২০১৯ সালের এক গ্রীষ্মের দিনে সুহেল আহমদ ভাট ছিলেন (Suhail Ahmad Bhat) বল বয়, সেদিন প্র্যাকটিস ম্যাচ চলছিল ইন্ডিয়ান ইলেভেন বনাম জম্মু ও কাশ্মীর অল স্টারসের মধ্যে। সেই ম্যাচে তিনি বল তুলে দিচ্ছিলেন গোলরক্ষক অমরিন্দর সিং পিছনে দাঁড়িয়ে। ছয় বছর পর, এখন তিনি সেই একই অমরিন্দরের দিকে শট মারছেন ভারতের জাতীয় দলের (Indian Football Team) ট্রেনিংয়ে।
দীর্ঘমেয়াদি চুক্তিতে পাঞ্জাব এফসিতে যোগ দিলেন বিজয়
২০ বছর বয়সী এই তরুণ এখন ভারতের জাতীয় দলের ক্যাম্পে, যেখানে প্রথমবারের মতো ডাক পেয়েছেন তিনি। তার অনবদ্য ডান-বাম দুই পায়ের দক্ষতা এবং কঠোর পরিশ্রম ইতিমধ্যেই অভিজ্ঞ খেলোয়াড়দের নজর কেড়েছে। যাদের খেলা টেলিভিশনে দেখে বড় হয়েছেন, এখন তারা তাঁর সতীর্থ।
সুহেল বলেন, “আমি তখন মাত্র দুই মাসের ছিলাম, যখন ছেত্রী ভাই তার ভারতের হয়ে প্রথম গোল করেছিলেন। এখন আমি তার সঙ্গে একই দলে। এটা একেবারে অবিশ্বাস্য। আমি চাই দেশের হয়ে প্রথম ম্যাচ খেলতে, আর সম্ভব হলে গোলও করতে।”
ভারত ৪ জুন থাইল্যান্ডের বিপক্ষে এক আন্তর্জাতিক প্রীতি ম্যাচ খেলবে এবং ১০ জুন হংকংয়ের বিপক্ষে এএফসি এশিয়ান কাপ যোগ্যতা অর্জন পর্বে মাঠে নামবে। সুহেল কাশ্মীরের শ্রীনগরের বেমিনা অঞ্চল থেকে উঠে আসা এক প্রতিভাবান ফুটবলার। তার মতো একজন তরুণের জন্য সুনীল ছেত্রী শুধুমাত্র একজন অধিনায়ক নয়, বরং একজন মেন্টর, অনুপ্রেরণা ও প্রতিযোগীও বটে।
নরেন্দ্র মোদী স্টেডিয়ামের বাইরে বিস্ফোরণ, আতঙ্ক ছড়াল ফাইনালের আগে
সুহেল আরও বলেন, “ছেত্রী ভাই ২০ বছর ধরে খেলছেন, তার ফিটনেস আর মানসিকতা আমাকে দারুণ অনুপ্রাণিত করে। আমি চেষ্টা করি তাকে ছাড়িয়ে যেতে। যদি তিনি জিমে ১০ মিনিট আগে যান, আমি ১৫ মিনিট আগে যাই।”
সুহেলের গোল উদযাপন দেখলেই বোঝা যায়, তিনি কতটা বড় ক্রিশ্চিয়ানো রোনাল্ডোর ভক্ত। কিন্তু তিনি মনে করেন, “রোনাল্ডো তো স্ক্রিনে দেখা যায়। ছেত্রী ভাই সামনে থেকে শেখান, কথা বলেন, বুঝিয়ে বলেন। মাঠে ও মাঠের বাইরে উনার প্রতিদিনের কাজ আমাকে প্রেরণা দেয়।”
যদি এই মাসের খেলাগুলির জন্য সুহেল শেষমেশ চূড়ান্ত একাদশে জায়গা পান, তবে তিনি হবেন মাত্র পঞ্চম ফুটবলার, যিনি কাশ্মীর থেকে উঠে এসে ভারতের জাতীয় দলে খেলবেন। তার আগে ছিলেন আব্দুল মজিদ কাকরু ও মুশির আহমদ (১৯৮০-এর দশকে), মেহরাজুদ্দিন ওয়াডু (২০০৫-২০১১) এবং সর্বশেষ ২০২২ সালে দানিশ ফারুক ভাট।
ফাইনালের আগে তারকা ক্রিকেটারকে ঘিরে দুশ্চিন্তার মেঘ আরসিবি শিবিরে
তার এই পথচলা কিন্তু হঠাৎ নয়। ভারতের অনূর্ধ্ব-১৬, ১৯ এবং ২৩ দলে দারুণ পারফরম্যান্সের পর এই সুযোগটি তার প্রাপ্য। ২০২২ সালে তিনি “The Guardian”-এর ‘Next Generation’ তালিকায় জায়গা পান, যেখানে বিশ্বের সেরা ৬০ জন তরুণ প্রতিভার নাম ঘোষণা করা হয়।
সুহেল বলেন, “বিবিয়ানো স্যার (U16), পান্ডা স্যার (U19) আর ক্লিফোর্ড স্যার (U23) সবাই বলতেন, সিনিয়র দলে খেলা তোমার লক্ষ্য হওয়া উচিত। আমি সেই লক্ষ্য নিয়েই এগোচ্ছি। ডিসিপ্লিন, পাংচুয়ালিটি, রুটিন এসব ছোট ছোট জিনিসই বড় পার্থক্য গড়ে দেয়। আমি কখনো হাল ছাড়ি না। একটা শট মিস করলে, আবার চেষ্টা করি। আমি থেমে যাই না।”
আজ কেবল সুহেলের নয়, গোটা কাশ্মীরের চোখ তার দিকে। দেশের জার্সিতে মাঠে নামার স্বপ্ন নিয়ে সুহেল এখন অপেক্ষায়, আরও এক নতুন ইতিহাস গড়ার জন্য।