচে মহম্মদ…

Mohammed Siraj’s Fiery 4-Wicket Haul Powers GT to 7-Wicket Win

আইপিএল ২০২৫-এর ১৯তম ম্যাচে রাজীব গান্ধী ইন্টারন্যাশনাল স্টেডিয়ামে রবিবার গুজরাট টাইটান্স (জিটি) সানরাইজার্স হায়দ্রাবাদকে (এসআরএইচ) ৭ উইকেটে পরাজিত করেছে (GT vs SRH)। এই ম্যাচে মহম্মদ সিরাজের অসাধারণ বোলিং প্রদর্শনী সবার নজর কেড়েছে। সিরাজ ৪ ওভারে মাত্র ১৭ রান দিয়ে ৪ উইকেট তুলে নেন, যা তাঁর আইপিএল ক্যারিয়ারের সেরা পারফরম্যান্স। তাঁর এই আগুনে বোলিংয়ের সামনে হায়দ্রাবাদ ২০ ওভারে ১৫২/৮-এ গুটিয়ে যায়। গুজরাটের হয়ে আর সাই কিশোর (২/২৪) এবং প্রসিদ্ধ কৃষ্ণ (২/২৫) দুটি করে উইকেট নিয়ে দলের জয়ে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন। অন্যদিকে, হায়দ্রাবাদের হয়ে নীতীশ রেড্ডি সর্বোচ্চ ৩১ রান করেন। দ্বিতীয় ইনিংসে গুজরাটের শুরুটা ভালো না হলেও, ওয়াশিংটন সুন্দরের ২৯ বলে ৪৯ এবং শুভমন গিলের অপরাজিত ৪৩ বলে ৬১ রানের দুর্দান্ত ইনিংসে তারা সহজেই জয়ের লক্ষ্যে পৌঁছে যায়।

টস জিতে গুজরাট টাইটান্স প্রথমে বোলিং করার সিদ্ধান্ত নেয়। মহম্মদ সিরাজ প্রথম ওভার থেকেই আগ্রাসী মেজাজে ছিলেন। তিনি প্রথম ওভারের শেষ বলে ট্রাভিস হেডকে (৮) আউট করে হায়দ্রাবাদকে প্রথম ধাক্কা দেন। হেড দুটি চার মেরে শুরুটা ভালো করলেও, সিরাজের দারুণ বলে সাই সুদর্শনের হাতে ক্যাচ দিয়ে প্যাভিলিয়নে ফেরেন। এরপর পঞ্চম ওভারে সিরাজ আবার আঘাত হানেন, অভিষেক শর্মাকে (১৮) আউট করে। অভিষেক ও ইশান কিষান পাওয়ারপ্লেতে রান তুলতে হিমশিম খাচ্ছিলেন। দুজনে মিলে দ্বিতীয় উইকেটে মাত্র ২৯ রান যোগ করেন। পাওয়ারপ্লে শেষে হায়দ্রাবাদের স্কোর ছিল ৪৫/২, যা ২০২৪ সাল থেকে তাদের দ্বিতীয় সর্বনিম্ন পাওয়ারপ্লে স্কোর।

   

সিরাজের বোলিংয়ের ধার অব্যাহত ছিল। তিনি শেষ ওভারে এসে অনিকেত বর্মা (১৮) এবং সিমরজিৎ সিংকে (০) আউট করে নিজের চতুর্থ উইকেট তুলে নেন। ৪ ওভারে ১৭ রান দিয়ে ৪ উইকেট—এই পারফরম্যান্স তাঁকে ম্যাচের সেরা খেলোয়াড়ের পুরস্কার এনে দেয়। সিরাজের পাশাপাশি সাই কিশোর এবং প্রসিদ্ধ কৃষ্ণও দারুণ বোলিং করেন। সাই কিশোর নীতীশ রেড্ডি (৩১) এবং হেনরিখ ক্লাসেনকে (২৭) আউট করে মাঝের ওভারে হায়দ্রাবাদের রানের গতি কমিয়ে দেন। প্রসিদ্ধ কৃষ্ণ ইশান কিষান (১৭) এবং কামিন্দু মেন্ডিসকে (১) আউট করে দলের জয়ের পথ আরও সুগম করে দেন।

হায়দ্রাবাদের ব্যাটিং লাইনআপ শুরু থেকেই চাপে পড়ে। ট্রাভিস হেড এবং অভিষেক শর্মার দ্রুত বিদায়ের পর ইশান কিষান কিছুক্ষণ ক্রিজে টিকে থাকলেও বড় রান করতে পারেননি। অষ্টম ওভারে প্রসিদ্ধ কৃষ্ণ তাঁকে আউট করেন। এরপর নীতীশ রেড্ডি এবং হেনরিখ ক্লাসেন চতুর্থ উইকেটে ৫০ রানের জুটি গড়ে দলকে কিছুটা স্বস্তি দেন। ক্লাসেন ২৭ রান করে একটি ছক্কা ও দুটি চার মারেন, আর নীতীশ ৩৪ বলে ৩১ রান করেন। কিন্তু সাই কিশোর টানা দুই ওভারে এই দুজনকে আউট করে হায়দ্রাবাদের আশায় জল ঢেলে দেন।

শেষ দিকে দলের আশা ছিল কামিন্দু মেন্ডিসের ওপর, কিন্তু তিনি মাত্র ৫ বলে ১ রান করে প্রসিদ্ধ কৃষ্ণর বলে আউট হন। ১৭ ওভার শেষে হায়দ্রাবাদের স্কোর ছিল ১২০/৬। এরপর সিরাজের শেষ ওভারে দুটি উইকেট পড়ে দল আরও বিপাকে পড়ে। তবে অধিনায়ক প্যাট কামিন্স শেষ ওভারে ইশান্ত শর্মার বিরুদ্ধে একটি চার ও একটি ছক্কা মেরে অপরাজিত ২২ রান করেন। মহম্মদ শামিও একটি চার মেরে দলের স্কোর ১৫২/৮-এ পৌঁছে দেন। তবে এই স্কোর রক্ষা করা হায়দ্রাবাদের জন্য কঠিন হয়ে পড়ে।

দ্বিতীয় ইনিংসে গুজরাটের শুরুটা ভালো হয়নি। মহম্মদ শামি এবং প্যাট কামিন্সের বোলিংয়ে তারা ১৬/২-এ নেমে যায়। সাই সুদর্শন (৫) এবং জস বাটলার (০) দ্রুত আউট হয়ে প্যাভিলিয়নে ফেরেন। কিন্তু এরপর শুভমন গিল এবং ওয়াশিংটন সুন্দর দলের হাল ধরেন। সুন্দর ২৯ বলে ৪৯ রানের একটি দুর্দান্ত ইনিংস খেলেন, যেখানে তিনি আক্রমণাত্মক ব্যাটিং করে হায়দ্রাবাদের বোলারদের ওপর চাপ সৃষ্টি করেন। তাঁর এই ইনিংসে ছিল একাধিক চার ও ছক্কা, যা দলের জয়ের ভিত মজবুত করে।

Advertisements

শুভমন গিল অপর প্রান্তে ধীরে ধীরে নিজের ইনিংস গড়ে তুলে অপরাজিত ৬১ রান করেন। ৪৩ বলে খেলা এই ইনিংসে তিনি দলকে জয়ের দিকে এগিয়ে নিয়ে যান। গিল এবং সুন্দরের ৯০ রানের জুটি গুজরাটের জয়ের পথে সবচেয়ে বড় ভূমিকা পালন করে। সুন্দর আউট হওয়ার পর শেরফেন রাদারফোর্ড ইমপ্যাক্ট প্লেয়ার হিসেবে এসে ১৬ বলে ৩৫ রানের একটি ঝড়ো ইনিংস খেলেন। তিনি অভিষেক শর্মার এক ওভারে চারটি চার মেরে ম্যাচ দ্রুত শেষ করে দেন। ১৬.৪ ওভারে গুজরাট ১৫৩/৩ করে জয় ছিনিয়ে নেয়।

ম্যাচের সেরা খেলোয়াড় নির্বাচিত হন মহম্মদ সিরাজ। তিনি বলেন, “নিজের শহরে খেলতে এলে একটা আলাদা অনুভূতি হয়। পরিবারও খেলা দেখছে, এটা আত্মবিশ্বাস বাড়ায়।” সিরাজের এই পারফরম্যান্স গুজরাটের জয়ের মূল চাবিকাঠি হয়ে ওঠে। তাঁর প্রথম থেকে শেষ পর্যন্ত আক্রমণাত্মক বোলিং হায়দ্রাবাদকে বড় স্কোর করতে দেয়নি।

এই জয়ের ফলে গুজরাট টাইটান্স তিন ম্যাচে তিনটি জয় নিয়ে পয়েন্ট টেবিলে দ্বিতীয় স্থানে উঠে এসেছে। অন্যদিকে, হায়দ্রাবাদ টানা চারটি হারের পর পয়েন্ট টেবিলের তলানিতে রয়েছে। প্রথম ম্যাচে রাজস্থান রয়্যালসের বিরুদ্ধে বড় জয় পেলেও, তারপর থেকে তাদের ব্যাটিং বারবার ব্যর্থ হচ্ছে। অধিনায়ক প্যাট কামিন্স বলেন, “এটা হায়দ্রাবাদের সাধারণ উইকেট ছিল না। ব্যাটিংয়ে সাবলীলতা আনা কঠিন হয়ে পড়েছিল। আমরা আরও কিছু রান কম পেয়েছি।”

এই ম্যাচে গুজরাট টাইটান্স তাদের বোলিং এবং ব্যাটিংয়ের দারুণ সমন্বয় দেখিয়েছে। মহম্মদ সিরাজের নেতৃত্বে বোলিং আক্রমণ এবং শুভমন গিলের দায়িত্বশীল ইনিংস তাদের জয় নিশ্চিত করেছে। অন্যদিকে, হায়দ্রাবাদের ব্যাটিং ব্যর্থতা তাদের জন্য উদ্বেগের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। আগামী ম্যাচে তারা কীভাবে ঘুরে দাঁড়ায়, সেটাই এখন দেখার বিষয়।